X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

চন্দন কাঠের কফিনে শুয়ে 'আম্মা'র অন্তিম যাত্রা

বিদেশ ডেস্ক
০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৪৬আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:০০

চন্দন কাঠের কফিনে শুয়ে 'আম্মা'র অন্তিম যাত্রা চন্দন কাঠের কফিনে শুয়ে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন ভারতের তামিলনাড়ুর প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটে চেন্নাইয়ের বিখ্যাত মেরিনা বিচে তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করা হয়। মেরিনা বিচে অশ্রুসিক্ত হয়ে প্রাণপ্রিয় ‘আম্মা’কে চিরবিদায় জানান লাখো ভক্ত-সমর্থক।

স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাবলিক অডিটোরিয়াম রাজাজি হল থেকে পতাকায় মুড়ে তাকে তিন কিলোমিটার দূরের মেরিনা বিচে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে থেকেই সেখানে ভিড় করেন জয়ললিতার বিপুল সংখ্যক সমর্থক। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, রাজাজি হল থেকে মেরিনা বিচের তিন কিলোমিটার রাস্তায় পা রাখাটাও কঠিন হয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার সকালে পোয়েস গার্ডেনের বাড়ি থেকে প্রয়াত নেত্রীর দেহ নিয়ে আসা হয় চেন্নাই শহরের প্রাণকেন্দ্রে রাজাজি হলে। পরনে ছিল তার সবচেয়ে প্রিয় সবুজ রঙের শাড়ি। চার সেনা সদস্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দেহ জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেন। শ্রদ্ধা জানান নতুন মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভম ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা। জয়ললিতাকে অন্তিম দর্শনের জন্যে সেখানে লাখো মানুষ জড়ো হতে শুরু করে।

দুপুরে চেন্নাইয়ের রাজাজি হলে জয়ললিতার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের নেতারা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজাজি হলে জড়ো হন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বিমানের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চেন্নাইয়ে পৌঁছাতে না পারলেও শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া-সহ বহু রাজনীতিক।

বিমানের টিকিট না পাওয়ায় জয়ললিতাকে শেষ বিদায় জানাতে চেন্নাই যেতে পারেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার প্রতিনিধি হিসেবে শেষকৃত্যে উপস্থিত হয়েছেন দলের দুই এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

৫ ডিসেম্বর ২০১৬ সোমবার রাতে জয়ললিতার মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য প্রক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে-এর উচ্চ পর্যায় থেকে তাকে সমাহিতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এআইএডিএমকে-এর প্রতিষ্ঠাতা এমজি রামাচন্দ্রনকেও সমাহিত করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, সোমবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ৬৮ বছর বয়সে চেন্নাইয়ের অ্যাপলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জয়ললিতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে, জয়ললিতা সোমবার রাত ১১টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।’

রবিবার বিকেল পাঁচটায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন জয়ললিতা। তখন তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় জয়ললিতাকে। সোমবার সকাল থেকেই তার মৃত্যুর গুঞ্জন চলছিল। তবে সে সময় তার মৃত্যুর খবর নাকচ করে দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সোমবার রাতে অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়,তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী আর নেই। এরপরই রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

তামিলনাড়ুতে সমর্থকদের কাছে জয়ললিতা ‘আম্মা’ হিসেবে পরিচিত। ভক্তদের আম্মা পুরাচ্চি থালাইভি, বা বিপ্লবী নেত্রী নামেও পরিচিত জয়ললিতা ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহীশূরের মেলুকোটে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রের নায়িকা। নায়ক-রাজনীতিক এম জি রামচন্দ্রনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই রাজনীতিতে অভিষেক তামিলনাড়ুর প্রিয় ‘আম্মা’র। ১৯৮২ সালে এআইএডিএমকে দলে যোগ দেন জয়ললিতা। ১৯৮৪ সালে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রী হন রামচন্দ্রনের স্ত্রী। জয়ললিতা বিরোধী দলনেতা হন ১৯৮৯ সালে। পরে ১৯৯১ সালে প্রথম বার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতা। তিনি ছিলেন তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় নারী মুখ্যমন্ত্রী। এরপর ফের মুখ্যমন্ত্রী পদ পান ২০০১ সালে। কিন্তু পরে ২০০১ সালে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ছাড়তে হয় মুখ্যমন্ত্রীর পদ। ২০০৩-এ জয়ললিতা ফের ফেরেন মুখ্যমন্ত্রিত্বে। ২০১১ সালে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন জনতার ‘আম্মা’ ও এআইএডিএমকে নেতা।

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে ৪ বছরের কারাদণ্ড হয় জয়ললিতার। হারান মুখ্যমন্ত্রী পদও। একমাস পর ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পান। এরপর ২০১৫ সালের ১১ মে কারাদণ্ড মওকুফ করে কর্নাটক হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন জয়ললিতা। একইদিনে পুনরায় মুখ্যমন্ত্রিত্বে ফেরেন তিনি। পরে ২০১৬ সালে চতুর্থ বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন তামিল জনগণের ‘আম্মা’।

এদিকে জয়লিলতার মৃত্যুর পর গভীর রাতে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পনিরসেলভমের। সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

/এমপি/

সম্পর্কিত
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
সর্বশেষ খবর
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো ইউপি সদস্যের
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো ইউপি সদস্যের
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা