X
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের

বিদেশ ডেস্ক
০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:২৪আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:৩৫

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি ফিলিস্তিনের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে জোরপূর্বক স্থাপিত কয়েক হাজার ইসরায়েলি বসতিকে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার দেশটির পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত বিলের পক্ষে রায় দেন এমপিরা। তবে বিলটিকে আইনে পরিণত করতে আরও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে।

ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণের এমন সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ভূমি দখলের পর তার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির শামিল বলে মনে করছেন সমালোচকরা। তবে এ বিষয়ে বাইরের দুনিয়ার সমালোচনা কানে নিতে রাজি নয় ইসরায়েল।

এর আওতায় অন্তত চার হাজার অবৈধ বসতিকে বৈধতা দেওয়া হবে। ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে এ সংক্রান্ত বিতর্কে বিলটির কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধীদলীয় নেতা আইজ্যক হারজগ। তার মতে, এটা হবে ইসরায়েলের আত্মহননের শামিল।

সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েল যে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে সেটা নিজের দখলে নিতে চায়, এই পদক্ষেপ তার সুস্পষ্ট উদাহরণ।

ইসরায়েলের উগ্র ইহুদিবাদীরা অবশ্য পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের

সোমবার নেসেটে এ সংক্রান্ত বিল পাস হওয়ার একদিন আগে রবিবার বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থানের সমালোচনা করেন দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।

জন কেরি বলেছেন, ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছে ইসরায়েলের ডানপন্থীরা।  একইসঙ্গে ইসরায়েলের  বসতি স্থাপনের ফলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।

শীর্ষ ইসরায়েলি ও মার্কিন নীতি নির্ধারকদের বার্ষিক বৈঠক সাবান ফোরামে দেওয়া ভাষণে কেরি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার অনেক মন্ত্রী বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন। অর্ধেকেরও বেশি মন্ত্রী প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে অস্বীকার করছেন।

জন কেরির বক্তব্যের আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলের বসতি স্থাপন শান্তি প্রতিষ্ঠার বিরোধী নয়।

নেতানিয়াহু বলেন, কোনও শর্ত ছাড়াই শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি ইসরায়েল। এছাড়া তিনি আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

ভাষণে জন কেরি মনে করিয়ে দেন, দুনিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েলের আর নেই। ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিষয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগে জাতিসংঘে আনীত সব প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষর  করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভূখণ্ড হারিয়ে এক অরক্ষিত জনপদে পরিণত হয় দেশটি। স্বাধীন ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল নামক অবৈধ রাষ্ট্র চাপিয়ে দেওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত রক্ত ঝরছে এ অঞ্চলে। একাধিক যুদ্ধেরও শিকার হয়েছেন এই ভূখণ্ডের মানুষ। ১৯৬৭ সালের ৪ জুন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং মিসরের সিনাই উপত্যকার অংশবিশেষ দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরইমধ্যে পার হয়েছে সেই দখলদারিত্বের ৪৯ বছর। এতো বছর পর এখনও প্রায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষ। ইসরায়েলি আগ্রাসন আর বর্বরতার শিকার হচ্ছেন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা।

১৯৭৮ সালে অবশ্য এক শান্তি চুক্তির আওতায় সিনাই উপত্যকার দখল ছেড়ে দেয় ইসরায়েল। ২০০৫ সালে একতরফাভাবে গাজা উপত্যকার ওপর থেকেও ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটে। কিন্তু পুরো ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলি বর্বরতার অবসান ঘটেনি। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হলে প্রতিবেশী চার আরব দেশ মিসর, সিরিয়া, জর্ডান ও ইরাক একযোগে ইসরায়েল আক্রমণ করে। সেই যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। বিজয়ী ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ৭৭ শতাংশ ভূমি দখল করে নেয়।

১৯৯৩ সালে সম্পাদিত অসলো প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার মধ্যে যে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়, তার ভিত্তিতে ১৯৯৬ সালে পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসন কায়েম হয়। তত দিনে অবশ্য সেই অঞ্চলের একটা বড় অংশ ইসরায়েলের অবৈধ বসতির কবলে অথবা সরাসরি সামরিক নিয়ন্ত্রণে। নামেই স্বায়ত্তশাসন কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে চৌপ্রহর ইসরায়েলি প্রহরা, উঁচু দেয়াল, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হলে ইসরায়েলি অনুমতি। কিন্তু সেই প্রশাসনও দুই টুকরা হয়ে গেল ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর। পশ্চিম তীর গেল ফাতাহর নিয়ন্ত্রণে, গাজা গেল মুসলিম ব্রাদারহুডের মিত্র হিসেবে পরিচিত হামাসের নিয়ন্ত্রণে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর ব্রিটেন স্বাধীনতা দেওয়ার অঙ্গীকারে ১৯১৮ সাল থেকে ৩০ বছর দেশটিকে নিজেদের অধীন রাখে। মূলত এই সময়টিই প্যালেস্টাইনকে আরব শূন্য করার জন্য ভালোভাবে কাজে লাগায় ইহুদি বলয় দ্বারা প্রভাবিত ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি। এরপর দ্রুতই বহিরাগত ইহুদির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪০ হাজার। এ সময়ই ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন চাপে জাতিসংঘে ভোট গ্রহণ হয়। এতে ৩৩টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে, ১৩টি রাষ্ট্র বিরুদ্ধে এবং ১০টি ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ হয়েও ইহুদিরা পেল ভূমির ৫৭ শতাংশ। আর ফিলিস্তিনিরা পান ৪৩ শতাংশ। তবে প্রস্তাবিত ইহুদি রাষ্ট্রটির উত্তর-পশ্চিম সীমানা ছিল অনির্ধারিত; যাতে ভবিষ্যতে ইহুদিরা সীমানা বাড়াতে পারে। ফলে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা চূড়ান্ত হলেও উপেক্ষিত থেকে যায় ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের মাধ্যমে পাস হয়ে যায় একটি অবৈধ ও অযৌক্তিক প্রস্তাব। প্রহসনের নাটকে জিতে গিয়ে ইহুদিরা হয়ে ওঠে আরও হিংস্র। তারা হত্যা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নিজ ভূমি থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করতে থাকে। চলতে থাকে বাড়িঘরে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, জোর করে জমি দখল, নারী নির্যাতন আর খুনের উৎসব। ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাধ্য জন দেশত্যাগ করতে। এর এক পর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১২ মে রাত ১২টা ১ মিনিটে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করে ইহুদিরা। ১০ মিনিটের ভেতর ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।  সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ব্রুনাই টাইমস।

/এমপি/

সম্পর্কিত
লেবাননে এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
ইরান ইস্যুতে তৃতীয় বৈঠকে বসছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা
সর্বশেষ খবর
অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
চ্যাম্পিয়নস লিগঅবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে বার্সাকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পিএসজি
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
গাজীপুরে ব্যাটারি কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যু, অগ্নিদগ্ধ ৬
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
নারিনকে ছাপিয়ে বাটলার ঝড়ে রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সুনামগঞ্জে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ১৩ জনের
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
উৎসব থমকে যাচ্ছে ‘রূপান্তর’ বিতর্কে, কিন্তু কেন
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
চুরি ও ভেজাল প্রতিরোধে ট্যাংক লরিতে নতুন ব্যবস্থা আসছে
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়
প্রকৃতির লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের ভিড়