X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ভারতে মুদ্রা বাতিল

উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষোভ নেই, বিরূপ প্রতিক্রিয়া ভোগান্তিতে

চিত্ত বিশ্বাস, কলকাতা
০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৩:৪৫আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:১০

মুদ্রা বাতিল হওয়ায় ব্যাংকগুলোর সামনে ভারতীয়দের ভিড়

মধ্য কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন এক মহিলা। চাকরিজীবী তিনি, অফিসে ঢুকতে দেরি হবে বলে আগাম জানিয়ে এসেছিলেন। কারণ, নগদ তুলতে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ালে দেরি হবেই। ইতোমধ্যে সেই লাইনে কয়েকজন হইহল্লা শুরু করলেন। বিরক্তি মাখা একাধিক স্বর প্রশ্ন তুলল, ‘আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? পারা যাচ্ছে ‌না তো!’ এ বার ওই মহিলার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল,‘এতকাল তো আমরা অনেক অসুবিধে ভোগ করেছি। এই অসুবিধেটুকুও সহ্য করি। এতে আমাদের সবারই তো আখেরে লাভ!’

রাজারহাটের বাসিন্দা, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের এক ছাত্রী উচ্ছ্বসিত, ‘উফফফফফ, ভাবতেই পারছি না। এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কলিজার জোর লাগে। কালো টাকার বিরুদ্ধে এত বড় একটা পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত নেওয়া হল। অসাধারণ। মোদি এই জন্য মোদি।’

উত্তর কলকাতার শোভাবাজারের এক সব্জি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘দেখুন, এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলে প্রথম প্রথম অসুবিধে হবেই। সেটাই হচ্ছে। তবে বাজারে নতুন পাঁচশোর নোটটা এসে গেলে আর ততটা সমস্যা হবে না।’

ভারত সরকার পুরনো হাজার ও পাঁচশো টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পর দিন সাত-দশ পর্যন্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত-মধ্যবিত্তের মানসিকতা এমনই ছিল। আম আদমি যতই কাজ পণ্ড করে, বিনোদন শিকেয় তুলে, রবিবার বাজার না করে ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ান, একটা কথা ভেবে তারা খুশি হচ্ছিলেন যে, কোটি কোটি কালো টাকার মালিক যারা,তাদের পথের ভিখারি করে দেবে নরেন্দ্র মোদির এই সিদ্ধান্ত। কথায় কথায় দিঘা-পুরীর মতো ব্যাংকক-পাতায়া-ফুকেট ঘোরা বেরিয়ে যাবে। সিঙ্গিং বার-এ গিয়ে সুন্দরী ললনাদের দেখে টাকা আর ওড়াতে পারা যাবে না। কালো টাকা উদ্ধারের পর তার সুফল যদি সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেখতে না পাওয়া যায়, তাতেও পরোয়া নেই। মুদ্রাস্ফীতি না কমলে, আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম না বাড়লে, জিনিসপত্রের দাম না কমলেও সমস্যা নেই। আম জনতার তৃপ্তি হচ্ছিল শুধু এটা ভেবে যে, কালা ধনে ধনী যারা, তারা শেষ।

যে কারণে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলতেই সাধারণ মানুষের একটা অংশ ধরেই নিলেন,সারদা-নারদা কেলেঙ্কারির বিপুল অর্থ তার দলের নেতাদের কাছে মজুত আছে, যেগুলো সব ওই বাতিল হয়ে পাঁচশো-হাজারের নোটে এবং যে কারণে তিনি ফাঁপরে পড়েছেন। যদিও মমতার মূল অভিযোগ ছিল (এবং এখনও আছে) সাধারণ মানুষের ওই ভোগান্তি নিয়ে। তবু সেই ভোগান্তি প্রথম দিকে ততটা গায়ে মাখছিলেন ‌না জনসাধারণের একটা বড় অংশ।

ভারতে বাতিল হয়ে গেছে ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট

কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ভোগান্তি কমার বদলে ততই যেন বাড়ছে। বিবেকানন্দ রোডের যে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি পাড়ার চায়ের দোকানে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষ নিয়ে দু’-আড়াই সপ্তাহ আগেও গলা ফাটাচ্ছিলেন, তিনিই এখন বলছেন, ‘প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্ভোগ সহ্য করারও তো একটা সীমা মানুষের আছে। আমরা ক্রমশ সেই সীমাটা অতিক্রম করে যাচ্ছি।’

কলকাতার বড় পাইকারি বাজার পোস্তায়। রোজ কয়েকশ’ কোটি টাকার লেনদেন সেখানে। নোট বাতিলের ধাক্কায় সেই বাজারে বিকিকিনি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক পাইকার বলছিলেন, ‘মানছি, গোপনীয়তার প্রয়োজন ছিল। যে কারণে নতুন পাঁচশোর নোট আগে থেকে ছাপানো যায়নি। কিন্তু একশোর নোটের জোগান এত কম কেন?সেটা তো আগে থেকে ছাপানো যেত। খুচরো নোট হাতে না থাকলে নতুন দু’হাজার নোটও কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অচল পাঁচশো-হাজারের নোটের মতো কাগজের টুকরো ছাড়া কিছু নয়।’ দক্ষিণ কলকাতার এক সুপার মার্কেটের মুদির দোকানি সুবীর পাল বলছেন, ‘৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গিয়েছে। উদ্দেশ্য যত ভালই হোক না কেন, আমার এই ক্ষতি কে, কবে পূরণ করবে? আমি তাই এটাকে ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করতে পারছি না।’

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মী, সত্তরোর্ধ্ব মহিলা পেনশন তুলতে এই ডিসেম্বরে ব্যাংকে দু’দিন মোট ছ’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে পেরেছেন, তা-ও পুরোটা নয়, ১০ হাজার। তাঁর মাথায় হাত, ‘ফ্ল্যাটবাড়ির মেনটেন্যান্স, পরিচারিকার মাইনে, গ্যাস সিলিন্ডারের টাকা, পাড়ার ওষুধ ও মুদির দোকানের দাম মিটিয়ে তাঁর খাওয়ার জন্য বা বিপদ-আপদের জন্য তাহলে কত টাকা হাতে থাকবে?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটাকে হাতিয়ার করে কেন্দ্র তথা বিজেপি-র বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছেন। এরই মধ্যে রাজ্যে সেনাবাহিনীর কিছু রুটিন কর্মসূচি নিয়ে তি‌নি ক্ষিপ্ত। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ইগো-র লড়াই ও ভুল বোঝাবুঝি এতে প্রকট। তবু মমতার কাছে এটা হাতিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করতে, রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে নরেন্দ্র মোদির সরকার সচেষ্ট- এই অভিযোগ তুলে মমতা সরব। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মমতার কাছে জনবিরোধী পদক্ষেপ ও ‘আর্থিক জরুরি অবস্থা’ আর সেনাবাহিনীর এই কর্মসূচি মমতার কাছে জরুরি অবস্থা ও ‘সেনা অভ্যুত্থান’। 

/টিএন/

সম্পর্কিত
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা