X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি অভিযানের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ইয়েমেনের কোটি মানুষ

বিদেশ ডেস্ক
০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:৫০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:১১

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলার পর একটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষের সামনে দাঁড়ানো এক কৃশকায় শিশু। ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের মানুষের জীবনের এক কালো অধ্যায়ের শুরু। এই দিনটিতেই দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট। সামরিক অভিযান বলতে প্রায় নির্বিচারে বিমান হামলা। এমন হামলা থেকে বাদ যায়নি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু জানাজার নামাজও। এমন তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ইয়েমেনের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অন্তত ৩০ লাখ মানুষ। আর দেশ ছেড়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। দেশের অর্ধেকেরও বেশি এলাকায় বিরাজ করছে খাদ্যাভাব। অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন ইয়েমেনের বহু নাগরিক। তবে আইএসের এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আর শরণার্থী সংকটের ভিড়ে ইয়েমেন সংকট বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি। 
ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাদা প্রদেশের রাজধানী সাদাহ। প্রায় দুই বছর ধরে চলে আসা সৌদি অভিযানে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে শহরটি। নগরের প্রধান মার্কেটটি ধুলাবালিতে মিশে গেছে। চারদিকে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। ভাঙা খাম্বা, ধসে পড়া ছাদ, এবড়োথেবড়ো পথে থাকা লোহা আর মাটিতে মিশে আছে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। অথচ এখানেই কয়েকশ বছর ধরে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বেচাকেনা হয়েছে। এখন শুধু দেখা যায়, পড়ে থাকা কোকের মতো কয়েকটি কোমল পানীয়ের বোতল, অর্ধেক পুড়ে যাওয়া একটি সোফা। আশপাশে তাকালে হয়তো দেখা যাবে, কাঠের লাঠি হাতে মূল্যবান কিছু খুঁজছে কয়েকটি শিশু।

সানায় সৌদি বিমান হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একদল শিশু।

পরাশক্তিগুলোর ছায়া যুদ্ধের পুতুল হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে এমন বিভীষিকা ছড়াচ্ছে সৌদি আরব। ইরানের সমর্থন নিয়ে ইয়েমেনের সরকারকে উচ্ছেদ করা হুথি বিদ্রোহীদের দমনে সেখানে একতরফা যুদ্ধ শুরু করেছে সৌদি আরব। সঙ্গে আছে সৌদিপন্থী মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশ। ফলে ইরান ও সৌদি আরবের বিরোধের বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ইয়েমেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবসময়ই জটিল ছিল। দেশটিতে রয়েছে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী, উপজাতি ও সশস্ত্র বাহিনী। জিহাদিদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরবের বিমান হামলার সদর দফতরের পাশে থাকেন যুক্তরাজ্যের সামরিক উপদেষ্টারা।

সা’দা নগর পরিষদের একজন সদস্য শেখ আহমেদ। তার প্রশ্ন, কেন আমাদের পুরনো বাড়ি ও মার্কেটে বোমা হামলা চালাচ্ছে সৌদি আরব? উত্তরটা তিনি নিজেই দিলেন, সৌদি আরব আমাদের ঘৃণা করে বলেই এ হামলা চালাচ্ছে।

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সৌদি বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে এমন তাণ্ডব প্রত্যক্ষ করছেন ইয়েমেনের নাগরিকরা।

ইয়েমেনে যত রাজনৈতিক বিভক্তি

আধুনিক ইয়েমেন রাষ্ট্রের পত্তন হয় ১৯৯০ সালে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সমর্থিত আরব রিপাবলিক অব ইয়েমেন (উত্তর) ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত রিপাবলিক অব ইয়েমেন (দক্ষিণ) একত্রিত হয়। উত্তর ইয়েমেনকে ১৯৭৮ সাল থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সামরিক কর্মকর্তা আলি আব্দুল্লাহ সালেহ নতুন রাষ্ট্রের নেতৃত্ব পান। যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার চেয়ে আয়তনে সামান্য বড় ইয়েমেনের জনসংখ্যা দুই কোটি ৫০ লাখ।

একত্রিত হলেও রাজধানী সানা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুরো দেশে একচ্ছত্র ছিল না। সালেহ নিজের ক্ষমতা সুরক্ষিত করতে বেশকিছু গোষ্ঠীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। এর প্রভাব এখনও বিদ্যমান।

ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে আল-হিরাক নামক গোষ্ঠী ১৯৯৪ সালে বিদ্রোহ করে। দুই শাসনব্যবস্থা একত্রিত হওয়ায় নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে মনে করেন তারা। গোষ্ঠীটি স্বাধীনতা না পেলেও অন্তত বৃহত্তর সায়ত্বশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে। আল-কায়েদার অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি) এবং তাদের সহযোগী আনসার আল-শারিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী দক্ষিণাঞ্চলের কিছু এলাকা দখল করে সেটি নিয়ন্ত্রণ করছে। উত্তর ইয়েমেনের জায়দি শিয়াতে ঘাঁটি গড়া হুথিরা সালেহ সরকারের বিরুদ্ধে ২০০৪ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ছয়বার বিদ্রোহ করেছে।

একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শুরুতে অর্থাৎ, ২০০০ সালের পর থেকেই সালেহ সরকারকে সহযোগিতা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় আঞ্চলিক উদ্বেগ ছাপিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার ছিল। ২০০০ সাল থেকে দেশটি ইয়েমেনের সামরিক ও পুলিশ খাতে সহযোগিতায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার তহবিল দিয়েছে। ২০১১ সালে ইয়েমেনের বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনায় আল-কায়েদার বোমা হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সেখানে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।

সৌদি অভিযানের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ইয়েমেনের কোটি মানুষ

নাগরিক অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর দাবি, সালেহ স্বৈরতান্ত্রিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার পরিচালনা করছেন। ২০১১ সালে আরব দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিদ্রোহের ঢেউ লাগে ইয়েমেনেও। প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে। এ সময় ইয়েমেনের শহরগুলোতে বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়। এ ফাঁকে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে প্রভাব বিস্তার করে সেগুলো দখলে মনোযোগ দেয় আল-কায়েদা।

দেশে ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দায়মুক্তির নিশ্চয়তা পাওয়ার পর ক্ষমতা ছাড়েন সালেহ। তার ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর আল-হাদি অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। এ পদক্ষেপ সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র ও গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)। জিসিসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ২০১৩ সালে জাতিসংঘ ৫৬৫ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি নতুন সংবিধানের জন্য জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেয়। এতে ইয়েমেনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের রাখা হয়। কিন্তু সংলাপে ঐকমত্য না হওয়াতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়।

সৌদি অভিযানের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ইয়েমেনের কোটি মানুষ

চলমান সংকটের কারণ

আন্তজার্তিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর চাপে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে হাদি সরকার জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সময় হাদি সরকারকে সমর্থন জানায় জাতিসংঘ। এ সময় জ্বালানির মূল্য কমানোর জন্য একাধিক বড় বিক্ষোভ শুরু হয়। হাদি সমর্থক ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা পাল্টা কর্মসূচি পালন করে।

এ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি রাজধানী সানা দখল করে হুথি বিদ্রোহীরা। ওই মাসেই জাতিসংঘের শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙে পড়েছিল। রাজধানী দখলের পর হুথি বিদ্রোহীরা অন্যান্য অঞ্চল দখলেও অগ্রসর হয়। ক্রমবর্ধমান চাপের মুখের পরের বছর জানুয়ারিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হাদি। এরপর হুথিরা সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দেয়।

এ ঘটনার পর দেশটির সামরিক বাহিনীতেও মেরুকরণ শুরু হয়। হাদি সরকারের সেনাবাহিনীর অনেকেই হুথি বিদ্রোহীদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাদের অভিযানে শরিক হয়। আবার হাদির সমর্থক সেনাবাহিনীর একাংশ হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয় এবং লড়াই শুরু করে। দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই শুরু করে।

হুথি বিদ্রোহীরা যখন এডেন পর্যন্ত এগিয়ে যায় তখন হাদি সৌদি আরবে নির্বাসিত হন। এরপর সৌদি আরব হাদি সরকারের সমর্থনে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালানো শুরু করে। প্রাথমিকভাবে হাদির অনুগত সেনাবাহিনীর একাংশকে বিমান হামলার মাধ্যমে সহযোগিতা করে সৌদি আরব। এমন হামলা থেকে বাদ যায়নি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু জানাজার নামাজও। এরপর দেশটি একটি সামরিক জোট গঠন করে অভিযানের ব্যপ্তি বাড়ায়। সৌদি আরবের অভিযানের লক্ষ্য হুথি বিদ্রোহীদের নির্মূল করে রাজধানী সানায় হাদি প্রশাসনকে স্থলাভিষিক্ত করা।

ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িত পক্ষগুলো

১৯৮০ দশকের শেষ দিকে উত্তর ইয়েমেনের জায়দি শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকারী সংগঠন হিসেবে হুথিদের আত্মপ্রকাশ। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ ইয়েমেনে জায়দি শিয়ারা সংখ্যালঘু হলেও ১৯৬২ সাল থেকে সৌদি সীমান্তবর্তী অঞ্চলটি এ সম্প্রদায়ের নেতারাই শাসন করে আসছে।

২০০৩ সালে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়তা শুরু হয় হুথিদের। মার্কিন নেতৃত্বে ইরাকে দখল অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতার জন্য প্রেসিডেন্ট সালেহ-এর বিরোধিতা করে তারা। এরপর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার বিদ্রোহ করেছে হুথিরা। বিশেষ করে ২০০৯ সালে বড় ধরনের বিদ্রোহ করে তারা। এ সময় সৌদি সেনাদের হস্তক্ষেপে তা দমন করে সালেহ সরকার। সালেহ’র পদত্যাগের পর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে হুথিরা। এ সময় দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে হুথিদের প্রভাব বিস্তৃত হয়।

২০১১ সালে ক্ষমতা ছাড়লেও সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহ ইয়েমেন সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিক্ষোভ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও তার অনেক সমর্থক ছিল সরকারের ভেতরে ও বাইরে। তারাও ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। সালেহ ও তার ছেলে আহমেদ আব্দুল্লাহ সালেহ ইয়েমেনের নিরাপত্তা বাহিনী, উপজাতি গোষ্ঠী ও জেনারেল পিপলস কংগ্রেসকে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতায় কাজে নামান। তারা হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য গড়ে তোলে। তাদের কৌশল ছিলো, হাদি সরকারের বিরোধিতা করে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং ইয়েমেনের নেতৃত্ব অর্জন করা।

সৌদি অভিযানের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ইয়েমেনের কোটি মানুষ

দেশীয় বিভক্তির সুযোগে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রধান শক্তি ইরান ও সৌদি আরর ইয়েমেন সংকটে জড়িয়ে পড়ে। সুন্নি সরকারের বিরোধিতায় শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয় ইরান। তাদেরকে অস্ত্রসহ সামরিক সহযোগিতা দেওয়া শুরু করে তেহরান। হাদি সরকার হুথি বিদ্রোহীদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ইরানের লেবাননি মিত্র হিজবুল্লাহকে দায়ী করে। সৌদি আরব ইরানকে মোকাবেলায় ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক বিষেশজ্ঞরা ইয়েমেনে ইরানের প্রভাবকে বাড়িয়ে দেখার বিষয়ে সৌদি আরবকে সতর্ক করেছেন। কারণ ইরান ও ইয়েমেনের শিয়া মুসলিমরা পৃথক ধারা অনুসরণ করেন। তবে ইরান ও হুথি বিদ্রোহীদের ভৌগোলিক স্বার্থ এক। আর তা হচ্ছে, এ অঞ্চলে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মানতে রাজি নয় ইরান। হুথি বিদ্রোহীদেরও সানায় সরকার পরিচালনা করতে একই শক্তির বিরোধিতা করতে হচ্ছে।

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি জোটকে সমর্থন জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জায়গা হচ্ছে ইয়েমেনের স্থিতিশীলতা ও সৌদি আরব সীমান্তের সুরক্ষা। কারণ আরব সাগর ও লোহিত সাগরকে সংযোগকারী তেলের পাইপলাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এটা প্রয়োজন। এই পাইপলাইন দিয়ে প্রতিদিন ৪৫ লাখ ব্যারেল তেল প্রতিদিন সরবরাহ হয়। এছাড়া সানার সরকার তাদের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সহযোগিতাকারী।

সৌদি জোটকে লজিস্টিক ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের ক্রেতা। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি হয়েছে উভয় দেশের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি জোটের বিরোধী ইরান আবার রাশিয়ার মিত্র। ফলে এখানে পরোক্ষভাবে ইরানের সুবাদে রাশিয়াও সক্রিয়।

সৌদি অভিযানের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ইয়েমেনের কোটি মানুষ

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ইয়েমেন

ইয়েমেনের ৮০ শতাংশ মানুষের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করে খোদ জাতিসংঘ। এ মুহূর্তে দেশটি দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি অবস্থায় চলে গেছে বলে মনে করেন সংস্থাটির আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল স্টিফেন ও’ব্রায়েন। তিনি জানিয়েছেন, ইয়েমেনের দুই কোটি ২৪ লাখ নাগরিকের মধ্যে দুই কোটি ১২ লাখ মানুষেরই জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। তিন লাখ ৭০ হাজার শিশুসহ অন্তত ২০ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছেন।

যুদ্ধ শুরুর পর গত দুই বছরে শিশুদের অপুষ্টি বেড়েছে ২০০ শতাংশ। চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধেকেরও বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকিগুলোর বেশিরভাগই অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রধান প্রধান সড়ক ও সেতু বার বার বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।

জাতিসংঘ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ব ইয়েমেনের মানবিক সংকটের বিষয়টি অগ্রাহ্য করছে। ইয়েমেনে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা জ্যামি ম্যাকগোল্ডরিক বলেন, এ অঞ্চল নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মানবিকতাকে ছাপিয়ে গেছে। এখানে মানবিকতা আর কাজ করছে না। ইয়েমেনে যা ঘটছে তা চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, সেন্টার ফর ফরেন রিলেশনস।

/এমপি/এএ/

সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা