X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সিরীয় যুদ্ধের নীতিকৌশল

ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্ররা

বিদেশ ডেস্ক
১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:১৩আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৬:১৪
image





ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্ররা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধের নীতিকৌশল নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান পশ্চিমা মিত্ররা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সিরিয়ার
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রধানতম সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। পশ্চিমা মার্কিন মিত্ররা বলছে, ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ইচ্ছের কারণে সিরীয় সন্ত্রাস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।



ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর এক খবরে এসব কথা বলা হয়েছে।
সম্প্রতি রাশিয়া ও ইরানের সহায়তাপ্রাপ্ত সিরীয় বাহিনী বিদ্রোহীদের কাছে থেকে আলেপ্পোর পুনর্দখল নেওয়ার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। পশ্চিমাদের সহায়তাপ্রাপ্ত বিদ্রোহীরা একের পর এক অঞ্চলের দখল হারাচ্ছে সরকারী বাহিনীর হাতে।

সিরীয় যুদ্ধের ফাইল ছবি-১
রাশিয়া এবং সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের আশা, ২০১১ সালের মার্চে শুরু হওয়া যুদ্ধের অবসান হবে আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের পতনের মধ্য দিয়ে। নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ট্রাম্প তার সিরীয় নীতির আভাস দিতে গিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হটানো নয়, তার কাছে আইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে নির্মূল করাটাই মুখ্য।
বিপরীতে পশ্চিমাদের মতে, বাশার আল আসাদ সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাওয়াত গোষ্ঠীর মানুষ হওয়ায় সেখানে তার পক্ষে জাতিগত বিবাদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ৬ বছরের যুদ্ধ শেষে তিনি জঙি।গবাদ নির্মূলেও ব্যর্থ হবেন বলে আশঙ্কা পশ্চিমা নেতৃত্বের। তাদের কাছে সিরিয়া সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের অর্থই তাই আসাদকে ক্ষমতাচ্যূত করে নতুন একটি সরকারকে ক্ষমতায় বসানো। পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এরইমধ্যে ৩ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেওয়া এবং অর্ধেকের বেশি মানুষকে শরণার্থী বানানো এই গৃহযুদ্ধ চলতে থাকবে বছরের পর বছর ধরে।

রয়টার্স তাদের নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে জানাচ্ছে, পশ্চিমা কূটনৈতিকদের একাংশ ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের সঙ্গে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সিরিয়া-নীতির ব্যাপারে তাকে সতর্ক করেছেন। সেই কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানাচ্ছে, রুশ-মার্কিন মৈত্রী আইএস-এর (ইসলামিক স্টেট) মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নির্মূল করার কাজকে ব্যাহত করতে পারে।
একজন উর্ধ্বতন ফরাসি কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছেন, ‘নতুন মার্কিন প্রশাসন বলছে সিরিয়া ইস্যুতে আইএস নির্মূলকেই প্রাধান্য দেবেন তারা। তবে আমরা আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছি যে একটি রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া আইএস নির্মূলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে।’ ওই কূটনীতিক মনে করেন, সিরিয়ার রাজনৈতিক সমাধান না হলে নতুন জঙ্গিরা পুরনো জঙ্গিবাদের ফাঁকস্থান পূরণ করবে।

সিরীয় যুদ্ধের ফাইল ছবি-২
এই ফ্রান্স একাধিকবার আইএস-এর হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। পশ্চিমা সরকারগুলো আশঙ্কা করছে, সিরীয় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পশ্চিমে শরণার্থী স্রোত বাড়বে। বিপুল শরণার্থী স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদীরাও পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রবেশ করতে পারে।
ব্রিটেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্স এর শীর্ষ ব্যক্তি অ্যালেক্স ইয়োঙ্গার জনসম্মুখে দেওয়া এক বিরল বক্তৃতায় বলেন, ‘যতোক্ষণ পর্যন্ত না সিরীয় গৃহযুদ্ধের অবসান হচ্ছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকির মুখে থাকবে পশ্চিম।’ রাশিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এমন পথে সিরীয় গৃহযুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত যেন আন্তর্জাতিক মদতদাতা এবং দেশের ক্ষুদ্র একটা অংশের স্বার্থরক্ষা না হয়’।
অথচ নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিকবার আইএস নির্মূলে রাশিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন। জুলাইয়ের প্রচারণার সময় তিনি বলেন, ‘যখন আমরা এটা চিন্তা করি (আইএস নির্মূলের কথা), তখন রাশিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজটা করার কথা ভাবাই কি যথাযথ নয়?’ তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের দাবি, সিরিয়ায় যেসব রুশ রোমা পড়ছে, তার অধিকাংশের লক্ষ্যবস্তুই আইএস নয়।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ঠিক কোন পথে এগোবেন তা এখনও পরিস্কার নয়। এরইমধ্যে তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে এমন অনেকেকে নিয়োগ দিয়েছেন যারা রাশিয়ার ব্যাপারে সমালোচনামুখর। তবে ট্রাম্পের সেই অন্তবর্তী দলের কেউ এসব ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।


বাম দিক থেকে আসাদ-ট্রাম্প-পুতিন
আরেক পশ্চিমা মার্কিন মিত্র দেশের কূটনৈতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘আসনাদের সঙ্গে মৈত্রী তৈরি করলে তা কোনওভাবে পশ্চিমের প্রতি সন্ত্রাসী হুমকি কমানোর সহায়ক হবে না। এতে বরং সেই ঝুঁকি বাড়বে।’
সিরিয়ার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট ফোর্ড বলেন, আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের পতন হলে সিরিয়ার আসাদ সরকার আইএস নির্মূলে নয়, আসাদবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহীদের ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।’
ফ্রান্সের সেই কূটনীতিক রয়টার্সের কাছে দাবি করেন, ট্রাম্পের অন্তবর্তী উপদেষ্টা দলের সঙ্গে আলোচনা করে তার মনে হয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিরিয়া থেকে আইএস হটানোর যুদ্ধে নামার ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সুর নরম করেছে ট্রাম্পের প্রশাসন।
তবে এই বক্তব্যের সতত্যা সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।

ইসলামিক স্টেট-এর জঙ্গি গ্রুপ
উল্লেখ্য, গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়ার আলেপ্পোতে এখনও আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ আটকা পড়ে আছেন, যাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহযোগিতারও তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। বিমান হামলায় প্রধান হাসপাতালগুলো ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। কয়েক বছর ধরে চলে আসা সহিংসতা বন্ধে প্রেসিডেন্ট আসাদের ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়া এবং বিদ্রোহীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র একমত হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর অস্ত্রবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেয়, যা কার্যকর হয় ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। কিন্তু অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকেই উভয় পক্ষ থেকেই তা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। এক পর্যায়ে ওই অস্ত্রবিরতি চুক্তি ভেঙে যায়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ২০১১ সালের ১৮ মার্চ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তিন লাখ ১ হাজার ৭৮১ জনের প্রাণহানি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হবে বলে দাবি করেছেন তারা। সিরিয়ান অবজারভেটরি বলছে, ওই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা চার লাখ ৩০ হাজারের কাছাকাছি হবে।
সিরিয়ার চলমান সংকট নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিপরীতমুখী। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য তারা আসাদ সরকারের বিদ্রোহ ঘোষণাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহযোগিতা করছে। অভিযোগ রয়েছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিমান হামলার নামে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে। আর রাশিয়া বাশার আল-আসাদকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়। তারা আসাদ সরকারের সমর্থনে আইএস ও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে মার্কিন-রুশ ‘ছায়াযুদ্ধ’ বলেও মনে করছেন অনেকে। এই প্রেক্ষাপটেই সিরিয়া ইস্যুতে চলমান মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বাইরে এসে আইএস হটাতে রাশিয়ার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা জানান নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
/বিএ/



সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশ: আইজিপি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়া হবে জঙ্গলে, তাই শেষবার ভোট দিলেন বাসিন্দারা!
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া