X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে ‘হুমকিতে ফেলার জন্য’ ইসরায়েলকে দায়ী করলেন কেরি

বিদেশ ডেস্ক
২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৯:৩৫আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৮
image

জন কেরি ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বসতি নির্মাণ চলমান থাকায় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ও মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া হুমকির মুখে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। আর এজন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছেন তিনি। বুধবার এক ভাষণে কেরি এসব কথা বলেন। ৭০ মিনিটের ওই ভাষণে কেরি বলেন, ‘ইসরায়েল যদি অধিকৃত ভূখণ্ডে তার বসতি নির্মাণ বন্ধ করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে উদ্যোগী না হয়, তাহলে তারা আরব বিশ্বের সঙ্গে কখনও প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।’

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য ইসরায়েলি বসতি নির্মাণকে ‘হুমকি’ বলে উল্লেখ করে কেরি বলেন, ‘বছরের পর বছর আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা জনসমক্ষে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহুবার ইসরায়েলকে বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে বলেছি।’ কেরি জানান, ‘যখন আমরা দেখছি শান্তির প্রত্যাশা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে, তখন আমরা নিজেদের বিবেক বোধ এড়িয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি না।’  তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমরা দেখছি ইসরায়েলের সেটেলার বসতি নির্মাণের ফলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানটাই ভেস্তে যেতে চলেছে, তখন আমরা বসে থাকতে পারি না। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে ঘৃণা ও সহিংসতা গড়ে উঠছে, তা দেখেও আমরা অন্ধ সেজে থাকতে পারি না।’

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে দুই রাষ্ট্র গঠনের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে কেরি বলেন, ‘এখন যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা চলতে দেওয়ার মানে হলো, একদিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখল অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে দুই রাষ্ট্রের বদলে একটি রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে দেওয়া। আরব জনসংখ্যা যে দ্রুতগতিতে বাড়ছে তাতে ইসরায়েলের পক্ষে একই সঙ্গে ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকা অসম্ভব।’ ভাষণে কেরি অভিযোগ করেন, ‘ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বসতি স্থাপনকারীদের এজেন্ডার ভিত্তিতে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছেন।’ 

ওই ভাষণে কেরি জেরুজালেমকে ‘দুই রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রাজধানী’ ঘোষণার জন্য একটি সমাধানেরও প্রস্তাবনা দিয়েছেন। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি

কেরির বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, তিনি মনে করেন ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে তার দাবি, শান্তি আলোচনা শুরুর আগে ইসরায়েলকে অধিকৃত ভূখণ্ডে তাদের বসতি সরিয়ে নিতে হবে।

তবে কেরির ভাষণের কয়েক মিনিট পরেই এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি কেরির ভাষণকে ইসরায়েলবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর আগে জাতিসংঘে পাশ হওয়া একটি প্রস্তাবে ভেটো না দেওয়ায় তিনি ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ করেন।

এদিকে, কেরির ভাষণের কিছু আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সমর্থনে টুইট করেছেন। বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করা পর্যন্ত ইসরায়েলকে ‘শক্ত থাকতে’ বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও এখন আর নেই। ইসরায়েলকে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান’ করা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাবে ভোট গ্রহণের আগে ওবামা প্রশাসনের কাছে ‘ভেটো’ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘটনায় টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘অবস্থা বদলাবে ২০ জানুয়ারির পর।’

এর আগে মঙ্গলবারও এক টুইটে ট্রাম্প জাতিসংঘের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের অনেক সম্ভাবনা আছে, কিন্তু এখন এই সংস্থা একটি ক্লাব ছাড়া আর কিছু নয়। কিছু লোক এখানে গল্পগুজব করে এবং ভালো সময় কাটায়, তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।’

গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করে একটি প্রস্তাব পাশ করে। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৯৬৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েল যে বসতি স্থাপন করে যাচ্ছে, তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই।’ নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা পাশ হয়। ভোট দান থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে অতীতে তারা ইসরায়েলবিরোধী প্রস্তাবগুলোতে ভেটো দিত। ওই প্রস্তাব পাশের পর থেকে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তিক্ততা বাড়ে ইসরায়েলের।   

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনসহ অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের একটা বড় অংশ দখল করে নেয়। পরে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলের সীমানা নির্ধারণ করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে পূর্ব জেরুজালেম, গাজা ও পশ্চিম তীরের অধিকৃত ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অন্তত ১৯৭টি সেটেলার বসতি রয়েছে, যেখানে বাস করছেন প্রায় ৬ লাখ ইসরায়েলি। ওইসব স্থান থেকে প্রায় ২৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয়।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি।

/এসএ/বিএ/

সম্পর্কিত
ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার বিচার২০১৬ সালের নির্বাচনে দুর্নীতি করেছিলেন ট্রাম্প: প্রসিকিউটর
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোটি টাকার মাদকের পার্সেল, আটক ৩
ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর ড্রোন ও রকেট হামলা
সর্বশেষ খবর
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
পার্বত্য তিন উপজেলার ভোট স্থগিত
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
কৃষিজমির উপরিভাগ কাটার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
রাজধানীর শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি