X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামাতাকে উপদেষ্টা নিয়োগ: স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইন এড়াতে পারবেন কি ট্রাম্প?

বিদেশ ডেস্ক
১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:১৮আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:১৮
image

জ্যারেড কুশনার ও ট্রাম্প মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারকে হোয়াইট হাউসের শীর্ষ উপদেষ্টার পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ ঘোষণার পর ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনের প্রসঙ্গ। যুক্তরাষ্ট্রের স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইন অনুযায়ী, আত্মীয়-স্বজনদের নিজের প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর সে আইনটি মাথায় রেখে এরইমধ্যে কুশনারকে নিয়োগের সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে কুশনারের আইনজীবী দাবি করেছেন, এ নিয়োগের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে না। অবশ্য, স্বজনপ্রীতি আইনটির যেমন কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে তেমনি এর ফাঁকফোকড়ও রয়েছে। সেদিক থেকে ট্রাম্পের জামাতা হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পদে টিকে যাবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কী আছে স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনে?

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনটি পাস হয় ১৯৬৭ সালে। ১৯৬১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি তার ভাই রবার্ট কেনেডিকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরই আইন-প্রণেতারা বিলটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়ে থাকে।

স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইন অনুযায়ী, ‘কোনও সরকারি কর্মকর্তা তার কোনও নিকটাত্মীয়কে এমন কোনও সংস্থায় বেসামরিক পদে নিয়োগ, কিংবা নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করতে পারেন না যেখানে তিনি নিজে কর্মরত আছেন কিংবা সেখানে তার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আইনটির আওতায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার কোনও আত্মীয়কে মন্ত্রিপরিষদে চাকরি দিতে পারেন না। তবে, মন্ত্রিপরিষদের বাইরের পদগুলোর ক্ষেত্রে যেমন উপদেষ্টা পদের ক্ষেত্রে কী হবে তা এখনও পরীক্ষিত নয়।

ডেমোক্র্যাটরা যে দাবি জানাচ্ছেন

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্র্যাটদের একটি দল চাইছে, জ্যারেড কুশনারের নিয়োগের ব্যাপারে যে আইনি ইস্যুগুলো রয়েছে তা বিচার বিভাগ এবং গভর্নমেন্ট এথিকস কার্যালয় থেকে সূক্ষ্ণভাবে খুঁটিয়ে দেখা হোক। এক চিঠিতে ডেমোক্র্যাট পার্লামেন্ট সদস্যরা এবং হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির সকল সদস্য দাবি করেছেন এক্ষেত্রে ১৯৬৭ সালের স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনের আওতায় শক্ত একটি মামলা করা যেতে পারে। তাদের আশঙ্কা, হোয়াইট হাউসে শীর্ষ উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কুশনার কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে পারেন। নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থের ক্ষেত্রে সুবিধা যেন হয় সেভাবে নীতিমালাকে প্রভাবিত করতে পারেন তিনি। তবে আত্মীয়দের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকও রয়েছে। কেউ যদি বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানায় তবে সেক্ষেত্রে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

ট্রাম্পের জামাতা কুশনার
ট্রাম্প কি স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইন এড়াতে পারবেন?

স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনটি পাসের পরবর্তী বছরগুলোতে বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে সত্যিকার অর্থে প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে আইনটি প্রয়োগ করা হয় না। কেননা, সংবিধানের নিয়োগসংক্রান্ত ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের সরাসরি ক্ষমতা রয়েছে। অনুচ্ছেদ ২ এর ধারা ২ অনুযায়ী কিছু কিছু কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। আর অন্য অধস্তন কর্মকর্তাদেরকে প্রেসিডেন্ট সরাসরি নিয়োগ দিতে পারেন।

২০১২ সালে ইন্ডিয়ানা স্কুল অব ল-এর গবেষক জেরার্ড ম্যাগলিওকা দাবি করেছিলেন, স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইনটি স্পষ্ট করে প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় না। কনকারিং অপিনিয়ন’স-এ লেখা ব্লগে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমি বলতে পারি, রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের যে কর্তৃত্ব সেক্ষেত্রে একমাত্র সংবিধিবদ্ধ সীমাবদ্ধতা এটি। ক্ষমতা আলাদাকরণের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় উপদেষ্টা বাছাইয়ের জন্য প্রেসিডেন্টের যে বিবেচনা তাতে কংগ্রেস স্পষ্টত অনধিকারপ্রবেশ করতে পারে না।’  

ট্রাম্প ও কুশনার
এক্ষেত্রে আরেকটি যুক্তি প্রচলিত রয়েছে। তাহলো- হোয়াইট হাউস নির্বাহী শাখার কোনও সংস্থা নয় এবং এক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হয় না। তাছাড়া কুশনারের আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী কুশনার যদি সত্যিই তার কাজের জন্য বেতন না নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে এ আইন প্রযোজ্য হবে না। কুশনারের আইনজীবী দাবি করেছেন, ফেডারেল এথিকস আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার ব্যাপারে তার মক্কেল বদ্ধপরিকর এবং এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিয়ে অফিস অব গভর্নমেন্ট এথিকসের সঙ্গে তিনি আলাপ করবেন। উপদেষ্টা পদের জন্য কুশনার পারিশ্রমিক নেবেন না বলেও জানিয়েছেন আইনজীবী। ফেডারেল এথিকস আইন অনুসারে, কোনও ব্যবসা থেকে লভ্যাংশ ভোগকারী ব্যক্তি হোয়াইট হাউসে নিয়োগ পাবেন না। তবে কুশনারের আইনজীবী দাবি করেছেন ফেডারেল এথিকস আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কুশনার তার পারিবারিক ব্যবসা এবং নিউ ইয়র্ক অবজারভারের প্রকাশকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন। আর সেদিক থেকে কুশনারকে হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা হিসেবে না দেখার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দাবি ধোপে টিকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

অবশ্য গত নভেম্বরে সিএনএন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক স্টিভ ভ্লাদেক বলেছিলেন, আইনটিকে চ্যালেঞ্জ করা গেলেও প্রেসিডেন্টের নিয়োগকৃত ওই আত্মীয়ের অফিসিয়্যাল ভূমিকা পালনের সময় তার নেওয়া যেকোনও পদক্ষেপকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রুল জারি করতে পারে আদালত। সূত্র: বিবিসি, ইয়াহু, দ্য গার্ডিয়ান

/এফইউ/

সম্পর্কিত
মধ্যপ্রাচ্যে সংযমের আহ্বান ইরাকি নেতার
আদালতে হাজির হয়ে ট্রাম্প বললেন, ‘এটি কেলেঙ্কারির বিচার’
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সর্বশেষ খবর
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী স্ট্রাইকার পরপারে
জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী স্ট্রাইকার পরপারে
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’