দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে যে, ওই অঞ্চলে নির্মিত কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে যদি চীনকে যেতে বাধা দেওয়া হয় তাহলে তা ‘ভয়ঙ্কর সংঘাতে' রূপ নেবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের হুমকির জবাবে চীনে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলোতে শুক্রবার এমন পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রেক্স টিলারসন বলেছিলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত এলাকায় চীন যেসব কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সেখানে তাদের যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া।
চীনের অন্তত দুটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে রেক্স টিলারসনের এই কথার তীব্র সমালোচনা করা হয়। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত কট্টরপন্থী পত্রিকা 'গ্লোবাল টাইমস' বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এ রকম কিছু করে তাতে 'বড় আকারে যুদ্ধ' শুরু হয়ে যাবে।
দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবাল প্রাচীরের ওপর চীন অনেক দিন ধরেই একগুচ্ছ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে। তবে সাগরের ওই অঞ্চলকে আরও একাধিক দেশ নিজেদের বলে দাবি করে।
কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে চীন সামরিক স্থাপনা তৈরি করছে বলে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
রেক্স টিলারসন মার্কিন সিনেটে তার শুনানিতে বলেছিলেন, চীন দক্ষিণ চীন সাগরে যা করছে তা রাশিয়া যেভাবে ক্রিমিয়াকে দখল করে গ্রাস করেছে, অনেকটা সেরকমেরই একটা কাজ।
তিনি বলেন, "চীনকে একটা শক্ত সংকেত পাঠাতে হবে যাতে তারা এ রকম কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি বন্ধ করে। আর দ্বিতীয়ত এসব দ্বীপে তাদের ঢুকতে দেওয়া উচিত হবে না।"
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র অবশ্য এর জবাবে শুধু এটুকুই বলেছিলেন যে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনেরই সীমানা এবং সেখানে স্বাভাবিক তৎপরতা চালানোর অধিকার তাদের আছে। কিন্তু চায়না ডেইলি এবং গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়ের ভাষা ছিল অনেক বেশি আক্রমণাত্মক।
চায়না ডেইলি বলেছে, রেক্স টিলারসন যে 'চীন-মার্কিন' সম্পর্ক এবং কূটনীতি সম্পর্কে কতটা অজ্ঞ, সেটা প্রমাণ করে তার এই মন্তব্য। পত্রিকাটি বলছে, "যদি তিনি বাস্তবেই এ রকম কোনও পদক্ষেপ নেন, সেটা হবে একটা বিপর্যয়। এর ফলে চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মারাত্মক সংঘাত শুরু হবে বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন। আর যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে আশা করে যে চীনকে তাদের বৈধ সীমানায় ঢুকতে বাধা দিলে চীন নিজেকে রক্ষায় কোনও পদক্ষেপ নেবে না।"
গ্লোবাল টাইমস বলেছে, রেক্স টিলারসন আসলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের নিয়োগ নিশ্চিত করতে আর সিনেটরদের সুনজরে আসতে এমন মন্তব্য করেছেন।
পত্রিকাটি বলছে, "ওয়াশিংটন যদি না দক্ষিণ চীন সাগরে বড় আকারে একটি যুদ্ধের পরিকল্পনা করে, অন্য কোনও উপায়ে সেখানে নির্মিত দ্বীপগুলোতে চীনের প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা হবে একটা বোকামি।"
ওবামা প্রশাসনও অতীতে দক্ষিণ চীন সাগের কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির বিরুদ্ধে চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ওই অঞ্চলের সমুদ্রপথ ব্যবহারের অধিকার যে তাদের আছে, সেটা প্রমাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যুদ্ধজাহাজও পাঠিয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামা কখনও এসব দ্বীপে চীনকে ঢুকতে দেওয়া হবে না, এমন কথা বলেননি।
চায়না ডেইলি বলেছে, রেক্স টিলারসন যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তার কতটা তাদের চীন নীতিতে প্রতিফলিত হয়, সেটা দেখতে হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
/এমপি/