X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাপক প্রতিবাদের মুখেই শপথ নিচ্ছেন ট্রাম্প

বিদেশ ডেস্ক
১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:১৮আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৩৬

ডোনাল্ড ট্রাম্প
আর মাত্র দুইদিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন নবনির্বাচিত রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।  শপথের দিন ঘনিয়ে আসবার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে তার বিরোধিতার পরিসর। সবশেষ জরিপগুলোর আভাস অনুযায়ী তার জনপ্রিয়তা ঠেকেছে তলানিতে। কংগ্রেসের অন্তত ৫০ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্পের শপথ বর্জনের। ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ শ্লোগানে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের থেকে অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে পৃথক করে বিভক্তির সূত্রকে সামনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। হতে পেরেছিলেন প্রেসিডেন্ট। তার সেই ‘বিভক্তি’র শপথের বিরুদ্ধেই ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার পক্ষে নামবেন প্রতিবাদীরা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের শপথে যতো মানুষ অংশ নেবেন তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ থাকবেন ট্রামবিরোধী প্রতিবাদে। ‘বিভক্তি আমেরিকার শপথ’ কে ঐক্যবদ্ধ আমেরিকার প্রতিবাদ দিয়ে রুখে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তারা। মার্কিন শিল্পী সমাজের একটা বড় অংশ প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠান। সংবাদমাধ্যমের আভাস অনুযায়ী ওবামার শপথ অনুষ্ঠানে যেখানে ১ কোটিরও বেশি মানুষের জমায়েত ছিল, ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন ৮ থেকে ৯ লাখ মানুষ। সবমিলে ট্রাম্পের শপথের দিনটি অতীতের মার্কিন প্রেসিডেন্টদের শপথ অনুষ্ঠানের মতো হচ্ছে না। জমায়েতের সীমাবদ্ধতা  আর প্রতিবাদের ব্যপ্তীর কারণেই তা স্বতন্ত্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের শপথ বর্জনকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের সবশেষ খবরে জানিয়েছে, এরইমধ্যে ট্রাম্পের শপথ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন  কংগ্রেসের অন্তত ৫০ জন ডেমোক্র্যাট সদস্য। বস্তুত মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত জন লুইসকে নিয়ে করা ট্রাম্পের এক মন্তব্যের পর আরও জোরালো হয় তার বিরোধিতা। নির্বাচনে ‘রুশ হস্তক্ষেপের’ কথা উল্লেখ করে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে  প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ‘বৈধতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন লুইস। মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডেমোক্র্যাট নেতা জন লুইস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত এই ব্যক্তিকে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ প্রেসিডেন্ট বলে মনে করি না।’  জন লুইস বলেন, ‘যাকে ভুল বলে মনে করেন, এমন কারও সঙ্গে আপনি এক ঘরে থাকতে পারেন না।’ তিনি ‘এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে’ উল্লেখ করে, ২০ জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকারও ঘোষণা দেন।

লুইস ছিলেন মার্কিন অধিকার আন্দোলনের ‘আইকন’ মার্টিন লুথার কিং-এর অন্যতম সহযোগী। ১৯৬৫ সালে অ্যালাবামার সেলমায় যে সমাবেশে কিং পুলিশি হামলার শিকার হন, সেখানে বক্তব্য রাখা একমাত্র জীবিত ব্যক্তি তিনি। লুইসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কংগ্রেস সদস্য জন লুইসের উচিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অভিযোগ না করে তার নিজ নির্বাচনি এলাকার দিকে নজর দেওয়া। শুধু কথা, কথা, কথা – না কোনও পদক্ষেপ, না ফলাফল। দুঃখজনক!’ এই বিতর্কিত প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ট্রাম্পকে। এই তালিকায় ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান নেতাও রয়েছেন। আর নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তাও ঠেকেছে তলানিতে। পর্যবসিত হয়েছে ঐতিহাসিকতায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জন লুইস

বিভিন্ন জনমত জরিপ বলছে, মার্কিনিদের কাছে ট্রাম্পের গ্রহনযোগ্যতা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গ্রহণযোগ্যতার চেয়ে অর্ধেকেরও কম।  সিএনএন এবং ওয়াশিংটন পোস্টের আলাদা আলাদা জরিপে ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জরিপগুলোতে বলা হয়েছে, জনগণের কাছে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ৪০ শতাংশ যেখানে ২০০৯ সালে বারাক ওবামার গ্রহণযোগ্যতা ৮৪ শতাংশ ছিল। মনমাউথের জরিপের ফলাফল আরও ভয়াবহ। এ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ৩৪ শতাংশ।

অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ইস্যুগুলো মোকাবেলার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ওপর ভোটারদের আস্থা অনেক বেশি হলেও অন্য নীতিগুলো নিয়ে বিরোধিতার মুখে পড়বেন তিনি। মেক্সিকান সীমান্ত প্রাচীরের বিরুদ্ধে জনমত পড়েছে ৬০-৩৭, বড় ধরনের উপার্জনকারীদের কর কমানোর বিরুদ্ধে পড়েছে ৬১-৩৬ টি জনমত, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার বিরুদ্ধে জনমত ৫৬-৩১, ইরান পরমাণু চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে জনমত ৪৬-৩৭, অন্য দেশের মুসলিম নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জনমত ৬৩-৩২। এমনকি ওবামাকেয়ার বাতিলের ক্ষেত্রে ট্রাম্প মাত্র এক পয়েন্টে অর্থাৎ ৪৭-৪৬ এ এগিয়ে আছেন। 

এ জরিপগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্প টাওয়ার থেকে টুইট করা হয়েছে। টুইটে অভিযোগ করা হয়- ‘যেসব মানুষ নকল নির্বাচনি জরিপ চালিয়েছে এবং ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে তারাই এখন গ্রহণযোগ্যতার জরিপ চালাচ্ছে। আগের মতোই তারা কারচুপি করেছে।’

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম হেরাল্ড জানিয়েছে, শুক্রবার ডিসিতে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পার্কিং এর জন্য প্রতি একটি বাসের নিবন্ধনের বিপরীতে শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য নিবন্ধিত হয়েছে চারটিরও বেশি বাস। ট্রাম্পবিরোধী ওই সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের যোগদানের কথা রয়েছে। বাস পাকিং-এর হিসেব অনুযায়ী, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য নিবন্ধন করেছে ৪০০টি বাস আর বিক্ষোভের দিনের জন্য নিবন্ধন করেছে ১৮০০টি বাস। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের অনুমতি চেয়েছে ৩০টিরও বেশি সংগঠন।

ওয়াশিংটন হোটেলগুলোতে আগে যারা ন্যুনতম চার রাতের জন্য বুকিং দিয়েছিলেন তা কমিয়ে দুই রাত করা হয়েছে। অনেকগুলো হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের হোটেলগুলোর মাত্র অর্ধেকের বুকিং হয়েছে। এমনকি কয়েকজন সেলিব্রিটি যাদের মূলত তিন দিন ধরে শপথগ্রহণজনিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশনার কথা ছিল, সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এলটন জন, সেলিন ডিওন এবং রক ব্যান্ড কিস জানিয়েছে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ওয়েলস এর শিল্পী শার্লট্টে চার্চ মঙ্গলবার ট্রাম্পের প্রতি করা এক টুইটে বলেন, ‘আমাকে আপনার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিন্তু ইন্টারনেটে সামান্য একটা সার্চই বলে দিচ্ছে আপনি অত্যাচারী।’

ব্যাপক প্রতিবাদের মুখেই শপথ নিচ্ছেন ট্রাম্প

ব্রিটিশ পারফর্মার রেবেকা ফার্গুসনও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি এক্ষেত্রে একটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন। বলেছেন, বর্ণবাদবিরোধী এবং আফ্রিকান আমেরিকানদের নির্যাতনবিরোধী ‘বিলি হলিডে’স স্ট্রেঞ্জ ফ্রুট’ শিরোনামের প্রতিবাদী গানটি যদি তাকে গাইতে দেওয়া হয় তবেই কেবল তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র তিন দিনের উৎসব উদযাপনের জন্য ট্রাম্প রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৯০ মিলিয়ন ইউএস ডলার কর্পোরেট অনুদান পেয়েছেন। তার পূর্বসূরীরা ৫ দিনের জন্য এমন অনুদান পেয়েছিলেন। 

হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের অপেক্ষায় থাকা ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা যদি ওবামার অর্ধেক হয় তবে তা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও জমায়েত হতে যাওয়া লোকজনের সংখ্যাও অর্ধেক। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ৮ লাখ থেকে ৯ লাখ মানুষ অংশ নেবে। ২০০৯ সালে ওবামার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।

/এফইউ/বিএ/আপ-এমপি/

 

সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে বাইডেনের সই
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
সর্বশেষ খবর
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘আর্টিফিশিয়াল রেইন’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘আর্টিফিশিয়াল রেইন’ পরিকল্পনা
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি