পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আদামা বারো প্রতিবেশী দেশ সেনেগালে শপথ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। সেনেগালের রাজধানী ডাকারে নিযুক্ত গাম্বিয়ার দূতাবাসে এ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
ডাকার থেকে আল জাজিরা টেলিভিশনের প্রতিনিধি নিকোলাস হক জানান, আদামা বারো’র এ শপথ অনুষ্ঠানে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার ভাষায়, গাম্বিয়ার ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
এদিকে শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সেনেগালে নিযুক্ত গাম্বিয়া দূতাবাসে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দূতাবাস ভবনের ছাদে লাগানো হয়েছে গাম্বিয়ার নতুন একটি পতাকা।
এদিকে গাম্বিয়ার চলমান অস্থিরতার মুখে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাতো নিজে সাইদি পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার আরও আট সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দীর্ঘদিনের সঙ্গীরা ছেড়ে গেলেও এখনও পদত্যাগে নারাজ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জামেহ। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সামরিক আগ্রাসনের হুমকি মুখে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন।
গত মাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আদামা বারৌর কাছে পরাজিত হন ইয়াহিয়া। গত বৃহস্পতিবার নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে ইয়াহিয়া ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান ইয়াহিয়া। কিন্তু আফ্রিকান ইউনিয়ন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় বলে জানিয়েছে।
বুধবার মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওলুদ আবদেল আজিজ গাম্বিয়ার রাজধানী বানজুলে গিয়ে ইয়াহিয়াকে ক্ষমতা হস্তান্তরে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।
এদিকে, সেনেগালের সেনাবাহিনী গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে উৎখাতে সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে। যে কোনও সময় সামরিক আগ্রাসন চালানো হতে পারে বলে জানা গেছে। নাইজেরিয়াও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং বিমান বাহিনী নজরদারি করতে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
গাম্বিয়ার সেনাপ্রধান ওসমান বাদজি জানিয়েছেন, তার সেনাবাহিনী সেনেগালের সঙ্গে লড়াই করবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা সামরিক লড়াইয়ে জড়িত হবো না। এটা একটি রাজনৈতিক বিতর্ক। আমি আমার সেনাদের বোকাদের মতো যুদ্ধে জড়িত হতে দেবো না। আমি আমার মানুষকে ভালোবাসি।’
সামরিক আগ্রাসনের হুমকিতে অন্তত ২৬ হাজার গাম্বিয়ান সেনেগালে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন ইয়াহিয়া জামেহ। সূত্র: আল জাজিরা, আফ্রিকা নিউজ।
/এমপি/