X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
রয়টার্সের বিশ্লেষণে ট্রাম্পের অভিষেক বক্তৃতা

প্রেসিডেন্ট হয়েও নিজেকে ‘বিদ্রোহের নেতা’ ভাবেন ট্রাম্প

বিদেশ ডেস্ক
২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৬আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৫২

অভিষেক বক্তৃতায় ট্রাম্প ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ দায়িত্ব গ্রহণও ছিলো নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর মতোই। যা ট্রাম্প শুরু করেছিলেন দাম্ভিক সেলসম্যানশিপ ও প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নগ্নভাবে অবজ্ঞা করার মধ্য দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প নিজ দেশ ও বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিলেন। আর তা হলো: তিনি রাষ্ট্র চালাবেন তার পরিকল্পনা মতোই। এমনকি নিজ দল রিপাবলিকানদের সঙ্গেও নিজেকে এক কাতারে নামিয়ে আনতে ও তার বার্তা মার্কিন নাগরিকদের কাছে পৌঁছাতেও নারাজ ট্রাম্প।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প যেসব আচরণ করেছেন তা যে হোয়াইট হাউসে গিয়েও করবেন না, এমন কোনও ইঙ্গিত দেননি। যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বিভক্তির নির্বাচনে যেসব মার্কিনি তাকে ভোট দেননি তাদের জন্য কোনও প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেননি ট্রাম্প।

সাবেক এ রিয়েলিটি শোর টিভি তারকা ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাস্তবতাকে নিজের মতো ব্যাখ্যা করছেন। তা হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধ, অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদ ও বৈষম্যমূলক বাণিজ্য চুক্তির করাল গ্রাসে বন্দি।

নিজেকে সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেন, আমেরিকানদের হত্যাকাণ্ড এখনই বন্ধ করতে হবে, এখনই বন্ধ করতে হবে।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের যে চিত্র আকঁছেন জাতির সামনে তা হলো, দেশের অর্থনীতি সুসংহত অবস্থানে রয়েছে, অপরাধ কমে গেছে এবং জাতি নিশ্চিত ও নিরাপদ আছে।

নিজের তুলে ধরা সমস্যাগুলোর প্রতি জনগণের সমর্থন পাওয়ার পর নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি ও তার আন্দোলন-ই একমাত্র সমাধান। ওই সময় ট্রাম্প কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা তার শাসনকার্যের অংশ হবেন। আর তার প্রবলবিরোধিতাকারী ডেমোক্র্যাটদেরদেরও যে কোনও ভূমিকা থাকবে সে কথাও বলেননি।

ট্রাম্প পুরো নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন মার্কিন রাজনীতিতে একজন বহিরাগত হিসেবে। পুরো প্রচারণার সময় তিনি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট পার্টির বিভিন্ন সমালোচনা করে বেড়িয়েছেন। ক্যাপিটলের দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেওয়া বক্তব্যেও ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন তিনি বহিরাগতই থাকবেন। ক্ষমতা গ্রহণ করলেও তিনি যুদ্ধের ময়দান ছাড়বেন না, সেখানে তার এক পা থাকবেই।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠা বিষয় রাজনীতিকদের সমালোচনা অব্যাহত রেখে ট্রাম্প বলেছেন, জনগণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে রাজনীতিকরা নিজেদের বিত্ত-বৈভব গড়ে তুলেছেন।

যদিও শপথ গ্রহণের মতো অনুষ্ঠান, যেখানে তিনি আরও বেশি উদ্যম, জনপ্রিয় ঘোষণা দিতে পারতেন তা এড়িয়ে গেছেন। ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যের কিছু অংশ-

‘রাজনীতিকরা বৈত্ত-বৈভব গড়েছেন কিন্তু কর্মসংস্থান কমেছে, কারখানা বন্ধ হয়েছে’, ‘এস্টাব্লিশমেন্ট নিজেকে রক্ষা করছে, কিন্তু আমাদের দেশের নাগরিকদের রক্ষা করেনি’, ‘আমরা ক্ষমতা ওয়াশিংটন ডিসিতে সরিয়ে নিচ্ছি এবং তা আপনাদের, আমেরিকান মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছি’।

জনমত জরিপের ফল অনুসারে, যেসব আমেরিকান ট্রাম্পকে সমর্থন করেননি বা এখনও করছেন না তাদের সমর্থন আদায়ের জন্য ট্রাম্প তার ভাষণে কোনও সময় নষ্ট করেননি।  বিপরীতে ট্রাম্প সরাসরি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্য করেই ভাষণ দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেছেন, আজ আমরা এখানে নতুন ডিক্রি জারির প্রস্তুতি নিচ্ছি, যা শোনা যাবে সবগুলো শহরে, সব বিদেশি দেশের রাজধানীতে এবং ক্ষমতার সবকেন্দ্রে। আজ থেকে আগামী দিনগুলোতে আমাদের ভূমি পরিচালিত হবে নতুন লক্ষ্যে। এই মুহূর্ত থেকে, এই নতুন লক্ষ্য হবে সবার আগে আমেরিকা।

অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি, কঠোর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীতা যে সুর ট্রাম্পের বক্তব্যে ছিল তাতে হয়ত ঐতিহ্যবাহী রিপাবলিকানদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই।

একই সময়ে ট্রাম্প এমনিতেই রিপাবলিকানদের আরও অস্বস্থিতে ফেলেছেন রক্ষণশীলদের নিজের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে। এছাড়া দ্রুত নির্বাহী আদেশ দিয়ে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কিছু প্রগতিশীল নীতি বাদ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে ট্রাম্পের।

আইডাহো থেকে আসা ৫২ বছরের আন্দ্রেয়া ফ্রেডলি বিপুল মানুষের সঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্য শুনছিলেন। তিনি ট্রাম্পের ভাষণকে পছন্দ করেছেন। তার মতে, এটা ছিল একটি শক্ত চপোটাঘাত। এছাড়া ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেন তিনি।

নর্থ ক্যারোলিনার মোর্সভাইল থেকে আসা ৫৬  বেলিন্ডা বি মনে করেন, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াইয়ে ট্রাম্পের জয়ী হওয়া  এবং মার্কিন রাজনীতিতে বহিরাগতই থাকা উচিত। বেলিন্ডা বলেন, ‘দেশ এখন মানুষের, রাজনীতিকদের নয়’।

শপথ গ্রহণে ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের মিল রয়েছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। বৈশ্বিক শক্তির বাণিজ্য ও বিশ্বায়নে ভুলে যাওয়া আমেরিকানরা পেছনে পড়ে আছে- ট্রাম্পের এ কথার সঙ্গে রুজভেল্টের মিল আছে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া রিচার্ড নিক্সনের নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ ও রোনাল্ড রিগ্যানের জাতির মহাত্ম পুনরুদ্ধারের কথাও ট্রাম্পের ভাষণে এসেছে।

তবে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ জুলিয়ান জেলিজার মনে করেন, অতীতের তুলনায় ট্রাম্পের ভাষণে আরও বেশি শারীরিক ও উচ্চারণগত ক্ষোভ ছিল।

এছাড়া ট্রাম্পের বক্তব্যে ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের বক্তব্যের প্রতিফলন রয়েছে। ওই সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট  অর্থনৈতিক মন্দা ও কর্মহীন শিল্পের কথা বলেছিলেন।  কিন্তু রিগ্যান একটি স্থবির অর্থনীতি ও সাড়ে সাত শতাংশ বেকারত্ব রেখে গিয়েছিলেন। বিপরীতে সদ্য বিদায়ী ওবামার শাসনামলে গত ৮০ মাসে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশে।

ট্রাম্প যে আমেরিকার ছবি আঁকছেন তার সঙ্গে সব আমেরিকানরা হয়ত একমত না বলে মনে করেন ভান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাসবিদ থমাস অ্যালান সোয়র্তজ। তিনি আরও মনে করেন, জাতীয় সংকট ও অস্বীকৃতির ফাঁদে পড়েছেন ট্রাম্প।

নির্বাচনে ট্রাম্প ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন কিন্তু তিনি পপুলার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের কাছে হেরে গেছেন প্রায় ৩০ লাখ ভোটের ব্যবধানে। ফলে পুরো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করাটা অনেক অনেক বেশি কঠিন। সূত্র: রয়টার্স।

আরও পড়ুন:

 

 

/এএ/

সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক