X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের সামরিক খাত পুনর্গঠনের আদেশে কংগ্রেস কি অনুমোদন দেবে?

ফাহমিদা উর্ণি
৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৫৬আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:০৯
image

মার্কিন প্রতিরক্ষা খাত-১ সেই প্রচারণার সময় থেকেই সামরিক খাত পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জোর তৎপরতা শুরু করেছে তার প্রশাসন। আনুষ্ঠানিক তৎপরতার অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) প্রথমবারের মতো প্রতিরক্ষা সদর দফতর পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সামরিক খাত পুনর্গঠন সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম ওই আদেশের খসড়াটি হাতে পায়। তারা জানায়, সামরিক বাজেট, আইএসসহ অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবেলা এবং নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাব্যতা যাচাই করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে আদেশে।

কিন্তু কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এইসব নির্বাহী আদেশ আইনে পরিণত হবে না। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, সামরিক খাতকে আরও শক্তিশালী করতে অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব পাশ করতে কংগ্রেসের আপত্তি করার কথা নয়। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, পথটা খুব সহজ হবে না ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য। এক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাধা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে তারা। তবে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম শিকাগো ট্রিবিউন বলছে, যাকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ অন্তর্দ্বন্দ্বের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিনি ট্রাম্পের পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাতে তৈরি আছেন। সবমিলে সামরিক খাত পুনর্গঠনের পরিকল্পনা সফলতা পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট অভিবাসী সীমিতকরণের ওই নির্বাহী আদেশের খসড়া হাতে পায় শুক্রবার। খসড়ায় আইএসসহ অন্যান্য ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধের বাস্তবতা পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোনও দেশের নামোল্লেখ না করে ‘নিকটতম শত্রু’র সঙ্গে যুদ্ধের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে বলা হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস ম্যাটিসকে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা খাত-2
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সামরিক বাহিনীর জন্য কঠোর ব্যয়সীমা রয়েছে যা কংগ্রেস নির্ধারণ করে দেয়। নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সামরিক বাহিনীতে সেনা সংখ্যা বাড়াবেন এবং আরও বেশি যুদ্ধজাহাজ ও আধুনিকীকৃত পারমাণবিক অস্ত্র যুক্ত করবেন। সে সময় সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার করা এবং নৌবাহিনীর জাহাজ সংখ্যা ৩৫০টি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।

প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশে ৩ মাসের মধ্যে ‘জরুরি সামরিক প্রস্তুতি সংক্রান্ত বাজেট সশোধনী’ নিয়ে মূল্যায়ন হাজির করতে বলা হয়েছে। ওই বাজেটের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের বাকি দিনগুলোর সামরিক ব্যয় সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি ওই মূল্যায়নকে উপজীব্য করে ২০১৮ সালের সামরিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী সামরিক বাহিনীকে পুনর্গঠন এবং ওই বাজেট পরিকল্পনায় শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনায় পেন্টাগনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব থাকবে। তবে সেই সমর্থন পাওয়াটা ট্রাম্পের জন্য কঠিন হবে না।

পেন্টাগনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলবিষয়ক শিক্ষক এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জোসেফ কলিন্স বলেন, ‘এক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে, কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীকে উন্নত করতে কংগ্রেস বাধা দেবে না। পেন্টাগনের চাহিদার তালিকায় রয়েছে এমন অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই কংগ্রেস নিঃসন্দেহে সমর্থন দেবে’।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরে এ নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। এছাড়া কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি নিজ দলের যেসব সদস্য সরকারি ব্যয় কমানোর পক্ষপাতী তাদেরও বিরোধিতার মুখে পড়তে পারেন ট্রাম্প। তারপরও সামরিক ব্যয় বাড়ানোর আদেশ কংগ্রেসে পাশ হবে বলেই এখনও পর্যন্ত মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা যে সফল হবে, সে ব্যাপারে পুরোপুরিই নিশ্চিত প্রভাবশালী সিনেটর জন ম্যাককেইন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, নিশ্চিতভাবেই সামরিক ব্যয় বাড়াতে যাচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লেইন ট্রাম্পের পরিকল্পনা বিশ্বস্ততার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলেও মনে করেন ম্যাককেইন। তিনি জানান, দুজনের প্রতি ট্রাম্পের প্রবল আস্থা রয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা খাত-৩
তবে উদ্বেগ রয়েছে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট-এর শীর্ষ ব্যক্তি মুলভ্যানিকে নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিসকে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেট-এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো আশঙ্কা করছে, অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট (ওএমবি)-এর পরিচালক হিসেবে ট্রাম্প যাকে বেছে নিয়েছেন সেই মিক মুলভ্যানি ট্রাম্পের এই অভিবাসন নীতির বিরোধিতা করতে পারেন। বাজেটের কোনও খাত থেকে খরচ না কমিয়ে, স্বতন্ত্রভাবে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর বিপক্ষে দাঁড়াতে পারেন তিনি। কেননা তিনি বরাবরই সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির বিপক্ষে। তবে (ওএমবি)-এর পরিচালক মুলভ্যানি যে ট্রাম্পের সামরিক পরিকল্পনার পক্ষেই অবস্থান নেবেন, রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন-এর বরাত দিয়ে শিকাগো ট্রিবিউনের খবরে তা অনেকটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ম্যাককেইনকে উদ্ধৃত করে  শিকাগো ট্রিবিউনের খবরে বলা হয় মঙ্গলবার ‘অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট’-এর প্রধান ব্যক্তি হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয় মুলভ্যানির। সে সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি সামরিক বাহিনীকে বিস্তৃত করার বিরোধী কিনা। কেননা, মুলভ্যানি অতীতে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন। জবাবে মুলভ্যানি বলেন, প্রতিরক্ষা খরচ বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি ট্রাম্পের সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু পেন্টাগনের খরচ বাড়াতে হলে অন্য খাতে খরচ কমিয়ে ভারসাম্য আনতে হবে বলে মত দেন তিনি।

ট্রাম্পের তৎপরতাতেও মুলভ্যানির কথার সঙ্গতি মিলেছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যয়বহুল প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমানোর জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনকে চাপ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার স্বাক্ষরিত শনিবারের নির্বাহী আদেশে ম্যাটিসকে ডানফোর্ড, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালক এবং মন্ত্রিসভার অন্য কর্মকতাদের সঙ্গে একসঙ্গে পরিকল্পনাটি প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।

/বিএ/

সম্পর্কিত
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
সর্বশেষ খবর
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
দক্ষিণখানে ভবনের চার তলা থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট হলেন ১৯ জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী