X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও দেশ

ললিত কে ঝা, হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি
৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:০৩আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ০০:০৭

নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সিরীয় শরণার্থীসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির নির্বাহী আদেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের পর দেশটির ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে নেমেছে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুসারে, শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে আগামী ৯০ দিন ইরাক, সিরিয়া, সুদান, ইরান, সোমালিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেন থেকে মার্কিন নাগরিক ছাড়া কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ নিষেধাজ্ঞা ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে জারি করা হয়েছে। শীর্ষ হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ৯০ দিনের দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের প্রবেশ আটকানোর জন্য বর্তমান আইন ও বিধি পর্যালোচনা করা হবে। যেসব দেশের মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বা শরণার্থী সুবিধার জন্য আবেদন করবেন, তাদের নিজ দেশের সঙ্গে মার্কিন সরকারের তথ্য বিনিময় এ পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকবে।

হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রাইন্স প্রিবাস জানান, যে ছয়টি দেশকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখা হয়েছে, তাদের নির্দিষ্টভাবে উদ্বেগজনক বলে চিহ্নিত করেছিল সদ্য বিদায়ী ওবামা প্রশাসন। এটা মাত্র শুরু। এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

সিবিএস নিউজকে রবিবার এক সাক্ষাতকারে প্রিবাস বলেন, ‘আপনারা পাকিস্তান ও অন্য দেশগুলোর কথা বলতে পারেন, যে দেশগুলোর সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালিয়েছে। ফলে আমাদের পদক্ষেপ হয়তো আরও বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হচ্ছে, এসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা মানুষদের আরও  কঠোর যাচাই ও নিরীক্ষার মধ্যে নিয়ে আসা।’

ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহের শেষদিন  (শনিবার)  ডেমোক্র্যাটিক  দলের নেতা,  মানবাধিকার ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। রাজপথ ও বিমানবন্দরগুলো ছিল বিক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশকে ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিমানবন্দরে আটক ব্যক্তিদের সমর্থনে তারা এ বিক্ষোভ করেন।

রবিবার একাধিক বিবৃতি, সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া বক্তব্য ও টুইটে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এটা ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ নয়। ট্রাম্প বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা মুসলিম নিষেধাজ্ঞা নয়, সংবাদমাধ্যম এটাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। এটা ধর্মের বিষয় নয়, এটা হচ্ছে সন্ত্রাসের হাত থেকে আমাদের দেশকে সুরক্ষিত করা। বিশ্বের ৪০টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে, যেসব দেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েনি।’

এই ৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিকদের কঠোর যাচাই-প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে। অবশ্য বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামীদেরও এই কঠোরতা মধ্যে পড়তে হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘৯০ দিন পর আমরা পর্যালোচনার পর সবচেয়ে নিরাপদ নীতি গ্রহণ করতে পারব। এরপর সব দেশের নাগরিককে পুনরায় ভিসা প্রদান শুরু হবে।’

এদিকে, সোমবার শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক নেতারা অভিবাসন ও শরণার্থীদের বিষয়ে নির্বাহী আদেশটি প্রত্যাহারের জন্য ট্রাম্পের কাছে দাবি জানিয়েছেন। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ (হাউস)-এর ডেমোক্র্যাটিক নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘হাউসের ডেমোক্র্যাটরা আমাদের সংবিধান রক্ষার কাজ করে যাবে। সন্ত্রাসীদের পরাজিত করতে যথাযথ ও কঠোর পদক্ষেপ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানাবে।’

মার্কিন সিনেটের ডেমোক্র্যাটিক নেতা চার্লস শুমার বলেছেন, ‘নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে আরও অনিরাপদ ও অরক্ষিত করেছে। পুরো বিশ্বকে আমাদের বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। আজ  ট্রাম্পের এ আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শরণার্থীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি। আরও অনেক কিছু করতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবশ্যই উচিত এই ভয়াবহ নির্বাহী আদেশ প্রত্যাহার করা।’

শুমার দাবি করেন, যেসব শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তারা যেন তাদের সমর্থক ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা না করে ‘স্বেচ্ছায়’ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নথিতে  স্বাক্ষর না করেন।

উল্লেখ্য, তিন ফেডারেল বিচারক ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশের আংশিক বিধান স্থগিত করেছেন।

ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সিনেটর কামালা হ্যারিস বলেন, ‘এটা কার্যত একটি মুসলিম নিষেধাজ্ঞা। যা আমাদের নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হবে এবং আমাদের আমেরিকান মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করবে।’  ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে হ্যারিস একটি অনলাইন পিটিশন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।

সোমবার কংগ্রেসের শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক নেতারা এক লিখিত চিঠি দিয়েছেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সেক্রেটারি জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জন কেলির কাছে। চিঠিতে সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ জারির ৪৮ ঘণ্টা পর এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ‘জাতিকে রক্ষায় বিদেশি সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া আমাদের জাতিগত সহিষ্ণুতা, একটি ভরসার জায়গা এবং বিশ্বজুড়ে মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে গর্বকে ভূলুণ্ঠিত করেছে’। তাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত এই আদেশ প্রত্যাহার করা।”

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার জন কনিয়ার্স, হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার এলিয়ট এঙ্গেল, হাউস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার বেনি জি. থম্পসন এবং হাউস জুডিশিয়ারির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার সিকিউরিটি সাবকমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার জো লোফগ্রেন।

/এএ/এএআর/

সম্পর্কিত
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
ন্যাটোর অংশীদার হতে আগ্রহী আর্জেন্টিনা
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া