X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুসলিম নিষেধাজ্ঞার শুনানি: প্রশ্নবাণে জর্জরিত উভয় পক্ষের আইনজীবীরা

বিদেশ ডেস্ক
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:৩৬আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:১৬
image

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সাত মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আদালতে যুক্তি-তর্ক চলার সময় তুমুল হট্টগোল হয়। নির্বাহী আদেশের পক্ষে দাঁড়ানো বিচার বিভাগ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পক্ষে দাঁড়ানো ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের আইনজীবীদেরকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন তিন ফেডারেল বিচারপতি। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক যুক্তি-তর্ক চলার সময় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়।  
সাত মুসলিম দেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে তা তুলে নেওয়া হবে কি হবে না তা নির্ধারণে ফেডারেল আদালতে এ শুনানি চলছে। মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে মার্কিন বিচার বিভাগ। সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক নাইনথ্ ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে ১৫ পৃষ্ঠার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নয় দাবি করে এটি ‘প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার আইনসম্মত ব্যবহার’ বলে দাবি করা হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের আবেদন জানানো হয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শুরু থেকেই আইনজীবীদের একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন বিচারকরা। শুরুতেই প্রশ্নের মুখে পড়েন বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের বিশেষ উপদেষ্টা অগাস্ট ফ্লেন্টজে। তিনি অভিযোগ করে বলেন ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারপতি জেমস রবার্ট অযথার্থভাবে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ স্থগিত করে নিজেকে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুর সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি প্রচলিত জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিবেচনা ছিল কিন্তু আদালতের আদেশে তা বদলে গেছে।’

তখনই বিচারপতি মাইকেল ফ্রাইডল্যান্ডের প্রশ্নের মুখে পড়েন ফ্লেন্টজে। ফ্রাইডল্যান্ড জানতে চান, এ দেশগুলো যে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত সে ব্যাপারে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ আছে কিনা।

ফ্লেন্টজে বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তায় ঝুঁকির মাত্রা নিয়ে প্রেসিডেন্টের বিবেচনা এবং আমরা যে ঝুঁকির মাত্রার কথা বলছি তা ড্রিস্ট্রিক্ট কোর্ট পাত্তা দেয়নি।’

তখনই আবার প্রশ্নের মুখে পড়েন ফ্লেন্টজে। বিচারপতি ফ্রাইল্যান্ড তার কাছে প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কি আপনি দাবি করছেন যে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তটি আদালতের পর্যালোচনার দরকার ছিল না?’

কিছুক্ষণ থেমে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন ফ্লেন্টজে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিষেধাজ্ঞা জারি করা ৭ দেশ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, এমন অভিযোগের পক্ষে ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে তথ্যপ্রমাণ আছে কিনা, তাও জানতে চেয়েছে আদালত।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
এদিকে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনকারী আইনজীবীকে একইরকমের কঠোর প্রশ্নের মুখে ফেলেন বিচারপতি রিচার্ড ক্লিফটন। মিনেসোটা ও ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যকে প্রতিনিধিত্বকারী ওই আইনজীবীর কাছে ক্লিফটন জানতে চান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে যদি বিশ্বের মাত্র ১৫ শতাংশ মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে একে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক বলা যাবে কিনা।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) এক নির্বাহী আদেশে তিন মাসের জন্য ৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে স্থগিতাদেশ দেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলা হয়, এ সাত দেশের নাগরিকরা তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলো হল-ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, সুদান, সোমালিয়া। এই আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মুসলিমদের বদলে খ্রিস্টান ও সংখ্যালঘুদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়। 

নির্বাহী আদেশের প্রথম দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয় মুসলমানরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সংস্কৃতি কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান। নোবেল বিজয়ী শিক্ষা অধিকারকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ট্রাম্পের এ নিষেধাজ্ঞাকে মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেয় সিয়াটলের আদালত। ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞায় সিয়াটলের সেই আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। শনিবার শেষ রাতের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে তা পুনর্বহালের আবেদন জানায়। আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।

খারিজের আদেশে আদালত জানিয়েছে, চূড়ান্ত শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। এ সপ্তাহান্তেই চূড়ান্ত শুনানির কথা রয়েছে।

/এফইউ/

সম্পর্কিত
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী