X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

বিদেশ ডেস্ক
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:১৮আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩০
image

 

মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের মিসরীয় রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকে একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। ১৯২৮ সালে জন্ম নেওয়া মুসলিম ব্রাদারহুডের লাখ লাখ সমর্থক রয়েছে বিশ্বজুড়ে।

বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের খবরে ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের পরিকল্পনার খবর জানানো হয়। ওই দুই সংবাদমাধ্যম জানায়, এ ব্যাপারে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন; এমন প্রাক্তন ও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে থেকে ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরেছেন তারা। সংক্ষিপ্ত ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সিআইএ। হোয়াইট হাউসের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 
রয়টার্স এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর খবরে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং মুখ্য পরিকল্পনা প্রণয়নকারী স্টিভ ব্যানন মনে করেন, 'আধুনিক জঙ্গিবাদের ভিত্তিভূমি' আখ্যা দিয়েছেন। নিষিদ্ধ করতে বলেছেন সংগঠনটিকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর খবরে বলা হয়েছে, ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব বিচার করে কেন্দ্রিয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ  একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। পলিটিকো সেই প্রতিবেদনটির অনুলিপি হাতে পেয়েছে।

ব্রাদারহুডের পথ চলা শুরু ১৯২৮ সালের মার্চ মাসে। সুয়েজ খাল তীরবর্তী শহর ইসমাইলিয়ায় তরুণ হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে সংগঠনটি গড়ে ওঠে। শুরুতে 'ইখওয়ানুল মুসলিমিন' নামে এর যাত্রা শুরু হয়। সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে মিসরের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ ফাহমি আন-নুকরাশি মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিলুপ্ত করার নির্দেশ জারি করেন। এর পরের বছরের ডিসেম্বরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্না সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন।

১৯৫৪ সালে আরব জাতীয়তাবাদী নেতা গামাল আবদুন-নাসেরের বিপ্লবের প্রতি মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থন জানায়। কিন্তু মতপার্থক্য ও অবিশ্বাসের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে খুব দ্রুতই ভাঙন সৃষ্টি হয়। ফলে প্রেসিডেন্ট নাসেরও ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান চালান। গামাল আবদুন নাসের এক হত্যাপ্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর দলটিকে আবারো নিষিদ্ধ করা হয় মিসরে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নাসেরের শাসনামলে হাজার হাজার ব্রাদারহুড নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়।

আনোয়ার সাদাত ১৯৭১ সালে মিসরের ক্ষমতায় এলে তার সরকারের সঙ্গেও তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে ব্রাদারহুডের। পরবর্তী সময়ে আনোয়ার সাদাত মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে দলটির ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ১৯৭৯ সালে আনোয়ার সাদাত ইসরাইলের সঙ্গে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করলে তার ওপর ক্ষুব্ধ হয় ব্রাদারহুড। তাই ১৯৮১ সালে এক সামরিক কুচকাওয়াজ চলার সময় টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই তরুণ সেনা কর্মকর্তা খালিদ ইস্তাম্বুলি প্রেসিডেন্ট সাদাতকে গুলি করে হত্যা করেন। খালিদ ইস্তাম্বুলি মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ব্রাদারহুড সরকারের স্বীকৃতি পায় ১৯৮৪ সালে এসে। প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক তখন এটিকে একটি ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান। তার পতনের পরই ব্রাদারহুড রাজনৈতিক স্বীকৃতি পায়। ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করলে এর বিরোধিতা করে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সংগঠনটি। আর আস্তে আস্তে মিসরের রাজনৈতিক অঙ্গণে প্রপ্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এক পর্যায়ে দেশটির সবচেয়ে পুরাতন এবং বড় বিরোধী দলে পরিণত হয় ব্রাদারহুড। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রাণের এই সংগঠন মিসরের গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থন আদায় করে নিতে সমর্থ হয়। বিভিন্ন দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই নানা ধরনের সংগঠন পরিচালনা বাড়তে থাকে ব্রাদারহুডের নামে।

এতেদাকিছুর পরও ২০১০ সাল পর্যন্ত মিসরে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির কারণে অন্য ইসলামিক দলের সঙ্গে ব্রাদারহুডও নিষিদ্ধই ছিল। তবে ২০১২ সালের ডিসেম্বরেই তারা সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আধিপত্য বিস্তার করে। ২০১৩ সালে ব্রাদারহুড সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দায়িত্ব গ্রহণের পর মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ব্যাপক দমন-পীড়ন ও ধরপাকড় শুরু করেন। 

/বিএ/

সম্পর্কিত
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি