X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়া উপকূলে ৭৪ শরণার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার

বিদেশ ডেস্ক
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:৩৩আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:৪২

লিবিয়া উপকূলে ৭৪ শরণার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে ভাগ্যবিড়ম্বিত ৭৪ জন মানুষের মৃতদেহের সন্ধান মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ব্যক্তিরা শরণার্থী হিসেবে সমুদ্রপথে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। মঙ্গলবার লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট থেকে এসব মৃতদেহের সন্ধান পাওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। সোমবার সকালে লিবিয়ার উপকূলীয় শহর জাওয়িয়া’য় এসব মৃতদেহের সন্ধান মিলে। ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় এসব মৃতদেহ উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা। সংলগ্ন এলাকায় আরও মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট-এর মুখপাত্র মোহাম্মদ আল মিসরাতি। বার্তা সংস্থা এপি’কে তিনি বলেন, ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকায় পরিত্যাক্তপ্রায় রাবারের তৈরি একটি নৌকা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে আরও শরণার্থীরা ছিলেন। এ ধরনের নৌকায় সাধারণত ১২০ জনের মতো আরোহী থাকেন।

টুইটারে এ ঘটনার কিছু ছবি প্রকাশ করেছে লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট। এসব ছবিতে সৈকতে সাদা-কালো ব্যাগে মোড়ানো শরণার্থীদের মৃতদেহের সারি দেখা গেছে। লিবিয়া উপকূলে শরণার্থীদের মৃতদেহ উদ্ধারে এটাই সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে শরণার্থীদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আবহাওয়ার উন্নতির ফলে সম্প্রতি বিপজ্জনকভাবে নৌকায় করে সমুদ্রপথে ইউরোপে যাত্রা করার হার আবার বেড়ে গেছে। বাড়ছে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর সংখ্যাও।

৩১ মে ২০১৬ তারিখে সাগরে শরণার্থীদের সলিল সমাধি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। সংস্থাটির হিসাবে, চলতি বছর ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে আড়াই হাজারের বেশি মানুষের সলিল সমাধি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সংখ্যাটি অনেক বেশি। ২০১৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ১ হাজার ৮৫৫ জন শরণার্থী মারা যায়। ২০১৪ সালের প্রথম পাঁচ মাসে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৭।

লিবিয়া উপকূলে ৭৪ শরণার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার

২০১৬ সালের প্রথম পাঁচ মাসে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছে ২ লাখের বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী। ২০১৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ৯২ হাজার শরণার্থী সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করেছিল।

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিন্ডলার বলেন, তুরস্ক থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে যাওয়া যায়। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়া যায়। এর মধ্যে লিবিয়া থেকে ইতালি পথে সাগরযাত্রা বেশি দীর্ঘ। এই পথেই মারা যান হাজারো শরণার্থী।

৩০ মে ২০১৬ তারিখে প্রকাশিত হওয়া আরেকটি শরণার্থী শিশুর মরদেহের মর্মস্পর্শী ছবি আলোড়ন তুলেছে। ভূমধ্যসাগর থেকে তুলে আনা মৃত শিশুর ছবিটি মনে করিয়ে দিচ্ছে তুরস্কের সৈকতে পড়ে থাকা সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির কথা। শিশুটির ছবি প্রকাশ করা জার্মানির মানবিক সহায়তা সংগঠন সি-ওয়াচ বলেছে, শরণার্থীদের প্রতি ইউরোপীয় নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে—এমন আশায় তা প্রকাশ করা হয়েছে। নাম না জানা শিশুটি ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় মারা গিয়েছিল।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০১৫ সালে অধিকতর ভালো জীবনের সন্ধানে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচ হাজারের অধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। মানব পাচারকারীদের শিকারে পরিণত হয়েছেন ১০ সহস্রাধিক মানুষ। আর বিদেশি বিদ্বেষী নীতি এবং বিদ্যমান ভয়-আতঙ্কে বলির পাঁঠায় পরিণত হয়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়াজুড়ে জীবন বাঁচাতে আর মাথা গোঁজার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর নানা দিকে ছোটাছুটির ঘটনা এর আগে আর ঘটেনি। ২০১৪ সালে যুদ্ধ-দাঙ্গাপীড়িত বা অভাবের তাড়নায় প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ নিজের জন্মভূমি আর ঘরবসত ছেড়ে নানা দেশে পাড়ি দিয়েছিল। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের একটা বড় অংশই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার নাগরিক। যুদ্ধাবস্থা থেকে বাঁচতে দলে দলে ভিনদেশের পথে ছুটছেন দেশটির বাসিন্দারা।

ইউরোপের অভিবাসী এবং শরণার্থী–বিষয়ক সংগঠনগুলো মূল সমস্যার পাঁচটি উপাদান চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে—১. সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে যাওয়া, ২. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে শিগগিরই সমস্যা সমাধানের আশা না থাকা, ৩. প্রতিবেশী দেশগুলোর শরণার্থীদের সমস্যা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে অনীহা, ৪. তুরস্কে বসবাসরত সিরিয়ার শরণার্থীদের যেকোনো সময় ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা, ৫. সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিভক্ত বলকান রাষ্ট্র সার্বিয়া, কসোভো মন্টেনেগ্রো ও মেসিডোনিয়ার মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়।

২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে তুরস্কের উপকূলে সন্ধান মেলে আয়লান নামের এক সিরীয় শিশুর মৃতদেহ। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নিথর পড়ে থাকা শিশু আয়লান কুর্দির নাম শুনলে এখনও স্তব্ধ হয়ে যান অনেকে। ছোট নৌকায় থাকা আয়লান ও তার ভাই ভেসে যায় তুরস্কের সৈকতে। তাদের মা ভেসে যান দূরের অন্য এক সৈকতে। এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে সাগরে ভাসছেন হাজার হাজার আয়লান কুর্দি। এই শরণার্থীদের সলিল সমাধি যেন থামছেই না। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, আল জাজিরা।

/এমপি/

সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা