সৌদি আরবে গত সপ্তাহে একটি কমিক শো ও কিছুদিন আগে একটি পপ কনসার্ট আয়োজন করায় এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা। তাদেরকে সমর্থন জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরাও। সবাই মিলে কড়া ভাষায় এসব আয়োজনের তিরষ্কার করেছেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেদ্দায় অনুষ্ঠিত সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথম ‘কমিক কন’-এ অংশ নেয় হাজারও সৌদি। এর মধ্যে নারীরাও ছিলেন। দেশটিতে সচরাচর নারী-পুরুষ মিলিত হয়ে জনসমক্ষে কোনও অনুষ্ঠানে অংশ নেয় না। তাদের অনেকে কমিকসের বিভিন্ন চরিত্রের আদলে অদ্ভুত সব পোশাক পরা ছাড়াও মুখে রং মেখে আঁকিবুকি করেন। এর কিছুদিন আগে জেদ্দাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি কনসার্ট। সৌদিতে এক দশক পর গান-বাজনার এমন আয়োজন দেখা গেলো।
এসব অনুষ্ঠানের আয়োজক সৌদির জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথোরিটি (জিইএ)। তবে এ বছর যে কোনও উৎসব, কমেডি শো ও কনসার্ট আয়োজনের বেলায় রাষ্ট্রের কঠোর সামাজিক নিয়মাবলী মেনে চলতে বলা হয়েছে তাদেরকে। এ সপ্তাহে তারা জানিয়েছেন, সৌদি সুপারস্টার মোহাম্মদ আবদো আগামী মাসে আরও রক্ষণশীল শহর রিয়াদে সংগীত পরিবেশন করবেন।
সৌদি নাগরিকদের প্রতি এ ধরনের অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়ে মসজিদে নববীর ইমাম হুসেন আল-শেখ টুইটারে বলেছেন, ‘ইসলামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এন্টারটেইনমেন্ট অথোরিটি জেদ্দায় এমন অনুষ্ঠান করায় আমরা হতবাক। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব আল্লাহর কথা স্মরণ করা।’
মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের সাবেক ইমাম শেখ আদেল আল-কালবানির মন্তব্য, সরকারের একটি মহল মানুষকে বিপথে নিয়ে যেতে বিনোদনের প্রচারণা চালাতে উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘বিনোদনে ডুবে যাওয়া নয়, দুঃসময়ে আল্লাহকে স্মরণ করাই মানুষের কর্তব্য।’
এসব নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি জিইএ। এ ছাড়া মুখ খোলেনি কমিক কনের আয়োজক রিয়াদের টাইম এন্টারটেইনমেন্ট। তবে সৌদির সংবাদ সংস্থা এসপিএ’র কাছে দেওয়া বক্তব্যে কমিক কন আয়োজকদের একজন দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও ঐতিহ্য বজায় রেখে বিনোদনমূলক কার্যক্রমগুলোতে এগুলোকে অগ্রাধিকার দেবো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যে কেউ পরামর্শ দিতে পারেন আমাদের।’
সৌদিতে চলচ্চিত্র ও উন্মুক্ত কনসার্ট নিষিদ্ধ ছিল। তবে গত বছর ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’ লক্ষ্যের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে চাঙ্গা করার প্রতিশ্রুতিতে কমিকস ও কনসার্ট করেছে জিইএ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনোদন অঙ্গনকে তরান্বিত করতে চায় সৌদি সরকার। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তেলের ওপর নির্ভরতা কমানোই তাদের লক্ষ্য।
স্বল্প পরিসরের এসব অনুষ্ঠান ও উৎসবের টিকিট ছাড়তে না ছাড়তেই ফুরিয়ে যায়। সৌদি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এসব আয়োজন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সৌদি বাদশার কাছে এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে বৈধতার প্রশ্ন ও জনসমর্থনের প্রস্তাব রাখতে চান আলেমরা। যদিও সরকারের বেশিরভাগ বিষয়ের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বাদশার ওপর আস্থা আছে তাদের। শেখ ও কালবানি উভয়ে প্রখ্যাত আলেম। কিন্তু সরকারি ফতোয়া বা ইসলামি আইনি মতামত প্রদানের রাষ্ট্রীয় পর্ষদ কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারসের সদস্য নন তারা।
কমিক কন ও জিইএ’র সমালোচনা করে আলেমদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সৌদির ১০ হাজারেরও বেশি নাগরিক। ‘অ্যা নিউ ডিজাস্টার ফর এন্টারটেইনমেন্ট ইন রিয়াদ’ (রিয়াদে বিনোদনের নতুন দুর্যোগ) হ্যাশট্যাগও টুইটারে ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা। অবশ্য তাদের বিরোধীতা করেছেন এমন ১০ হাজার নাগরিক তৈরি করেছে ‘দ্য জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথোরিটি মেকস আস হ্যাপি’ নামের বিপরীত একটি হ্যাশট্যাগ।
এদিকে প্রবীণ আলেমদের বেশিরভাগই বিনোদন অঙ্গন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনায় নিরব। যদিও চলচ্চিত্র, কনসার্ট এবং নারী-পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে গত মাসে সাবধান করে দিয়েছেন সৌদির গ্র্যান্ড মুফতি। এর প্রেক্ষিতে সৌদির কলেজ শিক্ষার্থীরা মনে করে, তাদের দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রক্ষণশীলতাই সবচেয়ে বড় বিষয়। তবে সংস্কৃতি নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না তারা। কারণ যুবসমাজের চোখে এর নানান প্রভাব রয়েছে।
/জেএইচ/