X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থী বন্দিশিবিরে বিচারকদের পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

বিদেশ ডেস্ক
১০ মার্চ ২০১৭, ২০:১৯আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৭, ২১:৩৯

শরণার্থী বন্দিশিবিরে বিচারকদের পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের বিভিন্ন বন্দিশিবিরের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সেখানে বিচারকের পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর আওতায়, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের পক্ষ থেকে এসব বন্দিশিবিরে ৫০ জন বিচারককে পাঠানো হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দুটি সূত্র থেকে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া এ সংক্রান্ত একটি চিঠির কপিও হাতে পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিচারকদের বন্দিশিবিরে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়ার কথাও ভাবছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। সূত্র বলছে, পৃথক দুটি শিফটে বিচারকদের সকাল ৬টা থেকে রাত  ১০টা পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হবে। তবে দুই শিফটের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা সম্পর্কে চিঠিতে কিছু বলা হয়নি।

বর্তমানে শরণার্থী বা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকে নির্বাসন ইস্যুতে আইনি লড়াই করছেন। অনেকে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করছেন। অন্তত নিজেদের মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যেতে চাইছেন তারা। কিন্তু ট্রাম্পের এ প্রস্তাবের লক্ষ্যই হচ্ছে, অভিবাসীদের অধিকাংশ মামলা যেন দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করা যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে মূলত অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রছাড়া করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস।

ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালতগুলোতে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মামলা ঝুলে আছে। তাই এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।

শরণার্থী বন্দিশিবিরে বিচারকদের পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

চলতি মাসেই এক মামলায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর হাতে আটক কয়েক হাজার অভিবাসীদের দিয়ে জোর করে কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে। আটক অভিবাসীদের দৈনিক মাত্র ১ ডলার বা একেবারেই বিনা মজুরিতে কাজ করানো হচ্ছে; যা দেশটির দাসত্ববিরোধী আইনের লঙ্ঘন।

মামলাটি করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ একটি বেসরকারি কারাগার কোম্পানির বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

মামলাটি দায়ের করেছে কলোরাডোভিত্তিক অলাভজনক আইনি প্রতিষ্ঠান টুয়ার্ডস জাস্টিস। এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক নিনা ডিসালভো বলেন, ‘বিষয়টির গুরুত্ব অনেক বিশাল। এর অর্থ হলো সরকারের কাছ থেকে ঠিকাদারী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্দিদের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করছে।’

ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভারপ্রাপ্ত প্রেস সচিব জেনিফার ডি এলিজা বলেন, তিনি মামলা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে পারেন না, কারণ ‘আইসিই এই মামলার বিশেষ কোনও পক্ষ নয়।’

এদিকে, হাফিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকো সীমান্তে মা-শিশুকে আলাদা আটক রাখার ভয় দেখিয়ে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে নির্বাচনি প্রচারণাকালেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

শরণার্থী বন্দিশিবিরে বিচারকদের পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া মা ও শিশুদের আলাদা করা হবে। তাদের বন্দিজীবন কাটাতে হবে পৃথক পৃথক স্থানে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা এখন দেশটির কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে। সরকারের তিনজন কর্মকর্তা বিষয়টি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ণবাদী মানসিকতাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অভিবাসী নারী ও শিশুদের প্রতি এমন আচরণের মাধ্যমেই নিজের কথিত ইমিগ্রেশন পলিটিক্স জারি রাখতে চান ট্রাম্প।

২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের দুজন কর্মকর্তা দেশটির নাগরিকত্ব ও অভিবাসন-আশ্রয় বিষয়ক প্রধান জন লেফারটি’কে এ পরিকল্পনার বিষয়ে ব্রিফ করেন।

প্রস্তাবিত নতুন এ নিয়মের মাধ্যমে মূলত যেসব নারীরা তাদের সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হতে আগ্রহী; তাদের ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। এ প্রস্তাবনার সঙ্গে জড়িত আছেন; এমন কর্মকর্তারাই  বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।

প্রস্তাবিত এ নীতিমালা কার্যকর হলে, নির্বাসনে পাঠানো কিংবা আশ্রয় শুনানির জন্য অপেক্ষমান অবস্থায় লোকজনকে হেফাজতে নিতে পারবে কর্তৃপক্ষ। শিশুদের রাখা হবে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস-এর সুরক্ষামূলক হেফাজতে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এমন কোনও স্বজন কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পান এমন কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের দায়িত্ব নিতে পারবে। তবে এর আগ পর্যন্ত তাদের সরকারি হেফাজতেই থাকতে হবে। শিশুদের দীর্ঘ সময় আটকে না রাখার ব্যাপারে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে।

শরণার্থী বন্দিশিবিরে বিচারকদের পাঠাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

২০১৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন ৫৪ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে শিশু ও তাদের অভিভাবকরাও রয়েছেন। এক বছর আগের তুলনায় গ্রেফতারের এ সংখ্যা দ্বিগুণ।

রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যানদের দাবি, নারীরা বুঝেশুনেই এ বিপজ্জনক যাত্রার ঝুঁকি নেয়। কারণ এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত থাকে যে, দ্রুতই তারা অন্তরীণ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। ভবিষ্যৎ আইনি প্রক্রিয়ায় আরও কয়েক বছর লেগে যাবে।

অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, মধ্য আমেরিকার সহিংস পরিস্থিতি ওই অঞ্চলের মায়েদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে বাধ্য করছে। তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত। সূত্র: রয়টার্স, হাফিংটন পোস্ট।

/এমপি/

সম্পর্কিত
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা