সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিপক্ষে ইরান যুদ্ধ করতে চায় বলে দাবি করলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানইয়াহু। গোলান হাইটসের সীমান্তে ইরানি বাহিনী অবস্থান করাকে কেন্দ্র করে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তেহরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) ও বাসিজ মিলিশিয়া বাহিনীকে সিরিয়ায় নিয়োগ দিয়েছে তারা। এছাড়া হিজবুল্লাহকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
এই মুহূর্তে সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত গোলান হাইটসে অবস্থান করছে আইআরজিসি বাহিনী। ইরানের বাসিজ ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা নাগড়িকে সীমান্তে দেখা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানায়, শিয়া আধাসামরিক বাহিনী ‘গোলান লিবারেশন ব্রিগেড’ নামে একটি বাহিনীও তৈরি করেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের এক মুখপাত্র জানান, হারাকাত হিজবুল্লাহ আল-নুজাবা ইরান সমর্থিত একটি ইরাকি বাহিনী। ‘ইসরায়েলি দখল থেকে গোলান মুক্ত’ করতে চায় তারা। এই মোতায়েনের কারণে ইরান সরকার এখন সিরিয়া যুদ্ধে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসলো। রাশিয়া ও তুর্কি প্রতিনিধিদের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি নিয়েও আলোচনা করেছে ইরান।
বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিরিয়ায় ইরানি বাহিনীর অবস্থানের ব্যাপারে কোনও সমঝোতায় আসবে না তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না সুন্নি ইসলামিক সন্ত্রাসের জায়গায় ইরানের নেতৃত্বে কোনও শিয়া ইসলামিক সন্ত্রাস আসুক।’
আলোচনার পর দুই নেতা প্রকাশ্যেই বলেন ‘ইরান ইসরায়েলকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ এই কথা তারা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে লিখিতও দেন।
নেতানইয়াহু বলেন, ‘আজ আমাদের দেশ আছে, নিজেদের সেনাবাহিনী আছে। আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। তবে আমি বলতে চাই শিয়া সন্ত্রাসের লক্ষ্য শুধু আমরা না বরং এই অঞ্চলসহ পুরো বিশ্ব।’
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইরান ইসারয়েল বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সিরিয়ায় নিজেদের প্রস্তুত করছে।’ পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, সবধরনের ভুল বোঝাবুঝি অবসানের জন্য ইরানি বাহিনীকে সেখান থেকে সরে যেতে হবে।
ক্রেমলিন থেকে পাঠানে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যৌথভাবে কিভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসকে মোকাবেলা করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করেছন নেতানইয়াহু ও পুতিন। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে তারা।’
ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও রাশিয়া ইরান এবং সিরিয়ার মিত্র। আইএস ও বিদ্রোহীদের তাণ্ডব সত্ত্বেও দুই দেশই আসাদ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
ইরানি সরকারের দাবি, আইআরজিসি সিরিয়াতে পরামর্শ দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে। তবে আলেপ্পোতেও এই বাহিনীকে যুদ্ধ করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান অভি দিশার বলেন, ইরান গত বছর বেশ কয়েকবার সিরিয়ার গোলান হাইটসে সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেন নি তিনি।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে কয়েক ডজন বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, তারা ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ বাহিনীর অস্ত্র পাচার ঠেকাতে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় আইআরজিসির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলি আল্লাদাদিও ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন।
তবে এই হামলার অনুমতি দেওয়ার কথা বারবারই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া।
১৯৬৭ সালের ছয়দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সিরিয়ার গোলান মালভূমির একটা বড় অংশের দখল নেয় ইসরায়েল। এরপর ১৯৭৩-৭৪ সালের যুদ্ধে এই মালভূমি পুনর্দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সিরিয়া। পরে ১৯৮১ সালে গোলানকে একতরফাভাবে নিজ ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় ইসরায়েল। কিন্তু এই অন্তর্ভুক্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত প্রায় সাড়ে তিন দশকে গোলান মালভূমিতে ৩০টিরও বেশি অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন করেছে তেল আবিব।
৬ বছর ধরে চলা সিরিয়ার যু্দ্ধ এখনো শেষ হওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। আইএস মোকাবেলায় ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শত শত সেনা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে কোনওরকম ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক শান্তি আলোচনা।
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
/এমএইচ
