X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যেসব অঙ্গরাজ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা

বিদেশ ডেস্ক
১১ মার্চ ২০১৭, ১৯:৪৯আপডেট : ১১ মার্চ ২০১৭, ১৯:৫৫

যেসব অঙ্গরাজ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিজ দেশেই আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আদালতে ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত হয়ে গেলে নতুন করে সংশোধিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। কিন্তু আইনি চ্যালেঞ্জ এড়াতে পারেনি ট্রাম্পের সংশোধিত নিষেধাজ্ঞাও। বরং দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বলছে, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাই ৬ মার্চ ভিন্ন মোড়কে হাজির করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরব অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ছয়টি অঙ্গরাজ্য। এ রাজ্যগুলো হচ্ছে ওয়াশিংটন, মিনেসোটা, অরেগন, নিউ ইয়র্ক, ম্যাসাসুসেটস এবং হাওয়াই।

ঠিক কি কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে রাজ্যগুলো? রাজ্যগুলোর নিজস্ব অবস্থানই বা কী? আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো অবলম্বনে এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বাংলা ট্রিবিউন।

ওয়াশিংটন

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন। এ অঙ্গরাজ্যেই অবস্থিত দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হোয়াইট হাউস। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞার কঠোর বিরোধী এ অঙ্গরাজ্য। তারা বলছে, এ নিষেধাজ্ঞায় ওয়াশিংটনের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন বলেছেন, ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা অ-আমেরিকানসুলভ। এটা অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। এতে বিশেষভাবে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। স্পষ্টতই এই আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট কোনও বিশ্বাসের মানুষদের প্রতি বৈষম্য করা।

যেসব অঙ্গরাজ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা

মিনেসোটা

এ রাজ্যের পক্ষ থেকেও নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। রাজ্যের বাসিন্দাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে মিনেসোটা। এক হিসাবে এ রাজ্যে বিদেশি বংশোদ্ভূত চার লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন।

ওয়াশিংটন ও মিনেসোটা রাজ্যের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল নোয়া পারসেল আদালতে বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের ফলে পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্যক্তিরা বিদেশ (অভিবাসীদের নিজ দেশ) সফরে অসমর্থ হয়ে পড়বেন। এর ফলে ট্যাক্স থেকে প্রাপ্ত আয় কমে যাবে।’

নোয়া পারসেল বলেন, প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধের কথা বলেছেন। এ সময় তিনি নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।

অরেগন

যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলবর্তী অঙ্গরাজ্য অরেগন বলছে,  ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে স্থানীয় অধিবাসী, চাকরিজীবীদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং মোটাদাগে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নিউ ইয়র্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী এ অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক স্নেইডেরম্যান বলেছেন, ট্রাম্পের এ নির্বাহী আদেশ প্রকৃতপক্ষে অন্য নামে মুসলিম নিষেধাজ্ঞা। এতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের ইঙ্গিত স্পষ্ট।

নতুন নিষেধাজ্ঞায় নির্বাহী আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের কয়েক মিনিট পরই এক বিবৃতি দেন এরিক। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে পদাধিকার বলে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

বিবৃতিতে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, দেশের আদালত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবিধানের ঊর্ধ্বে নন। হোয়াইট হাউস যদিও নিষেধাজ্ঞায় পরিবর্তন এনেছে তবে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের ইঙ্গিত স্পষ্ট। এটা শুধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোরতা মানুষকে বিশৃঙ্খলায় ফেলবে তা নয়, এটা একেবারেই আমাদের মূল্যবোধবিরোধী এবং অনিরাপদ করে তুলবে।

এরিক আরও বলেন, আমার কার্যালয় নিবিড়ভাবে নতুন নির্বাহী আদেশ পর্যালোচনা করছে। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত পরিবার, প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি রক্ষায় এর বিরুদ্ধে মামলা করতে আমি প্রস্তুত আছি।

ম্যাসাসুসেটস

এ অঙ্গরাজ্য বলছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক উদ্যোগ। নির্বাচনি প্রচারণায় দেওয়া মুসলিম নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতি পূরণেই তিনি এটা করছেন; যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

হাওয়াই

হাওয়াই অঙ্গরাজ্য বলছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ফলে এ রাজ্যের মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজ্যের পর্যটন শিল্পে। বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এরইমধ্যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে এ অঙ্গরাজ্য। ৮ মার্চ ২০১৭ বুধবার করা হাওয়াই-এর মামলায় বলা হয়েছে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশ প্রকৃতপক্ষে ‘মুসলিম নিষিদ্ধের যুগ’ শুরু করেছে।

যেসব অঙ্গরাজ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ট্রাম্পের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা

এদিকে, প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কোনও আদালতে ধাক্কা খেলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংশোধিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞা। ১১ মার্চ ২০১৭ শুক্রবার উইসকনসিন আদালতে একজন ফেডারেল বিচারকের রায়ে ধাক্কা খায় ট্রাম্প শিবির। ওই রায়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়া এক সিরীয় শরণার্থীর স্ত্রী ও সন্তানকে দেশটিতে নিয়ে আসতে কোনও হয়রানি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ উইলিয়াম কনলে এ মামলায় তাদের কোনও ধরনের বাধা প্রদানের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।

বিচারক উইলিয়াম কনলে’র এ রায় সামগ্রিকভাবে ট্রাম্পের সংশোধিত নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এটা সুনির্দিষ্টভাবে ওই সিরীয় শরণার্থীর মামলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। ওই ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তান এখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আলোপ্পো শহরে বসবাস করছেন।

এ রায়ে ট্রাম্পের সংশোধিত মুসলিম নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রযোজ্য না হলেও এটাকে ট্রাম্প শিবিরের জন্য একটা ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞার একাধিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে এ রায়ও যুক্ত হলো। ৬ মার্চ ২০১৭ তারিখে ইস্যু করা ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা ১৬ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পরই ২৭ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে এক নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সিয়াটলের একজন বিচারক ট্রাম্পের ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের আদেশ দেন। ট্রাম্প প্রশাসন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সান-ফ্রান্সিসকোভিত্তিক তিন বিচারকের প্যানেল তা খারিজ করেন।

পরে সাত মুসলিম-প্রধান দেশের নাগরিকদের ওপর স্থগিত হয়ে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নতুন জারি করা নিষেধাজ্ঞায় আগের তালিকায় থাকা ইরাককে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে অপর ছয়টি দেশের নাগরিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার কথা ঘোষণা দেওয়া হয়। ট্রাম্পের জারি করা নতুন মুসলিম নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের যেসব নাগরিকদের বৈধ ভিসা নেই তারা আগামী ৯০ দিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, মিন পোস্ট।

/এমপি/এএ/

সম্পর্কিত
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী