X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও মোদির ‘ওয়ান ম্যান শো’

শাহেরীন আরাফাত ও মাহাদী হাসান
১২ মার্চ ২০১৭, ১৪:২৬আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৭, ১৮:২৮
image

নির্বাচনে জয়ের পর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মোদি ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচ রাজ্যের মধ্যে দু’টিতে জয় পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। এর মধ্যে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তর প্রদেশও। গত সাধারণ নির্বাচনের মতোই এই বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোদি। পাঞ্জাব ছাড়া বাকি চার রাজ্যেই বিজেপির অবস্থান শক্ত হয়েছে। অপরদিকে, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল কংগ্রেস প্রতিটি রাজ্যেই মাঠ হারিয়েছে। মোদির জন্য এই বিধানসভা নির্বাচনকে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক-পরীক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছিল। আর তাতে মোদি অনেকটাই এগিয়ে গেলেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অন্যদিকে পাঞ্জাবে জয়লাভের পরও খুব একটা আলোচনায় নেই কংগ্রেস।  

২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশে শক্ত অবস্থান দরকার ছিল মোদির। তাই এবার উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেয় বিজেপি। কিন্তু গত নভেম্বরে কালো টাকা নিয়ন্ত্রণের নামে ৫০০ ও ১০০০ রুপির ব্যাংকনোট বাতিলের সিদ্ধান্তে বেশ বিতর্কের মুখে পড়তে হয় মোদিকে। উত্তর প্রদেশের হতদরিদ্র মানুষকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে, তার প্রভাব নির্বাচনে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল।তাই বিধানসভার ফলাফল মোদি ও তার দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তটি নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে আভাস দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরাও। নির্বাচনের আগেই দিল্লি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর ফেলো অশোক মালিক জানান,‘ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটিতে সরকারের জনসমর্থন যাচাই হবে নোট বাতিলের নীতি সেখানে কতোটা প্রভাব ফেলেছে, তার ভিত্তিতে।’ 

চ্যালেঞ্জে জয়

বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে মোদির পথ অনেকটাই পরিষ্কার বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পার্লামেন্ট সদস্য সম্বলিত নির্বাচনি এলাকা এখন তার নিয়ন্ত্রণেই থাকছে।

উত্তর প্রদেশে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কেশব প্রসাদ মৌড়া বলেন,‘আমরা খুবই চিন্তিত ছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে এতটা সংশ্লিষ্ট করা ঠিক হবে কিনা। তবে মোদির কারণেই শেষ পর্যন্ত বিশাল জয় নিশ্চিত করেছে বিজেপি।’

৪০৩ সিটের মধ্যে ৩১২টি সিট পেয়েছে মোদির দল। ১৯৭৭ সালের পর এটাই বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। ভারতীয় রাজনীতিতে উত্তর প্রদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে প্রায় ২০ কোটি মানুষের আবাস। প্রতি ছয়জন ভারতীয়ের একজন উত্তর প্রদেশ থেকে আসা।

ভারতের সাধারণ নির্বাচনেও উত্তর প্রদেশে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রায় এমন ফলাফলই ছিল। আর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের সমর্থন পেলেই কেন্দ্রে নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৌড়া বলেন, ‘আসলে মোদির জাদুতেই প্রতিপক্ষ হেরে গেছে।’

মোদির নির্দেশনায় উত্তর প্রদেশে বিজেপির জয়
মোদির ওয়ান ম্যান শো

শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও মোদি এই নির্বাচনকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব। নির্বাচনকালে পুরো তিনদিন অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে তিনি বারানসি ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে এ বার মোট ২৪টি জনসভা করেছেন তিনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিলন বৈষ্ণব ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, এই ভোট অনেককিছুই পরিষ্কার করে দিয়েছে। তিনি বলেন,‘ভোটাররা বিজেপির পলিসি দিয়ে অনুপ্রাণিত হোক বা না হোক, নরেন্দ্র মোদি যেকোনও পদক্ষেপ নিতে পারেন এই বিষয়ে বিশ্বাস ছিল তাদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নরেন্দ্র মোদি। তার ব্যক্তিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা এখন সবচেয়ে বেশি। বিরোধী দল তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও, তা ইতিবাচক ফলাফল আনতে পারেনি। 

উত্তর প্রদেশে জয়ের জন্য মোদি অবশ্য তার পুরোনো কৌশলই ব্যবহার করেছেন। ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করেই তিনি এই অঞ্চলের ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহও তাকে দিয়েছেন পূর্ণ সমর্থন।

সমালোচকদের দাবি, মোদি ও অমিত শাহ হিন্দু ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে সাম্প্রদায়িক কথা বলেছেন। মসজিদ এলাকায় একটি হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন অমিত শাহ। মোদিও ভোটারদের সমর্থন নিতে এমন সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছেন। আবার মুসলিম নারীদের ভোট পাওয়ারও চেষ্টা করেছেন মোদি। তিন তালাকের বিরুদ্ধে তার শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ভোটারদের ‍উদ্বুদ্ধ করেছেন।

লক্ষ্ণৌয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরকে মিশ্র বলেন,‘ভোটের ফলাফল থেকে এটা নিশ্চিত যে মুসলিম ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।’

উত্তর প্রদেশে মোদির প্রচারণা
ধরাশায়ী কংগ্রেস

মোদির বিজেপি এমন কিছু রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যেখানে অর্ধেকের বেশি ভারতীয়ের বসবাস। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর ৭০ বছর ধরে ভারত চালানো কংগ্রেসের অধীনে রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ জনগণ। কংগ্রেসকে নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখর গুপ্তা বলেন,‘ভারতের কোনও রাজ্যই এখন গান্ধী পরিবারকে ভোট দেবে না।’ পাঞ্জাবে জয়লাভের পরও আলোচনায় নেই কংগ্রেস। সেখানেও উত্থান ঘটছে আম আদমি পার্টির (এএপি)।

স্বরাজ ইন্ডিয়া পার্টির প্রতিষ্ঠাতা যোগেন্দ্র যাদব মনে করেন, উত্তর প্রদেশে মোদির এমন জয়ের পর বিরোধী দলগুলো একজোট বাধবে। ‘মোদি-বিরোধী জোট’ তৈরি করেই হয়ত ২০১৯ নির্বাচনে তার মোকাবিলা করতে হবে। তবে এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও হতে পারে আশঙ্কা তার।

ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। এটাই মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

দিল্লি ভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের অর্থনীতিবিদ রাজিব কুমার বলেন, ‘কর্মসংস্থানই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। এখানেই নরেন্দ্র মোদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’

মোদির এই সফলতা ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চালানোর জন্য তার ওপর চাপ হয়ে যাবে বলেও কোনও কোনও বিশ্লেষক মনে করছেন। মোদির বায়োগ্রাফার ও সাংবাদিক নিলাঞ্জন মুখার্জি বলেন, ‘তাকে (মোদি) এখন সংস্কারক ও জনপ্রিয় নেতা এই দুইয়ের মাঝে সমন্বয় করে চলতে হবে।’

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

/এফইউ/

 

 

 

সম্পর্কিত
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা