X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

হিন্দুত্ববাদ জোরালো করতেই আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছে বিজেপি!

শাহেরীন আরাফাত
১৯ মার্চ ২০১৭, ১৭:৪৩আপডেট : ১৯ মার্চ ২০১৭, ১৮:১৪
image

হিন্দুত্ববাদ জোরালো করতেই আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছে বিজেপি! ভারতের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় হিন্দুত্ববাদী রেটরিক ব্যবহার করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচন জয়ের পর হিন্দুত্ববাদী কর্মকাণ্ড অক্ষুণ্ন থাকলেও প্রকাশ্যে মোদি সরকার তাকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করার কথা স্বীকার করে না। তারা  ‘সবাই মিলে সবার বিকাশ (সবকে সাথ, সবকা বিকাশ)’ বলেই স্লোগান দিয়ে থাকে। তবে উত্তর প্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করতে গিয়ে বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী সন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথকেই বেছে নিয়েছে মোদি সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর মোদির সবাই মিলে সবার বিকাশ নীতি অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিশ্লেষকরা তা মানছেন না। তারা মনে করছেন,  এর মধ্য দিয়ে মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পকেই আরও অগ্রসর করা হয়েছে।

কে এই যোগী আদিত্যনাথ

উত্তর প্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করতে গিয়ে বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী সন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথকেই বেছে নিয়েছে মোদি সরকার। যোগী আদিত্যনাথ মূলত উত্তর প্রদেশের আদিনিবাসী নন। তার পরিবার উত্তরাখণ্ড থেকে উত্তর প্রদেশে এসেছে। তার আসল নাম অজয় সিং। জন্ম ১৯৭২ সালের ৫ জুন। যোগীর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ছোটকাল থেকে পড়াশুনোর সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার প্রতি তার আগ্রহ বাড়তে থাকে। ২২ বছর বয়সেই দীক্ষা সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। গোরক্ষপুর মন্দিরের মোহন্ত বা প্রধান পুরোহিত যোগী অবৈদ্যনাথ তাকে দীক্ষা দিয়েছেন।

গাড়োয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ‌যোগী আদিত্যনাথ। ১৯৯৮ সালে কমবয়সী সাংসদ হিসেবে গোরক্ষপুর আসনে লোকসভায় জেতেন তিনি। তারপর থেকে ওই আসনে টানা জিতে আসছেন তিনি। ২০০২ সালে তিনি গড়ে তুলেছে উগ্র ডানপন্থী যুব সংগঠন ‘হিন্দু যুব বাহিনী’। ২০০৫ সালে উত্তর প্রদেশে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করেছিল আদিত্যনাথের সংগঠন হিন্দু মহাসভা। তিনি আগেই ‘ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার’ ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। ২০০৭ সালে গোরক্ষপুরে জাতিবর্ণ সংঘর্ষের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে তিনি গোরক্ষপুর মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছেন। 

যে কারণে যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো হলো

এবারের উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে মেরুকরণ সুস্পষ্ট হয়েছে। হিন্দু ভোটব্যাংককে সম্বল করে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও জয় পেতে মরিয়া বিজেপি। তাই হিন্দুত্ববাদকে মুখোশ ছেড়ে বাইরে নিয়ে আসা জরুরি ছিল বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। যদিও বিজেপিরই অনেকে মনে করছেন, যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী করায় সংখ্যালঘু ও নিম্নবর্ণের মানুষ একজোট হলে বিরোধী দল শক্তিশালী হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

বিজেপি নেতা কেশব মৌর্য জানান, ‘নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যোগীর হিন্দু মুখকে সামনে রেখেই উন্নয়ন হবে গরীবের।’ এই সিদ্ধান্তের ফলে দল ও সমর্থকরা একজোট হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ৪০৩ আসনের মধ্যে ৩১২টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। ১৯৭৭ সালের পর এটাই বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। ভারতীয় রাজনীতিতে উত্তর প্রদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। কারণ ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্যে প্রায় ২০ কোটি মানুষের আবাস। প্রতি ছয়জন ভারতীয়ের একজন উত্তর প্রদেশ থেকে আসা।

ভারতের সাধারণ নির্বাচনেও উত্তর প্রদেশে বিজেপির প্রায় এমন ফলাফলই ছিল। আর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, উত্তর প্রদেশের সমর্থন পেলেই কেন্দ্রে নির্বাচনে জয় পাওয়া সম্ভব।

আদিত্যনাথের এই নিয়োগ এমন এক সময় আসলো যখন উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় মুসলিম প্রতিনিধিদের সংখ্যা সবচেয়ে কম। এবার মাত্র ২৫ জন মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। যেখানে মোট ভোটারদের ১৮ শতাংশই মুসলিম।

যোগী আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করার পর বিজেপির অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ, এই বিজেপি নেতার কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভাবমূর্তি। তবে এই নেতা উগ্র হিন্দুত্বের কথা বলে বার বার বিজেপি-কে বিতর্কে জড়ালেও প্রতিবারই ভোটের ব্যবধান বাড়িয়েছেন জয়ের। এবারের নির্বাচনে ছিলেন দলের তারকা প্রচারক ছিলেন যোগী। জাতিবর্ণ ব্যবস্থা বহাল রেখেও যেন ভোট ব্যাংক বজায় থাকে, সেজন্য রাজপুত বংশের যোগী আদিত্যনাথের সহকারি হিসেবে দু’জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিম্নবর্ণের কেশব মৌর্য এবং ব্রাহ্মণ দীনেশ শর্মা। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে এর প্রভাব দেখা যাবে বলে বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন। 

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বিশ্লেষক সাগরিকা ঘোষ ১৯ মার্চ এনডিটিভি-র অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত এক কলামে বলেন, ‘যোগী আদিত্যনাথের মধ্য দিয়ে উত্তর প্রদেশে যে হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটেছে, তা হিন্দু রাষ্ট্র গঠনেরই এক প্রক্রিয়া। যেখানে মুসলিমদের কোনও স্থান নেই।’ তিনি আরও বলেন, “সংঘ পরিবার এবার মোদির ভাবমূর্তিকে নতুন করে গড়ছে। এখানে উন্নয়নের চেয়ে বেশি স্থান পাচ্ছে মোদিকে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা।”

সাগরিকা গুজরাটের পর উত্তর প্রদেশকে ‘হিন্দুত্ববাদের গবেষণাগার’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এবার আর স্যুট পরারও দরকার হয়নি। পুরোপুরি গেরুয়া হিন্দুত্ববাদ।’

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি।

/বিএ/

সম্পর্কিত
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!