X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

টিলারসনের ‘প্রতিশ্রুতিময়’ প্রথম এশিয়া সফর!

বিদেশ ডেস্ক
১৯ মার্চ ২০১৭, ২৩:৪১আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৭, ১১:৩৮

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো এশিয়া সফর করে গেলেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষ এ কূটনীতিক সিউল, টোকিও এবং বেইজিং সফর করেছেন। রবিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে টিলারসনের আনুষ্ঠানিক সফর। টিলারসন এ সফরে এসেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে এবং ট্রাম্প-জিনপিং ফোনালাপে যে অগ্রগতি হয়েছে সেই অবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে। সফরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক ও পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মিত্রদেশগুলোকে সহযোগিতার ক্ষেত্র নির্ধারণ করা। তবে সফর শেষ হওয়ার টিলারসনের এ সফরকে  প্রতিশ্রুতিময় ছাড়া খুব বেশি অর্জন দৃশ্যমান হচ্ছে না। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যে এশিয়ায় টিলারসনকে পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন, তা পুরোপুরি সফল করতে পারেননি তিনি।

রেক্স টিলারসন

সফরের শুরুতেই ট্রাম্প ঘনিষ্ট মাত্র একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে সঙ্গে এনে সংশ্লিস্টদের ভ্রু কুঁচকে দেন টিলারসন। টোকিওতে এ অঞ্চলে প্রথম সফরে এসেই উত্তর কোরিয়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাকে। তিনি নতুন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। যদিও নতুন পদক্ষেপের বিস্তারিত কিছুই জানাননি। অবশ্য তিনি স্বীকার করেন, ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়া হুমকি মোকাবেলায় সামরিক ব্যবস্থাসহ সবকিছুই বিবেচনা করছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা নতুন কিছু নয়। সাবেক বুশ এবং ওবামা প্রশাসনও উত্তর কোরিয়া সমস্যা মোকাবেলায় এমনটাই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়া নীতি পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছিল। এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন প্রধান  জিম ম্যাটিস জাপান সফরে এসে যে নিরাপত্তায় সহযোগিতায় আশ্বাস দিয়েছিলেন, টিলারসনও সেই একই প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবেলায় জাপানের পাশে সব সময় থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে টিলারসন তাও সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোরিয়ান সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, ‘ক্লান্তিজনিত’ কারণে টিলারসন দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ুন বাইয়ুং-সে এর সঙ্গে বৈঠক সংক্ষিপ্ত করেছেন। যা উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে থাকা এবং সদ্য দেশটির প্রেসিডেন্ট অভিসংশিত হওয়ায় অস্থিতিশীল দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ছিল না। এ কারণে টিলারসনের কূটনৈতিক অনভিজ্ঞতা ও অপ্রস্তুতি নিয়েও বেশ সমালোচনা হয়। যদিও টিলারসন পরে জানিয়েছেন, ক্লান্তির বিষয়টি দক্ষিণ কোরিয়ান সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা। তিনি ক্লান্ত ছিলেন না। ততক্ষণে অবশ্য বেশ দেরি হয়ে গেছে। কারণ যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়েই গেছে।

সফরের শেষ দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী বেইজিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের সামনে পড়েন। এরমধ্যে রয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি এবং উত্তর কোরিয়া বিষয়ে চীনের সহযোগিতা লাভ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে উত্তর কোরিয়ার হুমকি নিয়ে সুর বেশ চড়া করেছে চীন। এর ধারাবাহিকতায় বেইজিং গুরুত্ব দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছয় দেশীয় আলোচনার ওপর এবং মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া সামরিক মহড়া বন্ধের ওপর। বিপরীতে চীন উত্তর কোরিয়া বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে রাজি- এমনই জানানো হয়েছে টিলারসনকে।

জাপানে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিলেও চীনে এসে সুর নরম করেন টিলারসন। তিনি জানান, আলোচনার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া ইস্যু মোকাবেলায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে রবিবার সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন জানান, বিবাদপূর্ণ ইস্যুগুলোকে একপাশে রেখে দুই দেশই উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে একযোগে কাজ করার ব্যাপারে উভয় দেশের সমঝোতার কথা জানিয়েছেন। সফরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মধ্যেকার বিবাদপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে কোনও সুরাহা হয়েছে বলে কেউ দাবি করেনি।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, ওই বৈঠকে দুইদেশের বিবাদপূর্ণ ইস্যুগুলো এড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। অন্তত সাংবাদিকদের সামনে এ ইস্যুগুলো তোলা হয়নি। বরং শি বলেছেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন যুগপর্ব যেন মসৃণ হয় তার জন্য টিলারসন বেশ চেষ্টা করেছেন। শি বলেন, ‘আপনি বলেছেন চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনিবার্যভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার কথা। আমি আপনার অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

অবশ্য চীনে টিলারসনের কাজ আরও কঠিন করে তোলেন ট্রাম্প। টুইটারে ট্রাম্প জানান, উত্তর কোরিয়া ইস্যু মোকাবেলায় চীন খুব সামান্যই সহযোগিতা করছে। টিলারসনও স্বীকার করেছেন, ট্রাম্পের টুইটের বিষয়ে তিনি জানতেন না।

এ সফরে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীন ট্রাম্প প্রশাসনে বৈদেশিক নীতিতে টিলারসনের প্রভাব কেমন হবে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে চেয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর টিলারসনের বিভিন্ন বক্তব্য ইঙ্গিত দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির ওবামা আমলের অনেক ভিন্ন হবে। তবে এই সফরে সেই ভিন্নতার খুব বেশি আভাস পাওয়া যায়নি। অবশ্য টিলারসনের সফর একেবারে ব্যর্থ তাও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ম্যাথিসের মতো টিলারসন নিজেকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাজির করতে পারেননি। ফলে মার্কিন মিত্র দেশগুলোর কাছে টিলারসন এখনও অনেকটাই অপরিচিত রয়ে গেছেন। যে কারণে এ অঞ্চলে ট্রাম্প প্রশাসনে নীতি কার্যকর হওয়াটা খুব সহজ হবে না বলেই মনে করছেন কূটনীতিক বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স।

/এএ/

সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
ঢাকায় চীনের ভিসা সেন্টার, প্রয়োজন হবে না দূতাবাসে যাওয়ার
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
সর্বশেষ খবর
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট কাল
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট কাল
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ইইউ দেশগুলোকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী অস্ত্র পাঠাতে হবে: বোরেল
ইইউ দেশগুলোকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী অস্ত্র পাঠাতে হবে: বোরেল
কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
কান উৎসব ২০২৪কানের সমান্তরাল তিন বিভাগে কোন কোন দেশের ছবি
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট