X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

হোসনি মোবারক: মিসরের গর্জনে যার পতন, মুক্তিতে নীরব

আরশাদ আলী
২৫ মার্চ ২০১৭, ২২:৪৭আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৭, ১৮:২৩

হোসনি মোবারক:  মিসরের গর্জনে যার পতন, মুক্তিতে নীরব ছয় বছর আগে আরব বসন্তের সময়ে জেগে ওঠা মিসরের মানুষের গর্জনে পতন হওয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক শুক্রবার মুক্তি পেয়েছেন। তিন দশকের শাসনামালে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগে দীর্ঘ ‘নিষ্ফল’ বিচার প্রক্রিয়া শেষে মুক্তি পান মোবারক। মুক্তির আগে কায়রোর একটি সামরিক হাসপাতালে তাকে আটক রাখা হয়েছিল।

সাবেক এই সামরিক প্রেসিডেন্টকে আটক রাখা হয়েছিল দক্ষিণ কায়রো মাদি সামরিক হাসপাতালে। শুক্রবার এখান থেকেই সশস্ত্র প্রহরায় তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল সেখান থেকে মোবারক নীল নদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারতেন। এমনকি নদীর ওপারে অবস্থিত হেলিওপলিসে তার বাস ভবনও দেখা যেত।

৮৮ বছরের মোবারকের দীর্ঘদিনের আইনজীবী ফারিদ আল-দিব জানান, তিনি (মোবারক) শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় বাসায় যান। স্ত্রী সুজানে, দুই ছেলে আলা ও গামালের সঙ্গে নাস্তা করে তিনি মুক্তি উদযাপন করেন।

এই মুক্তির মধ্য দিয়ে মোবারকের জীবনের তৃতীয় অধ্যায় শুরু হলো। ১৯৮১ সালে ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত একটি প্যারেডে নিহত হলে ক্ষমতায় আসেন মোবারক। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং মনে করা হতো তাকে হত্যা করা সম্ভব নয়। ক্ষমতায় আসার ৩০ বছর পর ২০১১ সালে তাহরির স্কয়ারে ১৮ দিনের উত্তাল বিক্ষোভের ঢেউয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি।

মোবারকের পতনকে ওই সময় আরব বিশ্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার আসবে। মোবারকের মতো দীর্ঘদিনের ক্ষমতাশীল প্রেসিডেন্টও আইনের ঊর্ধ্বে নন। শুক্রবার তার মুক্তিতে পরিবর্তনের এ আশা মিইয়ে গেছে। মোবারককে উৎখাতের জন্য যারা জীবন বাজি রেখেছিলেন তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই মনে করেন, কোনও একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়েও পরিবর্তনের বিষয়টি আরও বৃহৎ।

২০১১ সালে কায়রোতে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারান আহমেদ হারারা নামের এক আন্দোলনকারী। তিনিও হয়ে পড়েছেন বেশ হতাশ। বলেন, এই অবস্থায় আমার আর কিছু যায় আসে না। এক বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের লড়াইটা শুধু মোবারক ও তার শাসনের বিরুদ্ধে ছিল না। এটা ছিল পুরো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। যা নিজ থেকে আবারও অধিষ্ঠিত হয়েছে।

হারারা জানান, মোবারকের মুক্তি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির একটি রাজনৈতিক সুক্ষ্ম কৌশল। সিসি বুঝে-শুনেই এই ঝুঁকি নিয়েছেন। কারণ সিসি বুঝতে পেরেছিলেন, মোবারককে মুক্তি দিলেও কোনও প্রতিরোধ আসবে না।

মোবারকের একান্ত সমর্থকদের তার মুক্তির পর উচ্ছ্বাস ছিল প্রবল। রেহাব আবদেল হালিম নামের এক প্যারাট্রুপার বলেন, সিংহ তার খাঁচায় ফিরেছেন। আমাদের বড় একটি বোঝা নেমে গেলো। কেউ থাকে নির্দয় বা দুর্নীতিবাজ বলতে পারবে না। যদি তিনি কোনও অপরাধ করতেন তাহলে আদালত বেকসুর খালাস দিত না।

মোবারক সমর্থকরা উচ্ছ্বসিত হলেও তাহরির স্কয়ারের সক্রিয় আন্দোলনকারীরা নিরবতা পালন করছেন। যে প্রতাপশালীকে সব দুর্দশার কারণ হিসেবে মনে করতেন তারা সেই ব্যক্তি আবার মুক্ত হয়েছেন। ফলে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে অনাগ্রহ, আতঙ্ক ও ভয়। মুক্তভাবে কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না।

মোবারকের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ আনা হলেও ছোটোখাটো একটি দুর্নীতি মামলাতেই শুধু তার সাজা হয়েছে। খুব কম মানুষই মোবারকের মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। মাত্র কয়েক বছর আগে বিরাট বিক্ষোভের ফল হিসেবে মোবারকের মুক্তি ছিল অকল্পনীয়।

প্রথম আরব নেতা হিসেবে দেশের সাধারণ আদালতে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সময় মোবারককে প্রাথমিকভাবে কুখ্যাত টোরা কমপ্লেক্সে বন্দি হিসেবে রাখা হয়েছিল। এরপর তাকে মাদি সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে তাহরির স্কয়ারে বিক্ষোভে পুলিশ দিয়ে ২৩৯জন আন্দোলনকারীকে হত্যা, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার লুট, ২০১১ সালের বিক্ষোভের সময় পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল।  

মোবারকের মুক্তির পেছনে ক্ষমতাচ্যুতির পর মিসরের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ২০১২ সালের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহামেদ মুরসি ক্ষমতায় আসেন। তবে মুরসি ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র এক বছরের মতো। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ঘটনায় সেনাবাহিনীর সমর্থন হারান তিনি। অথচ এই সেনাবাহিনীই ছিল ক্ষমতার প্রধান কেন্দ্র। এছাড়া ২০১৩ সালের জুন মাসে কয়েক লাখ মিসরীয় রাস্তায় নামেন মুরসির পদত্যাগের দাবিতে। এ অস্থির সময়ে আবারও সেনাপ্রধান জেনারেল সিসি দেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন মুরসিকে উৎখাত করে। 

২০১৩ সালের আগস্টে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি বিক্ষোভে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালান। এ বিক্ষোভ দমনে অন্তত ৮০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এর মধ্য দিয়ে সিসি জানান দেন, কোনও ধরণের বিক্ষোভ সহ্য করা হবে না। আর সিসির এ কঠোর অবস্থানই জানান দিচ্ছিল যে, মোবারকের বিচারেও পরিবর্তন আসবে। ঘটেছেও তাই। আদালতে হাজির হওয়ার সময় মোবারককে নেওয়া শুরু হয় হেলিকপ্টারে করে। স্ট্রেচারে করে নেওয়ার বেশির ভাগ সময়েই সানগ্লাস পরে থাকতেন।

বিচারের দীর্ঘ প্রক্রিয়া আর সিসির দমন-পীড়নের মুখে মোবারকের বিরুদ্ধে মিসরীয়দের ক্ষোভ চাপা পড়তে থাকে। এর মধ্যে সিনাই পেনিনসুলায় ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থান দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকটও তৈরি করে।

মোবারকের শাসনামলে চারবার কারাবরণ করা ইসলামি আইনজীবী মনতাসির আল-জায়াত বলেন, সবকিছুরই উত্থানপতন রয়েছে। গণতন্ত্রের পথরুদ্ধ হয়ে গেছে। মিসরীয়রা কিছু বলার ক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। জীবন বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঝুঁকি না নিয়ে তারা রাস্তায়ও নামতে পারছেন না। ফলে মোবারকের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি একভাবে সবাই মেনে নিয়েছেন।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।

/এএ/

সম্পর্কিত
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
রাজনীতিকদের বিরোধে ক্ষোভ বাড়ছে ইসরায়েলি সেনাদের
দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭
সর্বশেষ খবর
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ