X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওবামার দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বাতিলের সিদ্ধান্ত, ট্রাম্পকে পরিবেশবাদীদের হুঁশিয়ারি

ফাহমিদা উর্ণি
২৮ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৯আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১০:১৮
image

ওবামার দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বাতিলের সিদ্ধান্ত, ট্রাম্পকে পরিবেশবাদীদের হুঁশিয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার বিগত প্রশাসনের নেওয়া ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’ নামের দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বাতিল করে নির্বাহী আদেশ দিতে যাচ্ছেন। ওবামা প্রশাসনের ওই পদক্ষেপে দুষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের আবশ্যকতা জারি করা হয়েছিল। ‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স এক্সিকিউটিভ অর্ডার' নামের নির্বাহী আদেশের মধ্য দিয়ে  ট্রাম্প প্রশাসন পূর্ববর্তী ওবামা প্রশাসনের পরিবেশবান্ধব নীতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইঙ্গিত দিয়েছে, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে  কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদনে জারি থাকা ওবামা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে পারেন ট্রাম্প। পরিবেশ-আইন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের নতুন আদেশের কারণে প্যারিসের সমঝোতামূলক চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে। তবে ট্রাম্পের আসন্ন নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে পরিবেশবাদীরা।

হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ)যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষাবিষয়ক দফতর ইপিএ-তে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলের দিকে ট্রাম্প এ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন। সংস্থার প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্কট প্রুইট, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রায়ান জিনকে এবং জ্বালানি মন্ত্রী রিক পেরি ট্রাম্পের সঙ্গে থাকবেন। একই দেশের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ওই নির্বাহী আদেশে ওবামা প্রশাসনের নেওয়া ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’-এর পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা সম্পন্ন হবে। আর ওমাবার ওই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে নেওয়া তার উদ্যোগগুলো বাতিল হতে পারে বলেও জানিয়েছে তারা। উল্লেখ্য, ওবামার নীতিতে কয়লা খনির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। নির্বাহী আদেশে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের যুক্তি, তার এই পদক্ষেপে জ্বালানির দাম কমবে, বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান৷

ওবামার দূষণবিরোধী পদক্ষেপ বাতিলের সিদ্ধান্ত, ট্রাম্পকে পরিবেশবাদীদের হুঁশিয়ারি

জ্বালানি স্বাধীনতার (‘এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্স) কথা বলে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশটি দিতে যাচ্ছেন তা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরিকল্পিত ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানকে বাতিল করবে। ২০১৪ সালে ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানটি সামনে এনেছিলেন ওবামা। তবে রিপাবলিকান আধিপত্যের অঙ্গরাজ্যগুলোর আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর বাধ্যবাধকতা রাখা হয়।

তবে রয়টার্স এবং গার্ডিয়ানের খবর বলছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কারণে ফেডারেল জমিতে কয়লা ইজারার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা বাতিল হতে পারে। উল্টে যেতে পারে তেল ও গ্যাস উৎপাদন থেকে মিথেনের নিঃসরণ কমানোর নিয়ম-নীতি। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে প্যারিস চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। কেননা, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অন্যতম অঙ্গীকার হলো কার্বন নিঃসরণ কমানো।

ট্রাম্পের মঙ্গলবারের নির্বাহী আদেশকে সামনে রেখে হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আলাদা পথে যাচ্ছি। আগের প্রশাসন তাদের নীতির মধ্য দিয়ে কর্মীদের অবমূল্যায়িত করেছিল। লোকজনের কাজের ব্যবস্থা করে আমরা পরিবেশের সুরক্ষা দিতে পারব’।

কার্বন নিঃসরণ
তেল, গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত শিল্প-কারখানাগুলোকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে ট্রাম্প পরিবেশগত প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার মধ্যে এটিকে সবচেয়ে জোরালো বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বার বারই ট্রাম্পকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে নতুন ফেডারেল কয়লা ইজারা তিন বছরের জন্য স্থগিত করেছিল ওবামা প্রশাসন। আর একে ওবামার ‘কয়লাবিরোধী যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দেন ট্রাম্প। কংগ্রেসে দেওয়া এক ভাষণেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন চাকরি বিনষ্টকারী প্রতিবন্ধকতাগুলো কমিয়ে আনতে তিনি ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এরমধ্যে কয়লা খনির শ্রমিকদের ভবিষ্যত ও জীবন-যাপনজনিত হুমকির বিষয়টিকেও উল্লেখ করা হয়েছিল।

কেন্টাকি কোল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট টাইলার হোয়াইট রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে পারছি না এ নির্বাহী আদেশের কারণে কতগুলো চাকরি তৈরি হবে। কিন্তু আমি আপনাদের বলতে পারি যে কয়লা শিল্পের প্রতি এ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এটি আস্থা যোগাবে।’

এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা এ নির্বাহী আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানোর অঙ্গীকার করেছে। নেক্টজেন ক্লাইমে-এর প্রধান টম স্টেয়ার বলেন, ‘এ ব্যবস্থাগুলো আমেরিকান মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করবে এবং তা প্রত্যেক মার্কিনির স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে হুমকিজনক হবে। আরেক পরিবেশবাদী সংগঠন আর্থ জাস্টিস বলছে তারা আদালতের ভেতরে এবং বাইরে দুই জায়গাতেই এ নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে। সংগঠনটির প্রধান ট্রিপ ভ্যান নোপেন বলেন, ‘এ আদেশ আইন ও বৈজ্ঞানিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে’।

ট্রাম্প
উল্লেখ্য, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের এই বিপন্নতার প্রেক্ষিতে গত বছরের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্পকে জলবায়ু চুক্তিবিরোধী অবস্থানে দেখা গেছে। গত নভেম্বরে এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে অঙ্গীকারবদ্ধ ট্রাম্প বিভিন্ন উপায় খুঁজছেন। চুক্তিটি থেকে বের হয়ে আসতে চার বছরের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু সে প্রক্রিয়াকে কিভাবে পাশ কাটানো যাবে এখন তা নিয়ে ভাবছেন ট্রাম্প। ওই সূত্রের নাম প্রকাশ না করলেও রয়টার্স জানিয়েছিল তিনি ট্রাম্পের ট্রানজিশন দলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি ও জলবায়ু নীতিমালা নিয়ে কাজ করেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের বিকল্প উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে, প্যারিস চুক্তির প্যারেন্ট ট্রিটি বলে পরিচিত কনভেনশন ১৯৯২ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়া, এক বছর সময়ের মধ্যে দুটোর সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা বাতিল করা কিংবা প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষর বাতিলের জন্য একটি প্রেসিডেন্সিয়াল আদেশ ইস্যু করা।  

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসবে কিনা তা এখনও চূড়ান্ত করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। তবে নতুন নির্বাহী আদেশটি জারি হলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির শর্ত যুক্তরাষ্ট্র আদৌ কতটা পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

/বিএ/

সম্পর্কিত
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’