X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

বিদেশ ডেস্ক
০৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১৪আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৪৫

ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সিরিয়ার হোমস প্রদেশের আল-শায়রাত বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এ হামলায় পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক। বিপরীতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আসাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাশিয়া ও ইরান। 

রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন-এর মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলা একটি সার্বভৌম দেশের ওপর আগ্রাসনের শামিল। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটা রুশ-মার্কিন সম্পর্কের ওপর একটা আঘাত; যা এরইমধ্যে বেশ দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এ হামলা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন বিবিসি’কে বলেছেন, আসাদ বাহিনীর রাসায়নিক হামলা মোকাবিলায় সম্ভাব্য সব ধরনের কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টা চালাতে চালাতে যুক্তরাষ্ট্র ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা মোকাবিলায় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ফলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মাইকেল ফ্যালন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। যুক্তরাজ্যকেও এতে জড়িত হওয়ার কোনও আহ্বান জানানো হয়নি।

ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

এক যৌথ বিবৃতিতে এ হামলার ব্যাপারে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোঁয়া ওঁলাদ।  বিবৃতিতে তারা  বলেন, এর দায়দায়িত্ব পুরোটাই প্রেসিডেন্ট আসাদের ওপর বর্তায়। তিনি বারবার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার এবং নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটন করছেন। ২০১৩ সালে গৌহাটা’র ঘটনার পর ফ্রান্স ও জার্মানির পক্ষ থেকে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছিল।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুক্রবার বলা হয়েছে, আসাদ বাহিনীর বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন হামলাকে সম্পূর্ণ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে আঙ্কারা। আসাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতি তুরস্কের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

ইরানের পক্ষ থেকে এ হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং এক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, অবস্থার যেন আরও অবনতি না হয়; সেটাই এখন জরুরি। আমরা যে কোনও পরিস্থিতিতে; যে কোনও দেশ, প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির দ্বারা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিরোধিতা করি। এর উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন!

রাশিয়ার পক্ষ থেকে হামলার নিন্দা জানানো হলেও আসাদ বাহিনীর বিমানঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে মস্কো। রুশ পার্লামেন্ট ডুমা’র ডেপুটি স্পিকার পিওতর তলস্তয় পার্লামেন্ট অধিবেশনে তার দেশের এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

পিওতর তলস্তয় বলেন, ‘আমরা কিভাবে প্রতি-আক্রমণ করতে পারি? অবশ্যই আমরা সামরিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে পারি না। আমাদের সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও আমরা ইসকাদার দিয়ে হামলা চালাতে পারি না। তবে আমাদের শক্তি সেখানেই সীমিত নয়। আমাদের শক্তি রয়েছে ঘটনার যৌক্তিকতা বোঝার মাঝে।’

ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাতে (সিরিয়ার স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে) ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস পোর্টার এবং ইউএসএস রস থেকে আসাদ সরকার নিয়ন্ত্রিত আল-শায়রাত বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। হামলায় ঘাঁটিতে রাখা যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল ইদলিবে বিমান থেকে চালানো রাসায়নিক গ্যাস হামলার জবাবেই মার্কিন বাহিনী ওই হামলা চালিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, ‘সিরিয়ার চালানো রাসায়নিক হামলার জবাবে আমি সামরিক স্থাপনায় ওই হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। এই মারাত্মক রাসায়নিক অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

এদিকে, রাশিয়ান ফেডারেশন কাউন্সিলের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির প্রধান ভিক্টর অজেরভ বলেন, রাশিয়া প্রথমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের দাবি জানাবে। এ কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসন বলেই বিবেচিত হবে।’

ট্রাম্পের সিরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়

রাশিয়ার পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটি জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। আর এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাত বাড়তে পারে।

উল্লেখ্য, ইদলিবে ওই রাসায়নিক গ্যাস হামলায় ৮৬ জন নিহত হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১৩ সালের আগস্টে সারিন গ্যাস হামলার অভিযোগ ওঠার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ রাসায়নিক হামলা। আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা এই হামলায় সরকারী বাহিনী ও রাশিয়াকে দুষলেও এই দাবি অস্বীকার করেছে সিরীয় সেনাসূত্র ও রুশ কর্তৃপক্ষ। হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে তোপের মুখে পড়ে রাশিয়া। ওই হামলায় সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দায়ী করে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, বিদ্রোহীরা ওই রাসায়নিক গ্যাস মজুত করে রেখেছিল। সিরীয় বিমান হামলায় সেই গুদাম আক্রান্ত হলে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে রাশিয়ার এমন দাবি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য দেশগুলো। তারা আসাদকে থামাতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানায়। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স।

/এমপি/

সম্পর্কিত
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা