X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কী চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
১১ এপ্রিল ২০১৭, ০১:০০আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৭, ০২:১১

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে সরকার থেকে রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব, সব মহলই বিস্মিত। মমতা বলেছেন, তিস্তা নদীতে জল কমে যাওয়ায় এখন ওই নদী থেকে বাংলাদেশে কোনও পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গে মারাত্মক আর্থিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা আছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোভাবেই চান না, বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হোক। তাই তার নতুন প্রস্তাব তোরসা ও অন্য কয়েকটি নদী, যেগুলো ভারত থেকে বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে গেছে, সেসব নদী থেকে বাংলাদেশের জন্য অধিক পরিমাণে পানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

স্বাভাবিকভাবেই মমতার এই আকস্মিক ঘোষণায় কলকতায় সবাই বিস্মিত বোধ করছেন। এ পর্যন্ত কোনও দিন পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা রাজনৈতিক মহল থেকে তোরসাসহ অন্য কোনও নদীকে তিস্তা নদীর বিকল্প হিসেবে প্রস্তাব করা হয়নি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, কোন সূত্রের মাধ্যমে এবং কী কী তথ্যের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ ধরনের নতুন দাবি জানালেন! এর উদ্দেশ্য কী?

তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ প্রায় দুই দশক ধরে চলছে। মমতা বাদ না সাধলে পাঁচ বছর আগেই দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তি হয়ে যেতো। তারপরও পশ্চিবঙ্গের প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই মত, ঢাকা বরং অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের যথেষ্ট সময় দিয়েছে, যেন তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিতে পারে। বাংলাদেশের ন্যূনতম দাবি, মমতা একটি সমঝোতায় আসতে পারেন। কিন্তু এতোদিন অপেক্ষার পরও মমতা ঠিক আগের মতোই তিস্তা নিয়ে অনড় থাকার বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বাদে অন্য সব দল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এর কঠোর সমালোচনা করেছে।

সিপিআই (এম) এমপি মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘এটি দুই দেশের জন্য একটি স্পর্শকাতর সমস্যা। বাংলাদেশে পানির অভাব হলে অবশ্যই তাদের সাহায্য করা দরকার। সেখানে চাষাবাদ বন্ধ হলে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের রাজ্যগুলোতে অর্থনৈতিক চাপ পড়বেই। সুতরাং তাদের পানি দেওয়া সবার স্বার্থেই প্রয়োজন।

কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরীরও মোটামুটি একই বক্তব্য। তার মতে, যে সমস্যা নিয়ে বহুদিন আলাপ-আলোচনা হয়েছে, এবার চুক্তি করে ফেলা উচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার নিজের জিদ বাড়িয়ে চলছেন, যেখানে ভারত সরকার তো বটেই, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। তৃণমূল কংগ্রেসের এই আচরণ খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান মুখ্যমন্ত্রীর সংকীর্ণ মনোভাবের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুশকিল হলো তিনি ও তার দল রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক, কোনও রকম ন্যূনতম রীতিনীতি মেনে চলায় বিশ্বাসী নয়। তাই কোনও কারণ না থাকার পরও এই ধরনের অহেতুক সমস্যা তৈরি হয়।

পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টি সভাপতি দিলিপ ঘোষ থেকে শুরু করে অন্য নেতাদের মতে, মমতা আসলে তার নিজের রাজ্যের ব্যাপক দুর্নীতিসহ আর্থিক ও অন্যান্য বহু সমস্যার সমাধানের জন্য দিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অকারণে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে, যেটা খুবই অন্যায়।

তাদের বক্তব্য, ভারতের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ, তারা নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে আরও অধিক পানি দাবি করতেই পারে। এখানে না বলার প্রশ্ন ওঠে কী করে?

সুতরাং তৃণমূল কংগ্রেস তথা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য তো বটেই, দিল্লিতেও অনেকটাই একা এবং কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। সবারই প্রশ্ন, তিনি কি চান এখন আরও বিশ/ত্রিশ বছর ধরে তোরসা এবং অন্যান্য নদীর প্রবাহ নিয়ে অনুসন্ধান চলুক, যেখানে বাংলাদেশের পানির প্রয়োজন মেটানো দরকার এখনই? আরও প্রশ্ন, যদি প্রস্তাব তার ছিলই, তাহলে আগেই তিনি এ ব্যাপারে দিল্লিতে বা বাংলাদেশেই, এ সম্পর্কে কথাবার্তা শুরু করেননি কেন? মমতার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্কের কথা তো সবাই জানেন। কী কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার শেষ মুহূর্তের জন্য ঝুলিয়ে রেখেছিলেন?

কলকাতার কিছু বিশ্লেষকের মতে, মমতার এই ধরনের ঘোষণায় শুধু যে দুই দেশের মধ্যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হবে, তাই নয়। লাভ হবে পাকিস্তানের, সুবিধা হবে দুই দেশের ধার্মীয় মৌলবাদীদের, যাদের জন্য এতদিন সীমান্তে, অবাধ যাতায়াত ও বাণিজ্যের বিকাশ ঘটতে পারেনি।

শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের যদি আগামী নির্বাচনে অসুবিধা হয়, তবে পুরো উপমহাদেশেই কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলো দুর্বল হতে বাধ্য। এতে লাভ কার বা কাদের?

আশার কথা, নরেন্দ্র মোদি কিন্তু তার প্রাথমিক ঘোষণায় শেখ হাসিনা ও মমতার উপস্থিতিতেই বলেছেন, তার আশা আর কিছুদিনের মধ্যেই তিস্তা নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি হবে এবং এই ব্যাপারে শেখ হাসিনার মতোই মমতাও ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার অর্থ, মমতাও কিন্তু এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারবেন না।

এছাড়া, বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে শুরু করে আর্থিক সহায়তাসহ নানা বিষয়ে ৩৬টি চুক্তি সই হলেও তিস্তার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। আশার কথা, মমতার শেষ মুহূর্তের চমক হিসেবে উঠে আসা তোরসা ও অন্য নদীগুলোর কথা দিল্লির সরকারি বিবৃতিতে কেন উল্লেখ করা হয়নি? এতে বোঝা যায়, ওই প্রস্তাব খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি বরং কিছু নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন মমতা।

কলকাতার বিশেষজ্ঞ মহলের বিশ্বাস, দিল্লি কিন্তু প্রয়োজনে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা আরও কিছুদিন চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ইতিবাচক হতে বাধ্য করবে। এ ব্যাপারে ভারতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেই নেওয়া হবে।

/এমপি/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সর্বশেষ খবর
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
মস্কোতে কনসার্টে হামলা: ৯ সন্দেহভাজনকে আটক করলো তাজিকিস্তান
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’