X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইদলিবে জেগেছে দামেস্কের দুঃস্বপ্ন

বিদেশ ডেস্ক
১১ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:২৪আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:২৭
image

২০১৩ সালের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া আবু ঘাসান
চার বছর আগের কথা। ২০১৩ সালে ভয়াবহ রাসায়নিক গ্যাস হামলার শিকার হয় সিরিয়ার দামেস্কের গৌটাসহ কয়েকটি এলাকা। নিষিদ্ধ সারিন গ্যাসের কবলে পড়ে প্রাণ হারায় শত শত মানুষ। আর যারা প্রাণে বেঁচে যান তাদের অনেককেই হয় বরণ করতে হয়েছে অন্ধত্ব, নাহয় স্নায়ু জটিলতায় ভুগতে হয়েছে কিংবা চলাফেরায় অক্ষম হয়ে পড়তে হয়েছে কাউকে কাউকে। ২০১৩ সালের সেই রাসায়নিক হামলার ক্ষত এখনও বয়ে চলছেন অনেকে। আর যাদের শরীরে ক্ষত নেই; তাদের ক্ষত জমা হয়েছে স্মৃতির ভাণ্ডারে।  ৪ বছরের ব্যবধানে মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা সেইসব দুঃসহ শঙ্কার স্মৃতিকে আবারও  জাগিয়ে তুলেছে ইদলিবের সাম্প্রতিক বিষাক্ত গ্যাসের হামলা।

দামেস্কের মানুষরা আতঙ্কে ছিলেন যেকোনও সময় আবারও তাদের ওপর রাসায়নিক গ্যাস হামলা হতে পারে। সেই আতঙ্ক সত্যিই হয়েছে। চার বছর আগেকার ভয়াবহ সেই ঘটনার আতঙ্ক না কাটতেই গত সপ্তাহে আবারও ভয়াবহ রকমের রাসায়নিক হামলার শিকার হন সিরীয় জনগণ। এবারের হামলাটি হয় ইদলিবের খান শেইখোন শহরে। নিহত হয় অন্তত ৮৭ জন। এ ঘটনার পর অতীতের হামলা আর প্রিয়জন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি আবারও সিরীয় জনগণের মনে জেগে উঠেছে। বার বারই তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই আগেকার করুণ দৃশ্যপট।

২০১৩ সালের রাসায়নিক গ্যাস হামলায় শত শত মানুষের সঙ্গে নিজের পরিবারের ৩৭ জন সদস্যকে হারিয়েছিলেন আবু ঘাসান নামের এক সিরীয়। নিজেও এক মাসের বেশি সময় ধরে চোখে দেখতে পাননি। অচল হয়ে কয়েক সপ্তাহ বিছানায় পড়ে ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক রাসায়নিক হামলার খবর পেয়ে অতীতের স্মুতি ভেসে ওঠে চোখের সামনে। ৫০ বছর বয়সী ঘাসান জানান, তিনি ‘শিশুর মতো ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন’।

রাসায়নিক হামলায় নিহত যমজ সন্তানকে বুকে নিয়ে বাবার কান্না
আবু ঘাসানের মতে, কেবল মাত্র সামরিক প্রশিক্ষণের জ্ঞান থাকার কারণে ২০১৩ সালের সেই হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। সেদিন হামলার সময় বিষাক্ত গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি ভেজা শার্ট দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছিলেন বলে জানান ঘাসান। ঘটনার দিন তার আশেপাশে যারা ছিলেন তারা আর কেউই বেঁচে নেই। ঘাসান জানান, সেই থেকে সবসময় তিনি হামলার আতঙ্কে থাকেন। আর তাই সবসময় তার সঙ্গে কাপড় আর ভিনেগার থাকে যেন এ ধরনের হামলা থেকে বাঁচা যায়।

যে রকেট ব্যবহার করে সেই গ্যাস হামলা চালানো হয়েছিল তার কয়েকটি টুকরো এখনও বিধ্বস্ত অ্যাপার্টমেন্টে পড়ে আছে। জাতিসংঘের পরিদর্শকরা কয়েক খণ্ড নিয়ে গেলেও অবশিষ্টগুলো রেখে দেওয়া হয়েছে যেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় সেগুলো ব্যবহার করা যায়। 

একইরকমের পরিস্থিতি হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় গৌটা এলাকার বাসিন্দা আমির জায়দানের ক্ষেত্রেও। ২৮ বছর বয়সী আমির বলেন, ‘খান শেইখোনের ঘটনার পর আমরা আগের স্মৃতিতে ফিরে গেছি। মনে হচ্ছিল, আমরা সেই হামলার মধ্যে আছি। এখানকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।’  

সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আমির জায়দান জানান, ওইদিন চোখের সামনে মানুষকে আর্তনাদ করতে দেখেছেন, নিজের জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত শত শত মানুষকে মারা যেতে দেখেছেন। কয়েকদিন ধরে চোখে দেখেননি জায়দান। 

জায়দান বলেন, ‘আমি জানি না আমার কোলে যে শিশুটি ছিল তার কী পরিণতি হয়েছে।’ ওই ঘটনায় নিজের পরিবারের সাত সদস্যকে হারিয়েছেন জায়দান। তার চাচাতো ভাই বোনের একজনের মৃত্যু হয়েছে ভেবে তাকে দাফনেরও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, পরে আবিষ্কার হয় তার শরীরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে।

রাসায়নিক হামলায় আহতরা
জায়দান আরও বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি ভুলিনি। যখন শত শত মারা যেতে দেখবেন তখন তা ভোলা যায় না। এটি এমন এক দৃশ্য যা সম্ভবত কখনও ভোলা যায় না। কোনও একটি এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় আপনার মনে পড়বে এখানে বাস করতো এমন একটি পরিবারের সবাই মারা গেছে।’

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চার বছর আগের চেয়ে বর্তমানে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী অনেক বেশি শক্ত অবস্থানে আছে। আর বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো এখন অনেক নাজুক অবস্থায় আছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় গৌটা এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলীয় গৌটা কয়েক বছর ধরেই অবরুদ্ধ হয়ে আছে এবং এ যাবতকালের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে। তারা জানান, রাসায়নিক গ্যাসের কবলে পড়া মানুষদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনয়ি সামগ্রী তাদের হাতে নেই। সেকারণে প্রাণহানির শঙ্কা বেশি।

আবু ইব্রাহিম বাকের নামে এক সার্জন বলেন, ‘খান শেইখৌনে ধ্বংসযজ্ঞের পর গৌটা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে। আমাদের মনে হচ্ছে পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু আমরা। ২০১৩ সালের মতো একটি ঘটনা ঘটলে তিন থেকে চার গুণ বেশি প্রাণহানি হবে। কারণ তা মোকাবেলার মতো যথেষ্ট ওষুধ ও সক্ষমতা আমাদের নেই।’

সম্প্রতি ইদলিবে ওই রাসায়নিক গ্যাস হামলা হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে,২০১৩ সালের আগস্টে সারিন গ্যাস হামলার অভিযোগ ওঠার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ রাসায়নিক হামলা। আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা এই হামলায় সরকারী বাহিনী ও রাশিয়াকে দুষলেও এই দাবি অস্বীকার করে সিরীয় সেনাসূত্র ও রুশ কর্তৃপক্ষ। হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়। ওই হামলায় সিরিয়ার বিদ্রোহীদের দায়ী করে রাশিয়া। মস্কোর দাবি,বিদ্রোহীরা ওই রাসায়নিক গ্যাস মজুত করে রেখেছিল। সিরীয় বিমান হামলায় সেই গুদাম আক্রান্ত হলে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে রাশিয়ার এমন দাবি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য দেশগুলো। তারা আসাদকে থামাতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানায়। ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি সেভেন বৈঠকে রাশিয়ার ওপর সেই চাপ আরও জোরালো করা হয়েছে।

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
সর্বশেষ খবর
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া