X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যামেরা ফেলে উদ্ধারকাজে নেমে পড়া এক ফটো সাংবাদিকের গল্প

বিদেশ ডেস্ক
২০ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:০৪আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৫৩

আহত শিশুকে কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাচ্ছেন হাবাক গৃহযুদ্ধ আর বৈদেশিক হস্তক্ষেপে বিপন্ন সিরিয়ার মানুষ। প্রতিদিন মৃত্যুর সঙ্গে বাস করা সিরীয়দের দুর্ভোগকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে ক্যামেরার সীমাবদ্ধ ফ্রেমকেই উপজীব্য করেছেন  আলোকচিত্র-সাংবাদিকেরা।  ঘটনার লিখিত বা চিত্রিত ভাষ্য তুলে ধরেই তাদের পেশাগত দায়িত্ব শেষ হয়। তবে সাংবাদিকেরাও তো মানুষ। পেশাগত জীবনের বাইরে তাদেরও রয়েছে মানবিক অনুভব। রয়েছে বিপন্ন মানুষের প্রতি সহজাত আর্তি। শনিবার সিরিয়ায় এমনই একজন সাংবাদিক নিজের পেশাগত সীমানাকে অতিক্রম করেছিলেন। শিশুদের ওপর তাজা বোমা হামলার সচিত্র প্রতিবেদন তৈরির লোভ সামলে তিনি নেমে পড়েছিলেন উদ্ধার তৎপরতায়। এই আলোকচিত্র সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্টের নাম আব্দ আলকাদের হাবাক। মানব্কিতার এক অনন্য গৌরবগাঁথা রচনা করেছেন তিনি।

খবর জোগাড় বা ছবি তোলার সময়ে সব আবেগকে দূরে ঠেলে রাখাই সংবাদ জগতের রীতি। সংবাদ শাস্ত্র এবং এর প্রায়োগিকতায় এটাকেই পেশাদারিত্ব বলে ডাকা হয়। তবে এইসব আবেগহীনতায় সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকদের সমালোচিতও হতে হয়েছে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে। কোনও বিপর্যয়ের ঘটনায় পেশাগত তাগিদ ছাপিয়ে আর্ত-মানবতার পাশে দাঁড়ানো যায় কিনা- এ নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি।  দুইবছর আগে তুরস্কের সৈকতে নিষ্প্রাণ আয়লান কুর্দির ছবি ফের উস্কে দিয়েছিল এই বিতর্ক। ওই বছরেই হাঙ্গেরির রোজস্কে সীমান্তে পুলিশি ঘেরাটোপ টপকে ঢুকে পড়া, বাচ্চা কোলে এক শরণার্থীর ছবি তুলতে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছিলেন এক নারী আলোকচিত্র সাংবাদিক। তবে সিরিয়ায় হাবাক লিখলেন অন্য এক গল্প, এক অনন্য ইতিহাস।

দিনটি ছিল শনিবার। পেশার তাগিদে সিরিয়ার আলেপ্পোয় ছবি তুলতে গিয়েছিলেন আলকাদের হাবাক। হঠাৎ শুনলেন বিস্ফোরণ হয়েছে শরণার্থীদের বাসের বহরে। এ হামলায় নিহতের সংখ্যা ছুঁয়েছিল ১২৬। যার মধ্যে অর্ধেকই ছিল শিশু। ঘটনাস্থলে গিয়ে হাবাক ক্যামেরা চালুও করেছিলেন। কিন্তু পারেননি তিনি। ছবি তোলা আর হয়ে ওঠেনি হাবাকের। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ওই সময়ের অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে হাবাক বলেছেন, ‘দৃশ্যটা ছিল ভয়াবহ! বিশেষ করে আমাদের সামনে বাচ্চাগুলো কাতরাচ্ছিল। কেউ কেউ নিথর পড়েছিল। তাকাতেই পারছিলাম না। ফলে আমি ও আরও কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, ছবি পরে তোলা যাবে। আগে আহতদের উদ্ধার করতে হবে।’

আহতদের উদ্ধারে ছুটে গিয়েছিলেন হাবাক। হামলার পর প্রাণের স্পন্দন খুঁজতে খুঁজতে এক সময় এটা ছেলেকে পেয়ে যান তিনি। আহত ছেলেটির বুকে তখনও শোনা যাচ্ছিল প্রশ্বাসের শব্দ। সিএনএন-এর সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে হাবাক বলেন, ‘ছেলেটি আমার হাত ধরে ছিল শক্ত হাতে এবং তাকাচ্ছিল আমার দিকে।’ হাবাক ছেলেটিকে কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে রেখে আরও আহতদের খোঁজে দৌঁড়ে যান। গিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা এক শিশুর মৃতদেহ দেখতে পান। এবার ভেঙে পড়েন তিনি।

আরেক শিশুকে মৃত পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাবাক

নিজের ওই সময়কার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে হাবাক বলেন, আমি আবেগে ভেঙে পড়েছিলাম। আমি ও সহকর্মীরা যা দেখেছি তা ছিল অবিশ্বাস্য।

হাবাক যখন শিশুটিকে উদ্ধারে মগ্ন তখন পাশে থাকা আরেকজন আলোকচিত্রী মোহাম্মদ আল-রাগেব দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করেন। তিনি কেন যাননি বাচ্চাদের উদ্ধারে- জানতে চাইলে আল-রাগেব বলেন, ‘স্বচ্ছতার জন্য আমি সবকিছু রেকর্ড করতে চেয়েছিলাম। একজন তরুণ সাংবাদিক আহতদের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রেখেছেন বলে আমি গর্বিত।’

সহকর্মীদের তোলা ছবিতে দেখা যায়, একটি শিশুর দেহের পাশে হাঁটু মুড়ে বসে হাউহাউ করে কাঁদছেন হাবাক। নামানো হাতে নিজের ক্যামেরাটা যেন মানবিক বোধের কাছে পেশাগত বোধের পরাজিত হওয়ার আখ্যান বলে চলেছে । সূত্র: সিএনএন, বিজনেস ইনসাইডার, জেরুজালেম অনলাইন।

/এএ/বিএ/

সম্পর্কিত
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে বাস, প্রকৌশলী নিহত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ