ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার একটি স্কুলের ছাত্রীরা ছয় দিন ধরে অনশন করে চলেছে। কোনও রাজনৈতিক কারণে নয়, তাদের এ অনশন স্কুলের জন্য। নিত্যদিনের যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
গ্রামপ্রধান সুরেশ চৌহান জানান, উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে পড়ার জন্য ছাত্রীদের তিন কিলোমিটার দূরের কানওয়ালি গ্রামে যেতে হয়। ওই পথে যাওয়ার সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নিত্যদিনের কথা বলে অনশনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।
ছাত্রীদের মনে ভীতি রয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে পড়ার জন্য গ্রামের বাইরে গেলে তাদেরও যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হবে। সে কারণে নিজেদের স্কুলকে উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করার দাবিতে অনশন চালিয়ে যাচ্ছে হরিয়ানার রেওয়ারি জেলার গোঠদা টাপ্পা দাহিয়া গ্রামের সরকারি স্কুলের ছাত্রীরা।
সুরেশ চৌহান আরও বলেন, গ্রামের স্কুলটিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি চালু করার দাবিতে নবম ও দশম শ্রেণির ৮৬ জন ছাত্রী ৬ দিন ধরে বিক্ষোভ করছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন অনশন করছে।
অনশনরত ছাত্রীরা জানিয়েছে, পাশের গ্রামে উচ্চ-মাধ্যমিকে পড়ার জন্য যাওয়ার পথে প্রায়ই তাদের উদ্দেশ্য করে নানা ধরেনর অশ্লীল ও কটু মন্তব্য ছুড়ে দেয় কিছু ছেলে। জেলার কর্মকর্তারা মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি বলে ছাত্রী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, শিশু যৌন নির্যাতনের দিক দিয়ে সবচেয়ে উপরের দিকে রয়েছে হরিয়ানা। গত কয়েক বছরে এ রাজ্যে ভ্রূণ হত্যাসহ বেশ কিছু ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনা সামনে এসেছে।
তবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ধরমবীর বালরোডিয়া জানান, ‘উচ্চ-মাধ্যমিক স্তর চালু করার জন্য নবম ও দশম শ্রেণিতে অন্তত ১৫০ জন শিক্ষার্থী আবশ্যক। কিন্তু ওই স্কুলে রয়েছে মাত্র ৮৬ জন শিক্ষার্থী।’
ছাত্রীদের এ অনশনের ষষ্ঠ দিনে অবশেষে পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসনও। হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী রাম বিলাস শর্মা আশ্বাস দিয়েছেন, ‘এই স্কুলেই একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা চালু করা হবে। ওই স্কুলে গিয়ে রাম বিলাস শর্মা বলেন, সরকার সব মেয়েকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর এজন্য হরিয়ানা সরকার তাদের এ দাবি মেনে নিচ্ছে।’
তবে মুখের আশ্বাসেই প্রতিবাদ থামিয়ে দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। সুরেশ চৌহান জানান, ‘যতক্ষণ না মন্ত্রীর তরফ থেকে লিখিত আদেশ পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন থেকে সরে আসবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্রীরা।’ ছাত্রীদের এই কর্মসূচিতে আরো কিছু অভিভাবকরাও সমর্থন জানিয়েছেন।
/এসএ/