X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

সীমান্তে বাড়ছে পাচারকারীদের দৌরাত্ম, প্রধান টার্গেট কিশোরীরা

বিদেশ ডেস্ক
১৭ মে ২০১৭, ১০:৩৬আপডেট : ১৭ মে ২০১৭, ১০:৫২
image

সীমান্তে বাড়ছে পাচারকারীদের দৌরাত্ম, প্রধান টার্গেট কিশোরীরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে বাড়ছে পাচারকারীদের দৌরাত্ম। কখনও প্রলোভন কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে অবাধে পাচার করা হচ্ছে কিশোরীদের। প্রকাশ্যে পাচারকারী কিংবা তাদের দালালরা সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামবাসী পুলিশ কিংবা সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফকে কিছু জানায় না। ক্ষমতাবান পাচারকারীদের ভয় পায় তারা। পাচারের কথা জেনেও চুপ থাকেন । শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করা এক ভারতীয় বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় এসব কথা উঠে এসেছে।

পশ্চিমঙ্গের সীমান্ত এলাকার আটটি গ্রামে 'জাস্টিস এন্ড কেয়ার' নামের সংস্থার তত্ত্বাবধানে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয় এর ফলাফল। 'জাস্টিস এন্ড কেয়ার' নামের সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার পরিবারগুলোর একাংশ তাদের সন্তানদেরকে পাচারের কবল থেকে বাঁচাতে বাল্যবিয়ের পথ বেছে নিচ্ছেন। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর প্রায় তিনশ কিশোরী এবং প্রায় দেড়শ মায়ের সঙ্গে কথা বলে এই সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। উদ্যোগটি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর। সীমান্ত অঞ্চলে বাসকারী বাংলাদেশিদের অভ্যন্তরে তাদের সম্পর্কে যে নেতিবাচক ভাবনা রয়েছে, তা থেকে সীমান্তবাসীকে বের করে আনতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে তারা।

সমীক্ষকরা জানাচ্ছেন, মূলত প্রলোভন দেখিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে, এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে, শিশু-কিশোরী পাচার হচ্ছে। 'জাস্টিস এন্ড কেয়ার' সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক সায়ন্তনী দত্ত বিবিসিকে বলেন, 'আমাদের সমীক্ষার একটা উদ্দেশ্য ছিল এটা জানার যে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ পাচারের ব্যাপারে কতটা জানেন। আমরা দেখেছি তারা সবকিছুই জানেন। কিন্তু তা স্বত্ত্বেও চুপ করে থাকতে বাধ্য হন। পুলিশ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাচারের ব্যাপারে জানাতে চান না ভয়ে। পাচারকারী বা তাদের দালালরা ওই এলাকাতেই ঘোরে আর তারা ভীষণ ক্ষমতাবান। তাদের যদি শাস্তি না হয়, তখন যিনি খবর দিয়েছেন, তাকেও বিপদের মুখে পড়তে হবে। এই আশঙ্কাতেই চুপ করে থাকেন সবাই।'

সমীক্ষায় দেখা গেছে, সীমান্ত অঞ্চলটি মেয়েদের কাছে, বিশেষত কিশোরীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ কখনও তাদের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে, কখনও আবার অপহরণ করে বা মাদক খাইয়েও মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। অনেক কিশোরী সমীক্ষকদের জানিয়েছে যে তারা স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশনি পড়তে যেতেও ভয় পায়। 'সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অনেক বাবা-মা তাঁদের মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন যাতে তারা বিপদে না পড়ে, অর্থাৎ পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়ে,' বিবিসিকে জানিয়েছেন সায়ন্তনী।

আবার বাংলাদেশ থেকে যাদের পাচার করে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা দেখেছেন যে পাচার হবার বিষয়টি তারা বুঝতেই পারেনি।কিশোরীরা অনুমান করতে পারেনি যে তাদের অন্য দেশে আনা হয়েছে। সায়ন্তনী দত্তর কথায়, 'তারা হয়তো ভেবেছে বাংলাদেশেরই কোনও জায়গায় কাজের জন্য বা বিয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতের বেলা যে তাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা পরের দিন সকালে তারা টের পেয়েছে। কিন্তু এদেশে কার কাছে সাহায্য চাইবে, সেটা তারা জানে না।'

সমীক্ষায় শিশু পাচারের বিষয়ে বিএসএফকে আরও সংবেদনশীল বিবেচনাবোধ নিয়ে কাজের আহ্বান জানিয়েছে ‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার'। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী যেভাবে বিএসএফ সীমান্ত এতদিন পাহারা দিয়ে এসেছে, সে পদ্ধতি বদল করতে হবে। সীমান্ত চৌকিগুলিকে পাচারের শিকার হওয়া শিশু-কিশোরীদের কাছে আরও মিত্রভাবাপন্ন করে তুলতে হবে। বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের সঙ্গেও যৌথভাবে পাচার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএসএফ'র দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল পি এস আর আঞ্জানিয়েলু বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, 'কারা পাচারের শিকার হয়ে আসছে, আর কারা অনুপ্রবেশ করছে - এই পার্থক্য করাটা বিএসএফ সদস্যদের কাছে খুবই কঠিন। পাচারের বিষয়ে কিছুটা জানা থাকলেও অনেক সময় আমাদের ভুল হচ্ছে, কারণ আমাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ নেই এ বিষয়ে। সবেমাত্র এই বিষয়টা জানতে বুঝতে শুরু করেছি আমরা।'

বাংলাদেশ সীমান্তের মতো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তের গ্রামবাসীদের বিএসএফের প্রতি বিরূপ মনোভাব কাটিয়ে উঠার উপায় নিয়ে গবেষণা করতে দিল্লিতে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাস্টিস এন্ড কেয়ারকে দিয়ে এই সমীক্ষাটি সম্পন্ন করিয়ে বিএসএফই ভাবছে, সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিএসএফের প্রতি যে একটা বিরূপ মনোভাব রয়েছে, শিশুপাচার রোধ নিয়ে কাজ করলে সেই মনোভাবও কাটিয়ে ওঠা যাবে। উল্লেথ্য, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সংবেদনশীল করতে সীমান্তরক্ষীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে । প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সীমান্ত-প্রহরীদের নিয়মিত দেখা-সাক্ষাত এবং মত বিনিময় করানো হচ্ছে সীমান্তে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

/বিএ/ 

সম্পর্কিত
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সর্বশেষ খবর
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে ১৩৭
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কানে ডিভাইস নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে থেকে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়