X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যানচেস্টার হামলার পর অস্বস্তিতে যুক্তরাজ্যের লিবীয় কমিউনিটি

বিদেশ ডেস্ক
২৬ মে ২০১৭, ১৪:১৭আপডেট : ২৬ মে ২০১৭, ১৪:১৮
image

ম্যানচেস্টারের লিবীয় কমিউনিটির জন্য ডিডসবুরি মসজিদটি মিলনকেন্দ্র ম্যানচেস্টার হামলায় নিজেদের দেশের নাগরিক সালমান আবেদির জড়িত থাকার খবরটি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত লিবীয়দের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। ম্যানচেস্টারের লিবিয়ান কমিউনিটি জানিয়েছে, এ খবরে তারা মর্মাহত ও বিস্মিত। কেন এবং কিভাবে সালমান জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হয়েছে সে প্রশ্নের উত্তরও খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার কাছে এ ঘটনা নিয়ে তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
২২ মে সোমবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানা গ্র্যান্ডের কনসার্টে চালানো ওই হামলায় ২২ জন নিহত আর ৬৪ জন আহত হয়। হামলার প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা স্থগিত হয়ে যায়। তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠে সারাবিশ্বে। প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা সূত্র দাবি করে, এটা এক ব্যক্তির সংঘটিত (লোন উলফ) হামলা। তবে মঙ্গলবার সেই অবস্থান থেকে সরে তারা হামলায় একাধিক মানুষের জড়িত থাকার সন্দেহের কথা জানায়। আত্মঘাতী হামলাকারীকে সালমান আবেদি হিসেবে শনাক্ত করে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। লিবীয় বংশোদ্ভূত ২২ বছরের তরুণ সালমান।  
হামলার পর শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ সংবাদপত্র দাবি করেছিল, সালমান যে ডিডসবুরি মসজিদে প্রায়ই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে নামাজ পড়তে যেত, সেখানকার ইমাম তাকে সন্দেহ করতেন। সালমানের আইএস-এর প্রতি দুর্বলতা রয়েছে বলে টের পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ইমাম এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। অবশ্য, পরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ফাঁসকৃত তথ্যে জানা যায়, ম্যানচেস্টারের লিবীয় কমিউনিটি ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনীকে সালমানের আইএস সংশ্লিষ্টতার কথা জানিয়েছিল। সালমানকে নিয়ে কমিউনিটি আগে থেকে কিছু আঁচ করতে পেরেছে কিনা কিংবা তা প্রতিরোধে কমিউনিটির লোকজন কোনও ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা- আল জাজিরার পক্ষ থেকে তা জানতে চাওয়া হয়। এদের মধ্যে, ডিডসবুরি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতেন এমন লোকজনও ছিল।
তারা জানান, বাবা রমজানের সঙ্গে প্রায়ই ডিডসবুরি মসজিদে আসতো সালমান। আলি মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ম্যানচেস্টারের লিবীয় কমিউনিটি খুব ঘনিষ্ঠ। সেকারণে যদি আপনি কাউকে সরাসরি নাও চিনে থাকেন তারপরও তার পরিবার সম্পর্কে জানাশোনা থাকে। আমরা ব্যক্তিগতভাবে সালমানের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানি না। আমি তাকে কয়েকবার এখানে দেখেছি, ম্যানচেস্টারে ফুটবল খেলতে দেখেছি। তাকে খুব স্বাভাবিক মানুষ বলে মনে হতো। আমি মনে করি, কেউ যদি আইএস সমর্থক হয় তবে বোঝা যায়, কিন্তু তার মধ্যে তেমন কোনও চিহ্ন ছিল না।’

সালমান আবেদি সম্পর্কে আহমদ নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি প্রায়ই দেখতেন সালমান ক্যানাবিসের প্রতি আসক্ত। স্থানীয় সংবাদপত্র ম্যানচেস্টার ইভেনিং নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার আরেক প্রতিবেশীও একই দাবি করেছিলেন।  

প্রতি শুক্রবার ডিডসবুরি মসজিদের খুতবায় আইএস কতোটা খারাপ তা বর্ণনা করা হতো। সালমানের ওই প্রতিবেশী জানান, ‘আমাদেরকে এখন খুঁজে বের করতে হবে সে কী বিশ্বাস করতো এবং মসজিদকে ঘৃণা করতো কিনা। তবে এটা স্পষ্ট, অন্য লিবীয়রা যেত বলেই মসজিদে সালমানকেও দেখা যেত।’

ম্যানচেস্টার হামলায় নিহতদের স্মরণ
কোথায় এবং কিভাবে সালমান আইএস-এর প্রতি অনুরক্ত হলো এবং হামলার প্রশিক্ষণ নিলো তা যুক্তরাজ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ এর মূল কারণ হিসেবে লিবিয়ার বিপ্লব এবং দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতাচ্যুতিকে দায়ী করছেন। তবে স্থানীয়রা এ ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন। মাহমুদ নামের একজন বলেন ‘একটি বিষয় বুঝতে হবে। তাহল যে বিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে তা ইসলামি বিপ্লব ছিল না।’

তার দাবি, ম্যানচেস্টারে বসবাসরত অনেক লিবীয় গাদ্দাফিবিরোধী লড়াইয়ে যে যুক্ত হয়েছিল তা ঠিক, কিন্তু সালমান আবেদির মতাদর্শ গড়ার ক্ষেত্রে ওই যুদ্ধের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তা অবান্তর।

মাহমুদ বলেন, ‘ওই লড়াই এক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।’

মাহমুদের দাবি, সালমান হয়তো লিবিয়ার বর্তমান অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে দেশটি ভ্রমণের সময় আইএস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

ম্যানচেস্টারের সন্দেহভাজন আত্মঘাতী হামলাকারী সালমান আবেদির বাবা-মা ছিলেন লিবীয় শরণার্থী। সাবেক একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির রোষানল থেকে বাঁচতে লিবিয়া ছেড়ে পরিবারকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন সালমানের বাবা রমজান। সেখানে ২৫ বছর কাটানোর পর আবারও লিবিয়ায় ফিরে যান রমজান। ম্যানচেস্টারে জন্মগ্রহণকারী সালমান আবেদি স্থানীয় একটি স্কুলে পড়াশোনা করতো। এরপর সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হয় সে। কোর্স শেষ করার আগেই সে ঝরে পড়ে। বেশ কয়েকবার লিবিয়ায় আসা-যাওয়া করেছে সে। 

ম্যানচেস্টারে লিবীয় কমিউনিটিতে যারা থাকেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। সাবেক নেতার সঙ্গে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি না মেলায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারা। কেউ কেউ আছেন যাদের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর সম্পর্ক আছে। আবার গাদ্দাফির শাসনামলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা কিছু বামপন্থী লোকজনও যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিয়েছেন।

২২ মে ম্যানচেস্টারের হামলায় সালমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর কমিউনিটি এখন ভাবছে কিভাবে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যায়।

/এফইউ/

সম্পর্কিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক