প্যারিস জলবায়ু চুক্তির প্রতি শনিবার নিজেদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি সেভেন এর ছয়টি সদস্য রাষ্ট্র। তবে এ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটি তার এ সংক্রান্ত নীতি পুনর্মূল্যায়ন করছে। ট্রাম্প বলেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন দেবে কি দেবে না; সে ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ট্রাম্পের মনোভাবকে মাথায় রেখেই জলবায়ু চুক্তির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে জি সেভেনভুক্ত বাকি ছয়টি দেশ।
শনিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি নিয়ে আমি আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।’
জলবায়ু চুক্তির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত ছাড়াও শরণার্থী সমস্যা নিয়ে আফ্রিকান রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জি সেভেন নেতারা। ইতালির সিসিলির তাওরমিনাতে চলমান জি সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তিউনিসিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজার এবং নাইজেরিয়ার নেতারা যোগ দেবেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকান নেতৃবৃন্দ এবং লাখ লাখ শরণার্থীর মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যেই সিসিলির তাওরমিনাকে সম্মেলনের ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছে ইতালি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তন। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো শুক্রবার জি সেভেন সম্মেলনে অংশ নেন ট্রাম্প। শনিবার তার প্রথম বিদেশ সফরেরও শেষ দিন।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটেরেসও সিসিলিতে ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ট্রাম্পের বিরোধী অবস্থান সত্ত্বেও এ চুক্তি টিকে যাবে বলে তিনি মনে করেন। শরণার্থী ইস্যুতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন গুটেরেস।
শুক্রবার জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর এ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এক হাজার ৫৩০ জন শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। ইতালি চায় ধনী দেশগুলো আফ্রিকান দেশগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা দেবে। আর তখন আফ্রিকার তরুণরা দেশের ভেতরেই কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে। তাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দিতে হবে না।
জলবায়ু পরিবর্তন তথা বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ইতোপূর্বে ‘স্রেফ চীনের ধোঁকাবাজি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ট্রাম্প। তবে চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক প্রধান প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা বলেন, ট্রাম্পের নেতিবাচক অবস্থান সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশের সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমিয়ে আনতে আগ্রহী। জাতিসংঘ ও চীনের নেতৃত্বে ২০১৬ সালে বিশ্বে সৌর বিদ্যুতের সক্ষমতা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। এছাড়া অনেক দেশের সরকারই বৈশ্বিক উষ্ণতা কমিয়ে আনতে আইন পাস করছে। সরকারগুলোর এ গতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এখনও পুরো দুনিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। যখন চুক্তিটি গৃহীত হয় তখন সবগুলো দেশই এটা সমর্থন করেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা প্যারিস চুক্তিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন।
প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের এই বিপন্নতার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ ২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় রয়েছে- গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা। প্রতি ৫ বছর অন্তর ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ রোধে প্রত্যেকটি দেশের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে গরিব দেশগুলোকে ধনী দেশগুলোর ‘জলবায়ু তহবিল’ দিয়ে সাহায্য করা।
২০১৫ সালের নভেম্বরে ওবামা প্রশাসন ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শুরু থেকেই ওই প্যারিস চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের আগে থেকেই তাকে জলবায়ু চুক্তিবিরোধী অবস্থানে দেখা গেছে। একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসতে অঙ্গীকারবদ্ধ ট্রাম্প। তবে তিনি বের হয়ে আসার উপায় খুঁজছেন। তবে চুক্তিটি সমঝোতামূলক হওয়াতে কেউ এটি না মানলে কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, ভয়েস অব আমেরিকা, রয়টার্স।
/এমপি/