X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়েমেনে রমজান: দিনে রোজা, রাতে ক্ষুধার যন্ত্রণা

বিদেশ ডেস্ক
০৫ জুন ২০১৭, ১৮:২১আপডেট : ০৫ জুন ২০১৭, ২৩:২২

ইয়েমেনে রমজান: দিনে রোজা, রাতে ক্ষুধার যন্ত্রণা ৫৮ বছরের ফাতিমা সালাহ রমজান মাসে রোজা থাকা অনেকের মতো দিনের বেলা ঘুমান না। সারাদিন জেগে থাকেন এই আশায় যে, সানায় আসা নিকটবর্তী এলাকার মানুষ বা স্থানীয় দোকানদার কেউ তাকে কিছু খাবার দিয়ে যাবে। যা দিয়ে পরিবারের লোকেরা রাতে খেতে পারবে।

অশ্রুসজল চোখে ফাতিমা বলেন, আমি বিধ্বস্ত ও তৃষ্ণার্ত। কারণ দীর্ঘক্ষণ ধরেই আমি হাঁটছি। সেহরিতে ভালো মতো কিছু খেতেও পারিনি।

নিজের অতীতের কথা স্মরণ করে ফাতিমা বলেন, আগে বেশ ভালো জীবন-যাপন করতাম। রমজান ছিলো বছরে আমার সবচেয়ে ভালো মাস। যুদ্ধ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। গত রমজানও এতো খারাপ ছিল না। কিন্তু এবার বেঁচে থাকাটাই অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন আমরা দিনের রোজা রেখে পার করি ঠিকই কিন্তু রাতের বেলা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতরাই।

মুসলিম বিশ্বে পুরো রমজান মাস আনন্দের ও ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করেন। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে রমজান নিয়ে ন্যূনতম উচ্ছ্বাস নেই। জাতিসংঘ সম্প্রতি সতর্ক করেছে এই বলে যে, ১ কোটি ৭০ লাখ ইয়েমেনি দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি মানবিক সহায়তা চেয়েছে।

দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধটি লাখো ইয়েমেনি পরিবারকে দারিদ্র্য ও অসহায় করে তুলেছে।

ইয়েমেনে রমজান: দিনে রোজা, রাতে ক্ষুধার যন্ত্রণা

নিজের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে ফাতিমা বলেন, এখন রমজান মাস চলছে অথচ আমি দারিদ্র্যতায় গলা পর্যন্ত ডুবে আছি। আমার পরিবারের জন্য খাবার প্রয়োজন। আমাকে বাসা ভাড়ার জন্য ২০ হাজার রিয়াল (৬৫০০ টাকা) দিতে হবে। আমার দুর্ভাবনা জুড়ে এখন ক্ষুধা আর উচ্ছেদের আতঙ্ক।

এবার রমজান শুরু হয়েছে এমন সময় যখন দেশটিতে কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে, এপ্রিলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৫৩০জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে কলেরায়। কলেরায় আক্রান্ত আছেন প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ।

দশ সন্তানের বাবা মোহামেদ আল-মোখদারি বাস করেন সানায়। তার সন্তানেরা কলেরা আক্রান্ত না হওয়ায় কৃতজ্ঞ তিনি। কিন্তু পবিত্র রমজান মাসে ইয়েমেনের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। বলেন, রমজান আমাদের জন্য বিশেষ সময়। দুর্ভাগ্যজনক হলো আমি এবার কোনও বিশেষত্ব অনুভব করছি না। পুরো ইয়েমেনে যুদ্ধের কারণে খাবারের দাম আকাশছোঁয়া, উপার্জন হয়ে পড়েছে প্রচণ্ড কঠিন।

দাড়িতে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে এই বৃদ্ধ জানান, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে তার দুই ছেলে রাস্তায় প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানো শুরু করেছে। পরে তারা সেগুলো বিক্রি করে অল্প কিছু অর্থ উপার্জন করে। মোখদারি নিজে বেকার। ফলে রমজানে তেমন কোনও ভালো খাবার তার পরিবারের জোটে না। সারাদিন রোজা থাকার পর ইফতার সারতে হয় দইয়ের মতো একটি খাবার ও রুটি দিয়ে।

ইয়েমেনে রমজান: দিনে রোজা, রাতে ক্ষুধার যন্ত্রণা

মোখদারি বলেন, এভাবে বেঁচে থাকা কঠিন। খুব কম সময়েই আমরা চাল ও রুটি পাই। রমজানে মাংস, মুরগি এবং সবজি ও ফল খাওয়া এখন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। একসময় রমজানে আশপাশের মানুষ আমার বাসায় আসতেন মজাদার ও সুস্বাদু খাবারের জন্য। ইয়েমেনে সবার বাড়িতেই এমন প্রচলন ছিল।

সানায় একটি মুদির দোকান চালান আব্দুলতিফ আল-হুবাইশি। তিনি জানান, রমজানে খাবারের জিনিসপত্র বিক্রি কমে গেছে একেবারে। গত বছরের তুলনা বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যারা দোকানে তারা শুধু চিনি, ময়দা আর চাল কিনতে আসছে। মিষ্টি, বাদাম আর সবজির মতো খাবার দ্রব্য কেউ কিনছে না। কারণ খেয়ে বেঁচে থাকার জিনিসগুলোই কিনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।

এই দোকানদার জানান, একসময় এখানে দোকানের সারি ছিল। গত রমজানে যতগুলো দোকান ছিল এখন তাও নেই। বেশিরভাগ পরিবারই নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারছে না। ফলে দোকানগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছে।

আল-হুবাইশি বলেন, এবারের রমজান মাস একেবারে নজিরবিহীন। ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরুর পর এটি তৃতীয় রমজান। এবার কষ্টকর হয়ে পড়েছে কারণ সরকারি কর্মচারীরা প্রায় ৯ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সাধারণত রমজানে ইয়েমেনের মানুষ অনেক বেশি খরচ করতেন। কিন্তু এবার তাদের খরচ করার মতো কিছু নেই।

ইয়েমেনি অর্থনীতিবিদ সাইদ আব্দুলমোমিন স্বীকার করেছেন, এ বছরের রমজানে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মজুরি বকেয়া রয়েছে, জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া ও ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে আছে। এছাড়া ইয়েমেনের মুদ্রার দরপতনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

রমজান মাত্র একমাস হলেও ইয়েমেনের মানুষের এ দুর্ভোগ কতদিন চলছে তা কেউ জানে না। সূত্র: আল জাজিরা।

/এএ/

সম্পর্কিত
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসটির ফিটনেস ছিল না
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট