গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুনের ঘটনায় ৭৯ জনকে নিখোঁজ হিসেবে শনাক্ত করে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এরআগে সবশেষ ৫৮ জন জনকে নিখোঁজ শনাক্ত করে পুলিশ জানিয়েছিল, সম্ভবত তাদের কেউ বেঁচে নেই। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এই খবর দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সামনের কয়েক সপ্তাহ উদ্ধার অভিযান চলাকালে এই সংখ্যায় পরিবর্তন আসতে পারে, তবে তা ব্যাপক হবে না।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ জুন) রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে। আগুনের তাণ্ডবে ভবনটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গ্রেনফেল টাওয়ারের ভয়াবহ আগুনকে নিছক একটি দুর্ঘটনা বলে মানতে পারছেন না ব্রিটিশরা। একে কতৃপক্ষের গাফিলতি হিসেবে দেখছেন তারা।
এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে কেবলমাত্র ৫জনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। লন্ডন মেট্রোপলিট্রন পুলিশের একজন মুখপাত্র কমান্ডার স্টুয়ার্ট ক্যান্ডি বলেছেন,. ‘গত ৪৮ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণ আর অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে বোঝা গেছে, যারাই নিখোঁজ হয়েছে; ধরে নিতে হবে তারা আর কেউ বেঁচে নেই’। তিনি বলেন, ‘এ এক জটিল সময়। দুঃখের সঙ্গে আজ সকাল ৮টায় এসে আমাকে বলতে হচ্ছে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। যে ৭৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের সম্ভাব্য মৃত্যুকে স্বীকার করে নিতে আমাদের’।
স্থানীয় এক কমিউনিটি ব্লগ গ্রেনফেল টাওয়ারের সম্ভাব্য আগুনের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করেছিল দেড় বছর আগে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ থাকা এক বস্তু ভবনটির সংস্কাকজে ব্যবহার করা হয়েছে। লন্ডনবাসী মনে করছে,থেরেসা সরকারের আবাসন মন্ত্রণালয় আগুনের ঝুঁকিজনিত নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে ।
১৯৭৪ সালে নির্মিত ভবনটিতে ১২০টি ফ্ল্যাট ছিল। বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ওই ভবনে ৪০০ থেকে ৬০০ মানুষের বসবাসের কথা জানিয়েছে। তবে আগুন লাগার পর ঠিক কতজন বের হতে পেরেছেন বা কতজন আটকা পড়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। ভবনের ভেতরে বহু মানুষের জিম্মি হয়ে থাকার খবর জানিয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বিতর্কিত বৃষ্টিপ্রতিরোধী প্রলেপে মোড়ানো ভবনটিতে এখন সারি সারি ভস্মীভূত বস্তু।
উদ্ধারকাজের দ্বিতীয়দিনেই পুড়ে যাওয়া আসবাবগুলোর এমন অবস্থা যে বোঝার উপায় ছিল না কোনটা কী জিনিস। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভস্মীভূত জানালা, গলে যাওয়া টেবিল আর বিভিন্ন আসবাবের সমাহার। দেখা গেছে অর্ধেক কাপড়ে ভর্তি ওয়াশিং মেশিন, যেন ভবনের বাসিন্দাদের জীবনের আর্তির এক আধমরা সাক্ষী। এইসব ভস্মীভূত বস্তুর মধ্যে যে মানুষের মরদেহ নেই তা কে বলতে পারে?
মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কান্ডি আগেই স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, নিহতদের সবার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে না। বলেছেন, ‘দুঃখজনক হলেও একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে; নিহতদের প্রত্যেককে বোধহয় শনাক্ত করতে পারব না আমরা।’
/বিএ/