X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

হরতালে অচল দার্জিলিং: ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
০১ জুলাই ২০১৭, ০১:১২আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৭, ০১:১২

 

দার্জিলিংয়ের মানচিত্র পাহাড়ী এলাকা দার্জিলিং দীর্ঘদিন ধরে চলা হরতালে (বন্‌ধ) কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)-র ডাকে চলা এ হরতালে এরই মধ্যে কয়েকশ কোটি রুপি আর্থিক লোকসান হয়েছে। এরপরও চলমান সংকটে কেন্দ্রীয় বা পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজনৈতিক সমঝোতার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।

পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে চলমান এই হরতাল চতুর্থ সপ্তাহে গড়িয়েছে। দীর্ঘ এই অচলাবস্থার মধ্যে মাত্র ১২ ঘণ্টার বিরতি ছিল। এই বিরতির সময়ে গোর্খা যোদ্ধারা মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা ও চলাফেরার অনুমতি দিয়েছে। সব সরকারি অফিস-দফতর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র গোর্খা যোদ্ধারা সমতল থেকে দার্জিলিং ও সিকিমগামী সব গাড়ি থামিয়ে দিচ্ছে। ফলে একভাবে থেমে গেছে যান চলাচল।

হরতালে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, সিকিমে খাবার, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা চড়া দামে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

পাহাড়ে এবারের অচলাবস্থার বেশ কিছু নতুন ও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এবার বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য বস্তু পরিণত হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা। প্রাইভেটকার চালকরা হামলার শিকার হয়েছেন, গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিনের এই হরতালে মাঝে মাঝেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি পুলিশের জিপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহত হয়েছেন অন্তত ৩ জন। জনমুক্তি মোর্চার দাবি, পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু হয়েছে। যদিও পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এবার গোর্খারা কোনও বিশেষ সুযোগ দেয়নি। এমনকি রমজান মাসে রোজা পালনকারী মুসলিমদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করেনি। ব্যাপক চাপের মুখে শুধু ঈদের দিন কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল। এমনটা এর আগে কখনও ঘটেনি। এবার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা এবারই প্রথম ঘটলো।

এছাড়া নিয়মিত সরকার বা গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি দফতর (বর্তমানে নিষ্ক্রিয়) জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোর্খা নেতারা এসব অগ্নিসংযোগের কথা অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেছেন, দুর্বৃত্তরা ঘটিয়েছে এসব।

পশ্চিমবঙ্গ সিআরপিএফ সদস্যদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আরও কয়েকটি কোম্পানি মোতায়েন করার অনুরোধ জানিয়েছে। পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিকতার দিকে এগুচ্ছে তখন গোর্খারা নিয়মিত প্রতিবাদী মিছিল করছে। সেনাবাহিনী প্রায় তুলে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে।

পাহাড়ে চলমান হরতালে বেশ বিপাকে পড়েছেন পর্যটক ও শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে বাংলাদেশি পর্যটকরা। ইন্দো-বাংলা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানির পরিচালক রঞ্জন সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদের ৪০ শতাংশ হারিয়েছি আমরা। প্রতি মাসে বেশ কয়েক হাজার পর্যটক আসতেন। চলমান পরিস্থিতিতে মানুষ দার্জিলিংয়ের জন্য শুধু যে স্থানীয় ও নর্থ বেঙ্গলের হোটেল বুকিং বাতিল করসেন তা নয় তারা সিকিমও যাচ্ছেন না। পূজাকে কেন্দ্র করে পর্যটন মৌসুম প্রায় শুরু হয়ে গেছে। অনেক মানুষই ডুয়ার্স, জলপাইগুড়ি, লাভা, লোলেগাঁও ও কুচবিহার ভ্রমণ করতে চাইছেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। বাংলাদেশিরা তাদের রিজার্ভেশন নিশ্চিত করতে পারছেন না। বিশেষ বাংলাদেশি এবং যেসব দল ৪/৫ দিনের লম্বা ভ্রমণে আসতে চান তারা আসছেন না।’

এই পর্যটন ব্যবসায়ী আশঙ্কা করছেন চলমান অস্থিতিশীলতার কারণে বেশির ভাগ বাংলাদেশি দার্জিলিং ও সিকিম যাবেন না। শুধু গোর্খা যোদ্ধাদের কঠোর আচরণের জন্যই নয়। খারাপ আচরণের পাশাপাশি কলকাতা থেকে যাওয়া পর্যটকদের আটকে জোর করে অর্থ ছিনিয়ে নিচ্ছে।

রাজ্যের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে শুধু নর্থ বেঙ্গলই ১০০ কোটির বেশি রুপির লোকসান গুনেছে। হোটেল বুকিং বাতিল, বিমানের ফ্লাইট বাতিল, যাতায়াত ও সেবা ব্যবস্থা ধসে পাড়ায় এ ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কয়েকশ শ্রমিক ও কর্মচারী।

সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশিদের পাশাপাশি গুজরাট ও উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যাও কমেছে ব্যাপক হারে। তারাও হোটেল ও ফ্লাইট বুকিং বাতিল করছেন। সাধারণ এসব পর্যটক একই সঙ্গ দার্জিলিং ও সিকিম ভ্রমণ করে থাকেন।

এই সংকটে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবনা চা খাতের লোকসানের ধাক্কা সামলে উঠা। নর্থ বেঙ্গলের দার্জিলিং, ডুয়ার্স, জলপাইগুড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় বার্ষিক চা উৎপাদনের পরিমাণ ৮০ লাখ কেজি। এর মধ্যে ১০/১১ শতাংশ ইউরোপ, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়। দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জাতের চা রফতানি করে বছরে ২১০ কোটি রুপি আয় করে ভারত।

কিন্তু এবার গোর্খাদের আন্দোলনে চা উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন সেকন্ড ফ্লাশ জাতের চায়ের উৎপাদন। নর্থ বেঙ্গলের কয়েকটি চা বাগানের মালিকরা মনে করেন, জিজেএম ইচ্ছা করেই চা খাতকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা দিতে চাচ্ছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি চা বাগানের মালিক বলেন, এটা আগুন নিয়ে খেলা ছাড়া আর কিছু নয়। এটা দেশবিরোধী। মনে রাখা হচ্ছে না আমরা দার্জিলিংয়েই শুধু ৮০টির বেশি চা বাগানের মালিক। এছাড়া কালিমপং, কুরসিওঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও চা বাগান রয়েছে। এগুলোতে প্রায় ২ লাখ মানুষ কাজ করছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন?

চলমান এই সহিংসতা ও অচলাবস্থায় কারা লাভবান হচ্ছেন? প্রথমত নেপালের চা উৎপাদকরা। শোনা যাচ্ছে নেপালের স্বল্প মূল্যের বিভিন্ন জাতের চা দার্জিলিংয়ে পাচার হয়ে আসছে। গোর্খা যোদ্ধাদের একাংশই এই চা পাচারে জড়িত। দার্জিলিংয়ে এনে এসব নেপালি চা উচ্চ মূল্যে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। ভালো মানের চায়ের সরবরাহ বন্ধ থাকায় পর্যটকরা কোনও সন্দেহ না করেই এসব চা কিনছেন।

নর্থ বেঙ্গলের সংবাদমাধ্যমের একটি খবরে বলা হয়েছে, নেপালের কয়েকজন চা উৎপাদক তাদের চায়ে দার্জিলিংয়ের  চা বলে প্যাকেটের গায়ে লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করছে।

এসব সংবাদ এবং নিজের অভিজ্ঞতা ও সঠিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই হয়ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, বিদেশি একটি রাষ্ট্রের সহযোগিতায় গোর্খারা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

/এএ/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী নিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
সর্বশেষ খবর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা প্যাকেজ পাস
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে প্রাণ গেলো একজনের, আহত ১০
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
বেসিস নির্বাচনে ১১ পদে প্রার্থী ৩৩ জন
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সিঙ্গাপুরে রডচাপায় বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক