৩০ জুন মধ্যরাত থেকে ভারতে চালু হয়েছে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)। এক ডজনেরও বেশি কর প্রত্যাহার করে সেগুলোর স্থলে বসছে এই কর। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যে সমস্ত পণ্য-পরিষেবা ব্যবহার করা হয়, তার প্রায় সব কিছুরই দাম নির্ধারণ করবে জিএসটি।
‘এক দেশ, এক কর’— স্লোগানকে সামনে রেখে জিএসটি চালু করতে সংসদের সেন্ট্রাল হলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। জিএসটি'র পুরো নাম ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ বা পণ্য-পরিষেবা কর। ভারতে স্বাধীনতার পরে পরোক্ষ কর ব্যবস্থায় এত বড় সংস্কার আগে হয়নি। আলোচনা শুরু হয়েছিল ১৭ বছর আগে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানায়। বিস্তর দর কষাকষি আর আলাপ-আলোচনার পরে তা চালু হচ্ছে ১ জুলাই থেকে। এই করের প্রভাব পড়বে নিত্যদিনের ব্যবহার্য জিনিসের ওপর। সে বিমানের টিকিট হোক বা প্যাকেটবন্দি আটা। রেস্তোরাঁর বিল হোক বা মোবাইলের রিচার্জ।
বিভিন্ন জিনিসের ওপর করের হার নির্ধারিত হয়েছে ছয়টি— শূন্য, ০.২৫%, ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%।
শুক্রবার রাত ১১টা থেকে ১ ঘণ্টার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সংসদের সেন্ট্রাল হলে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জিএসটি নিয়ে দু'টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি পরপর দেখানো হয়। তারপর জিএসটি নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জিএসটি চালু হওয়ার প্রথম দু’ মাস পর্যন্ত দেরিতে রিটার্ন দাখিলের সুবিধা চালু রাখছে সরকার।
অনুষ্ঠানে প্রণব মুখার্জি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় জানান, অর্থমন্ত্রী হিসেবে জিএসটি-র কর্মযজ্ঞে তার দীর্ঘ দিন সামিল থাকার কথা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেন, স্বাধীন ভারতে পরোক্ষ কর-এ এত বড় সংস্কার কখনও হয়নি। এই রাত তাই ঐতিহাসিক। যার উদযাপন এমন ঐতিহাসিক জায়গায় ছাড়া মানানসই হতো না। এই মুহূর্ত কেন্দ্র, সমস্ত রাজ্য, সব রাজনৈতিক দল এবং এ নিয়ে এর আগে কাজ করা প্রতিটি সরকারের সম্মিলিত প্রাপ্তি ও উজ্জ্বল উত্তরাধিকার।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, ‘এখনও পর্যন্ত গোটা দেশের মোট ৬৫ লক্ষ ব্যবসা নিজেদের জিএসটি-তে নথিভুক্ত করেছে।’ জেটলির মতে, ‘এই করব্যবস্থা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। সংসদের দীর্ঘ বিতর্কের পর বিল পাস হয়েছে। ২৯টি রাজ্য, কেন্দ্র এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত জিএসটি কাউন্সিল বহুবার বৈঠক করে সহমতের ভিত্তিতে এই করের খুঁটিনাটি খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। তাতে উপকৃত হবে গোটা ভারত।’
জিএসটি অনুসারে, এ পর্যন্ত প্রতিটি রাজ্য নিজের মতো করে যেসব কর বসাতো বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার ওপর সেগুলোর পরিবর্তে একধরণের ব্যবসার জন্য সারা দেশে একই হারে কর বসানো হবে।
কেন্দ্রের দাবি– দাম কমবে বহু পণ্য-পরিষেবার, যেমন— চাল, গমসহ প্রায় সমস্ত খাদ্যশস্য, ডাল, আটা, ময়দা, বেসন, পূজা সামগ্রী, দুধ, তাজা শাকসবজি, ফল, মুড়ি, নুন, জৈব সার, উল, চিনি, চা, কফি, গুঁড়ো দুধ ইত্যাদি। চিনি, চা, কফি, গুঁড়ো দুধ, স্মার্ট ফোন, বস্তাবন্দি সিমেন্ট, অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক থেকে ইউনানি, প্রায় সব রকম ওষুধ তৈরির উপকরণ, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি, ক্যাবল টিভি পরিষেবা, ডিটিএইচও থাকছে এই তালিকায়।
প্রতি ক্ষেত্রেই পণ্য বা পরিষেবা যেখানে জোগান দেওয়া, তথা কেনা-বেচা হচ্ছে, জিএসটি বসবে সেখানে। জিএসটি চার নামের হবে— কেন্দ্রের বসানো জিএসটি (সিজিএসটি), রাজ্যের বসানো জিএসটি (এসজিএসটি), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বসানো জিএসটি (ইউটিজিএসটি) এবং ইন্টিগ্রেটেড বা সম্মিলিত জিএসটি (আইজিএসটি)।
উল্টো দিকে, শিল্পমহলের দাবি, দাম বাড়বেও বেশ কিছু জিনিসের। যেমন, কম ও মাঝারি দামের গাড়ি, মোবাইলে টাকা ভরার খরচ, বিমার প্রিমিয়াম, ফ্রিজ-টিভির মতো বৈদ্যুতিক পণ্য, দামি হোটেলের ভাড়া, সোনার গয়না ইত্যাদি।
এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ জিএসটির সূচনা লগ্নের অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস এবং প্রায় সব বিরোধী দল। অনুষ্ঠানে থাকছেন না মনমোহন সিং, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রথম জিএসটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩০ জুন মধ্যরাতে সংসদের বিশেষ অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করবে না। জিএসটির তড়িঘড়ি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে বুধবারই সংসদে সেন্ট্রাল হলে মধ্যরাতের সূচনা অনুষ্ঠান বয়কটের কথা ঘোষণা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। একইভাবে বয়কট করেছে সিপিএম, সিপিআই, সপা, বসপা-র মতো বিরোধী দলগুলিও। সূত্র: ডয়চে ভেলে, বিবিসি বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা।
/এএ/
