এককালের ব্রিটিশ উপনিবেশ কানাডা তার জন্মের ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। দিনটি উপলক্ষে ১ জুলাই শনিবার আনন্দে মেতে উঠেছে কানাডার দশটি প্রদেশ এবং তিনটি টেরিটোরিসহ পুরো দেশ। তবে উদযাপনের আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। আর আনন্দের পাশাপাশি আবার দিনটিকে ইতিহাসের ‘অর্ধসত্য’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদও হয়েছে সেখানে।
হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আবাস হয়ে ওঠা কানাডা একসময় ফরাসি সাম্রাজ্যের উপনিবেশ ছিল । পরে তা চলে যায় ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে। বেশকিছু রক্তাক্ত যুদ্ধের স্মৃতি অতিক্রম করে ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি অর্জন করে কানাডা। ১৮৬৮ সালে কানাডা কনফেডারেশনভুক্ত হয়। কানাডা নামে এই কনফেডারেশনটির যাত্রা শুরু হয় ১ জুলাই। এজন্যই দিনটিকে কানাডা ডে অর্থাৎ কানাডার জন্মদিন হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
১৫০তম জন্ম বার্ষিকীতে উৎসবে মাতোয়ারা তিন কোটি ঊনষাট লাখ কানাডিয়ান। দেশের শহর-গ্রাম-প্রশাসনিক অঞ্চল সবখানে উদযাপনের রং। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে নানান ধারার অনুষ্ঠান। আকর্ষণীয় আতশবাজি, মনোমুগ্ধকর শোভাযাত্রা, চোখ ঝলসানো প্যারেড, আনন্দের নাচ-গান, হ্যাপি বার্থ ডে'র কেক কাটা, সৌহার্দ্যের বারবিউকিউ পার্টির ব্যাপক আয়োজন।
দক্ষিণ মহাসাগর, অ্যাটলান্টিক এবং প্যাসিফিক এই তিন মহাসমুদ্রে পরিবেষ্টিত কানাডা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। অর্থাৎ ৯৯,৭৬,১৮৬ বর্গকিলো মিটার। যার রাষ্ট্রীয় নাম- ডোমিনিয়ন অব কানাডা। কানাডায় ১০টি প্রভিন্স বা প্রদেশ এবং ৩টি টেরিটোরিস রয়েছে। আর জনসংখ্যা মাত্র ৩.৬৬ কোটি মাত্র।
সবচেয়ে বড় আয়োজনটি ওটোয়ায়। সেখানকার পার্লামেন্ট হিলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আশা ছিল, লাখো মানুষের সমাগম হবে সেখানে। তবে বাধ সাধে বৃষ্টি। তারপরও দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন অনেকেই আয়োজনে সামিল হতে। বিবিসির কাছে এদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, মাঝরাতের আতশবাজি শেষ হওয়ার আগে অটোয়া ছাড়ার ইচ্ছে নেই কারও।
কানাডা ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হলেও ব্রিটেনের সাথে ভিন্ন বন্ধন রয়েছে। রাষ্ট্রের প্রতিকী প্রধান হচ্ছেন- ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ। তার অনুকূলে প্রতিনিধিত্ব করেন নির্বাচিত গভর্নর জেনারেল। অবশ্য রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রানির কোন নির্বাহী ক্ষমতা নেই।
কানাডার জন্মকে ১৫০ বছরের ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেখতে চান না কেউ কেউ। জন্মবার্ষিকীতে তারা নেমেছিলেন প্রতিবাদি উদযাপনে। তাদের বক্তব্য: হাজার হাজার বছর ধরে কানাডাকে আজকের জায়গায় এনেছে সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাই ১৫০ বছরের মধ্যে দেশটির জন্মসীমা নির্ধারিত হলে, তা খণ্ডিত ইতিহাস হয়। হয় অর্ধসত্য। জন্মবার্ষিকীর দিনটিকে তারা চান একটি সংলাপের দিন হিসেবে উদযাপন করতে। বহু সংস্কৃতির উদারভূমিকে করে তুলতে চান, আরও মানবিক আর দায়িত্বশীল।
/বিএ/