X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসিডদগ্ধ এক ব্রিটিশ মুসলিম মডেলের লড়াই

বিদেশ ডেস্ক
১৩ জুলাই ২০১৭, ২০:৩২আপডেট : ১৩ জুলাই ২০১৭, ২০:৩৯
image

এসিডে ঝলসে গেছে পুরো মুখ, গলা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ। তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বযে বেড়াচ্ছেন ‘অসহ্য যন্ত্রণা’। যুক্তরাজ্যের হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের আগের চেহারা ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আকুল হয়ে দিন কাটাচ্ছেন রেশাম খান। এসিডদগ্ধ উদীয়মান এ ব্রিটিশ মডেল এরইমধ্যে নিজের ‘অসহ্য যন্ত্রণা’র বর্ণনা দিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। এসিড বিক্রেতাদের জন্য লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা আরোপের দাবিতে করা একটি পিটিশনের প্রতি সমর্থন  জানিয়েছেন তিনি। দোকানপাটে এসিডের সহজলভ্যতার কারণে যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসীদের কাছে এটি নতুন অস্ত্র হয়ে উঠেছে বলে আক্ষেপ করেছেন রেশাম। আর কাউকে যেন তার মতো পরিণতি বরণ না করতে হয় তা নিশ্চিতে কাজ করতে চান বলেও জানান এ মডেল।

রেশাম খান
ঘটনাটি গত ২১ জুনের। ইস্ট লন্ডনের বেকটনে ব্রিটিশ মডেল রেশাম খান (২১) এবং তার চাচাতো ভাই জামিল মুখতারের (৩৭) ওপর এসিড হামলা হয়। তাদের গাড়ি যখন ট্রাফিক সিগন্যালে অপেক্ষমান তখন জানালা দিয়ে এসিড ছুড়ে মারে এক দুর্বৃত্ত। আর তাতে প্রচণ্ডরকমের দগ্ধ হন দুইজনই। ঝলসে যায় মুখ, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ।

এসিড উপকরণ কেনার সুযোগ আরও সীমাবদ্ধ করে আইন পরিবর্তনের দাবিতে একটি অনলাইন পিটিশনের পক্ষে যখন ৩,৬০,০০০ এরও বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ হয়েছে তখনই রেশাম খান একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।

যে দিনটিতে এসিড হামলার শিকার হয়েছেন সেদিন ২১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের কথা ছিল রেশামের। খোলা চিঠিতে রেশাম লিখেছেন: ‘আমার ২১ তম জন্মদিনের কথা একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবার জন্য আমি আবারও আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। অনেক কারণেই এ বয়সটি গুরুত্বপূর্ণ। ভেবে দেখুন, গুরুত্বপূর্ণ এ জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমন যন্ত্রণাদায়কভাবে জখমের মাধ্যমে তা আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে যা আমি কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। আমার পরিকল্পনাগুলোকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়েছে; অসহ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি আমি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তখনই এ চিঠি লিখছি যখন নিজের আগের চেহারা ফিরে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করছি।’

রেশাম খান আরও লিখেছেন, ‘বর্তমানে আমি দুটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এর একটি হলো, পুরোপুরি সুস্থ হওয়া এবং অপরটি হলো, আমি যে রকমের দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তার মধ্য দিয়ে যেন আর কাউকে না যেতে হয়।’

চিঠিতে রেশাম বলেন, ‘হামলা এবং তা নিয়ে মিডিয়া কাভারেজের পর এসিডের মতো উপকরণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি জনগণের নজরে আসে। রাস্তাঘাটে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো গ্যাংগুলো এখন বন্দুক ও ছুরির বদলে এসব উপকরণ ব্যবহার করছে। এসিড কেন নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? কারণ স্টোর ও অনলাইনে এসিডজাতীয় উপকরণগুলো সহজলভ্য এবং মাত্র সাড়ে ৬ পাউন্ড খরচ করেই তা পাওয়া যাচ্ছে। আর এসিড রাখা নিয়ে যে আইনগুলো রয়েছে তাও খুব দুর্বল।’  

রেশামের ওপর এসিড নিক্ষেপকে বিদ্বেষমূলক হামলা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে রেশাম বলেন, ‘আমি সোজা হয়ে বসতে পারি না। একইরকম পরিস্থিতি হতে পেরে এমন ভয় থেকে অন্যরাও ঘরে বসে আছেন। এ সমস্যা দূর করা প্রয়োজন। এসিড সন্ত্রাসের সঙ্গে অভ্যস্ত থেকে মানুষ বেড়ে উঠবে এমন কোনও কিছু আমি এ দেশে চাই না। ভয়টা সত্যিকারের। অপরাধটা সত্যিকারের।’

এসিড উপকরণ ব্যবহার নিয়ে কড়াকড়ি আরোপসহ রেশাম খান একটি পাঁচ দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। এসিড হামলা পরিচালনাকারীদের জন্য কঠোর সাজা এবং ভালো কোনও কারণ ছাড়া এসিড উপকরণ সঙ্গে রাখাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।  

সবশেষ, চিঠিতে রেশাম খান দাবি করেছেন, এসিড উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে ঘনত্বের মাত্রার নির্ভর করে সরকার যেন লাইসেন্স প্রতিবন্ধকতা আরোপ করে। এসিড বিক্রির ক্ষেত্রে সতর্ক ও দায়িত্ববান হওয়ার জন্য খুচরা বিক্রেতাদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে রেশাম খান ও তার চাচাতো ভাই জামিল মুখতারকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জন টমলিনকে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) টেমস ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে শরীরে আঘাত ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর আগে রবিবার ২৫ বছর বয়সী টমলিন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে রাখা হয়েছে এবং ৮ আগস্ট স্নেয়ার্সব্রুক ক্রাউন কোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে।

দাফতরিক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, গত তিন বছরে লন্ডনে এসিড ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটনের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ইংল্যান্ডের অন্য এলাকাগুলোতে এ ধরনের অপরাধের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ ধরনের হামলার ঘটনা ২০১৪-২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬-২০১৭ সালে বেড়েছে। ২০১৪-২০১৫ সালে লন্ডনে এসিড ব্যবহার করে ১৮৬টি হামলা চালানো হয়েছিল। আর ২০১৬-২০১৭ সালে এ ধরনের হামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯৭-তে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ছুরি ও বন্দুকের ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা থাকায় অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য এসিডকে বেছে নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।

/এফইউ/

সম্পর্কিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা