X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে পাচার কিশোরীদের ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন

বিদেশ ডেস্ক
১৫ জুলাই ২০১৭, ১৯:১০আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৭, ১৯:১০

ভারতে পাচার কিশোরীদের ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন তখন সন্ধ্যা, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের নদীতে ভাসছিল একটি মাছ ধরার নৌকা। জেলের জালের স্তূপের আড়ালে শুয়েছিল পায়েল নামে ১৬ বছরের এক বাংলাদেশি কিশোরী। ভারত যাওয়ার উদ্দেশে নৌকায় চেপেছিল সে। সীমান্ত পার হলেই নাচের শিক্ষক হিসেবে একটা চাকরি জুটবে তার, দালালের কাছে এমন আশ্বাস পেয়েই ঝুঁকিটা নিয়েছিল এই কিশোরী।

কিন্তু কয়েকদিন পর তার জায়গা হলো ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের পুনে শহরের একটি পতিতালয়ে! বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের ওই পতিতালয়ের এক বদ্ধ রুমে  নির্যাতনের শিকার হয় সে। এ ব্যাপারে পায়েল রয়টার্সকে জানায়, নিয়মিত মারধর করা হতো সেখানে। এছাড়া প্রচুর পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হতো তাকে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাস ১১ দিন আগে পায়েলকে উদ্ধার করে পুনের এক আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়। কেউ তাকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করবে, এমনটা তার চিন্তায়ও আসেনি ওই সময়। কিন্তু ঘটনাচক্রে তার কপাল খুলে যায়। একই সময়ে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রধান কনস্যুলার মোশাররফ হোসাইন ভারতে পাচার হওয়া বাংলাদেশি নারীদের দেশে ফেরাতে ট্রাভেল পারমিট নিশ্চিতের কাজ করছিলেন। পায়েলের দুরবস্থার তথ্য পাওয়ার পর তাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যবস্থা নেন তিনি।

এ ব্যাপারে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে মোশাররফ হোসাইন বলেন, ‘এখানে আটকে পড়া অনেক বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি আমি। আমাদের ধীরগতির তদন্ত প্রক্রিয়ার কারণে তারা দীর্ঘদিন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আটকে ছিল। তাদের উদ্ধারে আমি দ্রুত কাজ শুরু করি। কেরালায় এক মেয়ের সন্ধান পাই, যে গত সাত বছর থেকে ভারতের একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে দেশে ফেরার প্রহর গুনছিল।’

২০১৫ সালের মার্চে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি মেয়েদের দ্রুত উদ্ধার করে দেশে পাঠানোর জন্য কাজ করছেন মোশাররফ। গত বছরজুড়ে ভারতের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে মেয়েদের উদ্ধার করেছেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে পুনের একটি অলাভজনক ‘রেসকিউ ফাউন্ডেশনে’ পায়েলের সন্ধান পান এ কর্মকর্তা। পায়েলের কাছে সব শুনে তার বাড়ির ঠিকানা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হন তিনি। এরপর গত সপ্তাহে পায়েলের ‘ট্রাভেল পারমিট’ অনুমোদন করেন। এতে আগামী দুই মাসের মধ্যে পায়েল বাংলাদেশে ফিরতে পারবে।

দেশে ফেরার ব্যাপারে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে পায়েল বলেন, ‘আমার দেশে ফেরার কথা শুনে মা কাঁদছিলেন। আমি তাকে বলেছি যে, গত কয়েকমাস আগেও আমি খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম, কিন্তু এখন ভাল আছি।’ পায়েল আরও বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরে যাব বলে আমি অনেক খুশি, আর অন্তত পতিতালয়ে ফিরতে হবে না।’

ভারতে পাচার কিশোরীদের ফেরাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন

পুলিশের সাবেক ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল মোশাররফ এ পর্যন্ত ৪৩৮ জন মেয়েকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন। এর অর্ধেককেই তিনি উদ্ধার করেছেন গত ছয় মাসে। এদের অধিকাংশই আবার উদ্ধার হয়েছে ভারতের দ্বিতীয় জনবহুল নগরী মহারাষ্ট্র থেকে। এত কম সময়ে এত বিশাল সংখ্যক পাচার হওয়া মেয়েকে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করছে ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলো। পাচারকারীরা বাংলাদেশের গরিব মেয়েদের চাকরির লোভ দেখিয়ে ভারতে নিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করে বলে জানায় তারা।

পাচার হওয়া মেয়েদের অনেককেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তাদের ফেরত পাঠাতে অনেক সময় লেগে যায়। যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য প্রায় একযুগ ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারত। এ ব্যাপারে ভারতের সেভ দ্য চিলড্রেন’র প্রোগ্রাম ডিরেক্টর জ্যোতি নাল বলেন, ‘হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্ধারকৃত মেয়েদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া আগের চেয়ে সহজ হয়েছে।’

পুনে ‘রেসকিউ ফাউন্ডেশন’র সুপরিনটেনডেন্ট শিনি পাদিয়ারা বলেন, ‘ট্রাভেল পারমিট আসতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগত আগে। এতদিন অপেক্ষা করে মেয়েরা অস্থির হয়ে যেত। অনেকে পালিয়েও গেছে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত মে মাসে ২২ জন মেয়েকে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বাকি ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনের ট্রাভেল পারমিট ইতোমধ্যে চলে এসেছে। এখন দুই সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে তাদের জন্য ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করা হচ্ছে।’

ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রধান কনস্যুলার হিসেবে মোশাররফ হোসাইন দায়িত্ব নেওয়ার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পেয়েছে বলে জানান ভারতীয় বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, এ কর্মকর্তা নিজে এসব আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন এবং বাংলাদেশে পুলিশের সাহায্যে দ্রুত উদ্ধারকৃত মেয়েদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হচ্ছেন। এরপর তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য ট্রাভেল পারমিট দিচ্ছেন।

দেশে ফেরার ব্যাপারে পায়েল জানান, অন্য ১৭ জন মেয়ের সঙ্গে ট্রেনে করে কলকাতায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। এরপর সেখানকার পুলিশ ভ্যানে করে তাদের বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাংলাদেশের অভিবাসন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাদের নিজ নিজ অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

/এএইচ/এমএ/

সম্পর্কিত
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস, সিপিআই-এম ইন্ডিয়া জোট নয়, বিজেপির এজেন্ট: মমতা
সর্বশেষ খবর
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
দোকান থেকেই বছরে ২ লাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায় সম্ভব
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি