ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে গণিতের নোবেল পুরস্কার ফিল্ডস পদক পাওয়া ইরানি গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানির মৃত্যুতে শোকাতুর ছিল ইরান। মাত্র ৪০ বছরে ক্যান্সারে মৃত্যু হয় তার।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিসেবে মৃত্যু হয় মরিয়মের। তার মৃত্যুর খবর রবিবার প্রকাশ করে ইরানের সবগুলো দৈনিক পত্রিকা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকা ইরানের হিজাব প্রথা ভেঙে মরিয়মের ছবি প্রকাশ করেছে।
ইরানের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, কোনও নারীর ছবি প্রকাশ করা হলে অবশ্যই হিজাব পরিহিত হতে হবে। কিন্তু মরিয়মের মৃত্যুর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হিজাব ছাড়াই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ইরানের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
২০১৪ সালে ফিল্ডস পদক পাওয়ার পর মরিয়মের ছবিতে হিজাব পরিয়ে প্রকাশ করেছিল ইরানের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত একটি সংবাদপত্র। অন্যরা শুধু তার মুখের একটি স্কেচ প্রকাশ করেছিল।
রবিবার প্রকাশিত ইরানি সংবাদপত্রের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে হামশাহরি। দৈনিক পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছবি ছেপে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, যেমন ছিলেন তিনি।
দনইয়া-ইয়ে-এহতেসাদ শিরোনাম করেছে, গণিতের রানির চিরবিদায়। পত্রিকাটিও মরিয়মের হিজাব ছাড়া ছবি প্রকাশ করেছে।
মরিয়মের মৃত্যুতে ইরানসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনেতাই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানিও শোক জানিয়েছেন।
মৃত্যুর পরও মরিয়মের শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার আরেকটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে রবিবার। ইরানের সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য দাবি করেছেন, ইরানি মায়েদের সন্তানদের বিদেশিদের বিয়ের অনুমতি দিতে সংবিধান সংশোধনের। এতে বিদেশিদের ইরানের নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মরিয়ম চেক বিজ্ঞানিকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তার মেয়ে এক অমুসলিমকে বিয়ে করেন। ফলে মরিয়মের মেয়ের ইরানের আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রবিবার অন্তত ৬০ জন এমপি মরিয়মনের মেয়ে যাতে ইরানে আসতে পারেন সেজন্য আইন সংশোধনের দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত মির্জাখানি শনিবার (১৫ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন। মরিয়ম ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক।
২০১৪ সালে মির্জাখানি গণিতের নোবেল প্রাইজ হিসেবে পরিচিত খ্যাত ‘ফিল্ডস’ পদক পান। চার বছর অন্তত এই পদক প্রদান করা হয়। গণিতের ইতিহাসে ফিল্ডস পদক পাওয়া তিনিই একমাত্র নারী। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
/এএ/