উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের কূটনৈতিক সংকটে মধ্যস্ততার অংশ হিসেবে সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান। রবিবার তিনি জেদ্দাতে সৌদি বাদশার সঙ্গে বৈঠক করেন।
কাতারের কূটনৈতিক সংকটে মধ্যস্ততা করতে উপসাগরীয় এলাকায় দুই দিনের সফরে রবিবার সৌদি আরব পৌঁছান এরদোয়ান। এরপর তিনি কুয়েত ও কাতার সফর করবেন।
জেদ্দাতে পৌঁছার পর তাকে স্বাগত জানান অন্যতম রাজ উপদেষ্টা সৌদি প্রিন্স খালিদ আল-ফয়সাল। সৌদি বাদশার পাশাপাশি এরদোয়ান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মেদ বিন সালমানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
তুরস্ক ত্যাগ করার আগে এরদোয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, কাতার সংকট সমাধানের সৌদি আরবের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তিনি আরও বলেন, ‘কাতারকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো একঘরে করায় উপসাগীয় অঞ্চলে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা জিইয়ে রেখে কারও স্বার্থই রক্ষা হবে না।’ ভাইয়ে ভাইয়ে আগুন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ‘শত্রুদের’ অভিযুক্ত করেন।
৫ জুন জঙ্গিবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ। সম্পর্ক পুনর্গঠনে কাতারকে ১৩টি শর্ত বেঁধে দেয় সৌদি নেতৃত্বাধীন ৪ দেশীয় জোট। আমিরাত ওই ৪ দেশের অন্যতম। কাতার শর্তগুলো না মানায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। সংকট শুরুর পর দেওয়া প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, ‘যেকোনও সমাধানই কাতারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’
উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর এই সংকটে কাতারকে শুরু থেকেই সমর্থন করে আসছে তুরস্ক।
কেননা, তুরস্ক ইতিমধ্যেই কাতারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, আবার একই সঙ্গে দেশটি সৌদি আরবের বিপক্ষে অবস্থান নেবে না। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের পক্ষে অবস্থান নিলেও সৌদি আরবের কঠোর বিরোধিতা করবে না তুরস্ক। ২০১৫ সালে সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তুরস্ক-কাতার। এ ছাড়া কাতারে সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করেছে তুরস্ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আরব বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দোহাকে অন্যতম মিত্র হিসেবে আঙ্কারার অবস্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কারণ রয়েছে। গত বছর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সেনা সদস্যদের একাংশের অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টার সময় প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।
অভ্যুত্থান চেষ্টার পর এরদোয়ানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাতারের বিশেষ বাহিনীর ১৫০ সদস্যের একটি ইউনিট তুরস্ক পাঠানো হয়েছিল বলেও জানা গেছে। এছাড়া দুই দেশের সরকারের মধ্যে আদর্শিক ঐক্যও রয়েছে।
মিসরভিত্তিক ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে মনে করে না উভয় দেশই। আবার ইরানের প্রতিও দেশ দুটির দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় একই রকম। দুই পক্ষই স্বীকার করে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তি হলো ইরান। সূত্র: আল-আরাবিয়া, বিবিসি বাংলা।
/এএ/