X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনতে চান ট্রাম্প

বিদেশ ডেস্ক
২৬ জুলাই ২০১৭, ১১:৫৭আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১১:৫৯
image

বারাক ওবামার স্বাস্থ্যবিলের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর  বিকল্প স্বাস্থ্যনীতি হিসেবে ট্রাম্পের ‘আমেরিকান হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট’ এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ওবামাকেয়ার বলে পরিচিত স্বাস্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বাদ দিয়ে ট্রাম্প এই স্বাস্থ্য বিল প্রস্তাব করেন। দুই দফা ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে মাত্র ৪ ভোটের ব্যবধানে পাস হয় বিলটি।মঙ্গলবার ওবামাকেয়ার বাতিলে  বিতর্ক শুরুর অনুমোদনের পর ট্রাম্পের স্থাস্থ্য বিলটি সিনেটের আলোচনায় আসবে। একে আইনে পরিণত করতে নিতে হবে সিনেটেরও অনুমোদন।তবে বিলটি অনুমোদিত না হলেও পূর্ববর্তী ওবামা প্রশাসনের মতো করে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে বিলটি পাশ করার সুযোগ রয়েছে। গত মার্চে ওবামার স্বাস্থ্যবিলের সঙ্গে ট্রাম্পের বিলের তদুলনামূলক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। দুই বিলের মধ্যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য চিহ্নিত করা হয়েছিল প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে। 





নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে যে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনতে চান ট্রাম্প

‘ওবামা কেয়ার’কে প্রতিস্থাপন করে  ‘আমেরিকান হেলথ কেয়ার অ্যাক্ট’- নামের স্বাস্থ্য বিল উত্থাপন করার পর সংস্কারের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শনাক্ত করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। সেগুলো হলো:

১। স্বাস্থ্যসেবা পেতে কাজের বাধ্যবাধকতা
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী, কর্মজীবী ও যারা কাজ খুঁজছেন, তাদের মধ্য থেকে স্বাস্থ্যসেবার গ্রাহক তৈরি করা হবে। আর এ ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যগুলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পেয়েছে।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: কর্মজীবী থেকে কর্মহীন যে কোনও মার্কিন নাগরিক ওই স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভূক্ত হতে পারত। অঙ্গরাজ্যগুলোর স্বাধীন সিদ্ধান্তের ক্ষমতা ছিল না।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: এই পরিবর্তনে আনন্দিত হয়েছে কনজারভেটিভরা, বিশেষত ‘রিপাবলিকান স্টাডি কমিটি’ নামে প্রতিনিধি পরিষদের একটি গ্রুপ। তারা গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছে।

পূর্বের স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের মার্কিন জনগণ, কর্মজীবী ও বেকার উভয়েই ওই স্বাস্থ্যসেবার আওতাভুক্ত ছিলেন। ওবামা প্রশাসনের সময়কার স্বাস্থ্যবিলে অঙ্গরাজ্যগুলো কর্মজীবী ও কাজ খুঁজতে থাকা মার্কিন জনগণের জন্যই স্বাস্থ্যসেবার আবেদন করতে পারত। তবে অঙ্গরাজ্যগুলো স্বাস্থ্যসেবা পেতে কাজের বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে রাজি হয়নি। তবে বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান গভর্নর কর্মক্ষম জনগণ, যাদের শিশু সন্তান নেই, অথবা নিঃসন্তান, তাদের জন্য কাজ করার বাধ্যবাধকতা আরোপের ক্ষমতা অঙ্গরাজ্যগুলোকে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। এবারের স্বাস্থ্যনীতিতে অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ধারণ করবে।

২। স্বাস্থ্যসেবায় ফেডারেল অবদান
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে অঙ্গরাজ্যগুলো শিশু ও ৬৫ বছরের কম বয়সী কর্মক্ষমদের ক্ষেত্রে আংশিক ফেডারেল অনুদান অনুমোদন দিতে পারবে।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: পূর্ববর্তী স্বাস্থ্যনীতিতে সকল রেজিস্টার্ড গ্রাহকদের জন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতো ফেডারেল সরকার।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: এই পরিবর্তনেও সবচেয়ে আনন্দিত হয়েছে রক্ষণশীলরা, বিশেষত ‘রিপাবলিকান স্টাডি কমিটি’ নামে প্রতিনিধি পরিষদের একটি গ্রুপ।

এবারের এই পরিবর্তন ৫২ বছর ধরে চলে আসা স্বাস্থ্যনীতির সঙ্গে এক বিচ্ছেদ। এখানে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তা অঙ্গরাজ্যগুলোকে হতদরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসতে বাধার সৃষ্টি করবে।

৩। বিমা
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: পূর্বের মতো নতুন স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী, বিমার ক্রেতারা তাদের বয়সের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে সেবা ভোগ করবেন।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে ৫০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী মার্কিনিদের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করবে সিনেট। তবে এই স্বাস্থ্যনীতিতে যাদের বার্ষিক আয় ৭৫ হাজার ডলারের বেশি, তারা বিমা করতে পারবেন। বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য বিমা প্রদানকারী কোম্পানি বেশি অর্থ কেটে রাখবে। ওবামা কেয়ারের বেলায় এমন নিয়ম ছিলো না।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী নিম্ন আয়ের বয়োজ্যেষ্ঠ মার্কিনিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

মার্কিন জনগণের এই অংশটা সবচেয়ে বড় মাত্রায় ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল। ওইসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা খুবই ব্যয়বহুল। এই পরিবর্তনে উদারপন্থী রিপাবলিকানদের খুশি হওয়ারই কথা।

৪। ওবামা কেয়ারে করারোপ
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে ওবামা কেয়ার চলতি বছর থেকে করমুক্ত করা হবে।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওবামা কেয়ারকে করমুক্ত করার কথা ছিল ২০১৮ সাল থেকে।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: অঙ্গরাজ্যগুলোতে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানরা এই পরিবর্তনে খুশিই হবেন।

ওমাবা কেয়ারে বিভিন্ন করের মাধ্যমে অর্থের যোগান নিশ্চিত করা হতো। তবে রিপাবলিকানদের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিমা, সাধারণ ওষুধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন নীতিতে ব্যয়বহুল মালিকদের স্বাস্থ্যসেবায় ২০২৬ সাল পর্যন্ত কর আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই কর ২০২৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকার কথা রয়েছে।

৫। স্বাস্থ্যসেবার ধরনে পরিবর্তন
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে বলা হয়েছে, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির চেয়েও দ্রুতগতিতে বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিকলাঙ্গদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার বরাদ্দ বাড়বে।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে বলা হয়েছে, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির সাপেক্ষে বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিকলাঙ্গদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার বরাদ্দ বাড়বে।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: এই সিদ্ধান্তে গভর্নররা নিশ্চিতভাবেই খুশি হবেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির চেয়েও বিকলাঙ্গ রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তাই নতুন স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী অঙ্গরাজ্যগুলো প্রত্যেক রেজিস্টার্ড গ্রাহকের হিসেবে আগের চেয়ে বেশি বরাদ্দ পাবেন।

৬। নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান প্রভাব
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকানদের কিছুটা প্রভাব রয়েছে। তবে বেড়েছে কাউন্টি সরকারগুলোর বরাদ্দ।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের কোনও প্রভাব ছিল না।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকানরা এবং কাউন্টি সরকারগুলো স্বভাবতই এতে খুশি হয়েছে।

স্বাস্থ্যখাতে অন্য যে কোনও অঙ্গরাজ্যের চেয়ে জনপ্রতি বেশি খরচ করে নিউ ইয়র্ক। বিভিন্ন কাউন্টি সরকার চায় তারা যেন অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে সঠিক পরিমাণ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে পারে। তাই বরাদ্দ বাড়ায় কাউন্টি সরকারগুলো ট্রাম্পের নতুন স্বাস্থ্যনীতিতে সমর্থন দিয়েছে।

৭। স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাব
ট্রাম্পের স্বাস্থ্যনীতি: নতুন স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী, কারও বার্ষিক কর প্রদানের পরিমাণ প্রিমিয়ামের থেকে বেশি হলে সেই অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাব থেকে কাটা যাবে।

ওবামার স্বাস্থ্যনীতি: পূর্বের স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী, কারও বিমার প্রিমিয়াম বার্ষিক কর প্রদানের পরিমাণ থেকে কম হলে, কর হিসেবে দেওয়া সেই অতিরিক্তি পরিমাণ অর্থ স্বাস্থ্য সঞ্চয় হিসাবে অর্থ জমা হয়।

পরিবর্তনকে যারা স্বাগত জানিয়েছে: এতে নিশ্চিতভাবেই গর্ভপাত-বিরোধীরা আনন্দিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন নীতিতে ফেডারেল সরকারের হাতে গর্ভপাতে ব্যবহার করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকবে না বলেই ধারণা করছে বিশ্লেষকরা।
/বিএ/

 
সম্পর্কিত
কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
আদালতে হাজির হয়ে ট্রাম্প বললেন, ‘এটি কেলেঙ্কারির বিচার’
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ভ্রমণে কানাডার সতর্কতা
সর্বশেষ খবর
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন