X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

নওয়াজ শরিফ কি আজীবনের জন্য অযোগ্য?

বিদেশ ডেস্ক
২৯ জুলাই ২০১৭, ১৫:২৬আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১৫:২৮

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে নওয়াজ শরিফকে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রিত্বের অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। আদালতের এ রায়ের পরে পদত্যাগ করেছেন অযোগ্য ঘোষিত নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানের সংবিধানের ৬২ (১)(এফ) ধারা অনুসারে বিচারপতিদের এ রায় ঘোষণার পর বির্তক শুরু হয়েছে, নওয়াজ শরিফ কি আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন নাকি কিছুদিন পরে আবার সংসদ সদস্য হিসেবে ফিরে আসতে পারবেন। এ নিয়ে পাকিস্তানের আইন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক বিচারপতিদের ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যাচ্ছে।

নওয়াজ শরিফ কি আজীবনের জন্য অযোগ্য?

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন-এর পক্ষ থেকে নওয়াজের অযোগ্যতা আজীবনের জন্য কিনা তা জানতে চাওয়া হয় আইন বিশেষজ্ঞদের কাছে। এ নিয়ে তাদের দ্বিধা উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন কিছু কিছু বিষয় নির্দিষ্ট হওয়া দরকার। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচসদস্যের বিচারকের বেঞ্চ হয়ত বিষয়টি খেয়াল করেননি।

সুপ্রিম বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট তারিক মেহমুদ জানান, সুপ্রিম কোর্টের বড় ধরনের বেঞ্চে অনেক মামলা থাকে। সামিনা খাওয়ার হায়াত ও মোহাম্মদ হানিফের মতো মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিতর্কের মূল কেন্দ্র হচ্ছে সংবিধানের ৬২(১)(এফ) ধারায় আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে নাকি হয়নি।

এ ধরনের একটি মামলার শুনানি গ্রহণকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি আনোয়ার জাহির জামালি বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সংবিধানের ৬২ ও ৬৩ ধারায় কাউকে আজীবনের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করা যায় কিভাবে। তিনি জানান, কিছুদিন অযোগ্য থাকার পর সংবিধানের এই দুই ধারায় মানুষ নিজেকে সংশোধন করে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

সিনিয়র আইনজীবী কামরান শেখ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। ২০১২ সালের ১৯ জুন সংবিধানের ৬৩ ধারায় গিলানিকে সুনির্দিষ্টভাবে ৫ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। এই আইনজীবীরা জানান, দুর্ভাগ্যক্রমে ৬২(১)(এফ) ধারাটিতে অযোগ্যতার জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমার কথা উল্লেখ করা নেই। তিনিও তারিক মেহমুদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান, কিছু মামলা রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে যেগুলোতে এই ধারায় অযোগ্য ঘোষণা শুধু আগামী নির্বাচনের জন্য না আজীবনের জন্য অযোগ্য তা নির্ধারিত হবে।

কামরান শেখ আরও জানান, নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণার কারণ ব্যাখ্যা করে উভয়সংকটে পড়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কারণ সংসদ সদস্যদের অযোগ্যতার মাপকাঠি এতো কমিয়ে আনা হয়েছে যে ভবিষ্যতে আরও অনেকে এই তালিকায় আসতে পারেন।

যদিও এই আইনজীবী মনে করেন, পানামা পেপারসের রায়ে ক্ষমতার ভারসাম্য সুপ্রিম কোর্টের দিকে ঝুলে পড়েছে এবং সংসদ সদস্যের যোগ্যতা হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি জানান, এই রায়ে সংসদ সদস্যরা শংকিত। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সংসদ সদস্যরা সংবিধান সংশোধনের দিকে আগাতে পারেন। যে সংশোধনে ৬২ ধারার ক্ষমতা খর্ব করা হতে পারে।

অন্যদিকে পাকিস্তান বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আহসান ভুন জানান, নওয়াজের অযোগ্যতা আজীবনের জন্য। নিজের মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি জানান, ২০১৩ সালে আবদুল গফুর লেহরির মামলায় প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মুহাম্মদ চৌধুরী ৬৩ ধারায় অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। ওই ধারায় অযোগ্যতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই নির্দিষ্ট সময় পর ওই ব্যক্তি পুনরায় যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু ৬২ ধারায় অযোগ্যতা আজীবনের জন্য।

আহসান আরও জানান, ৬২ ধারায় সংসদ নির্বাচনের অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষিত ব্যক্তির জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা বলা হয়নি।

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল তারিক খোখারও জানান, নওয়াজ আজীবনের অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র আইনজীবী জানান, ১৯৭৩ সালে যখন ৬২ ধারা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তখন এতে সময়সীমার কথা উল্লেখ ছিল। পরে জেনারেল জিয়াউল হক এই ধারায় অস্পষ্ট যোগ্যতার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন। যা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই ধারার সীমাবদ্ধতা বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসার চেয়ে কেউ ভালো করে অনুধাবন করতে পারেননি। এক মামলার রায়ে বিচারপতি সাইদ বলেছিলেন, এই ধারায় কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত না।

সিনিয়র আইনজীবী আরও জানান, ধারাটি প্রায় অব্যবহৃত ছিল। দীর্ঘদিন পর সাবেক প্রধান বিচারপতি ইফতিখার চৌধুরী সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রথম এটি ব্যবহার করেন। তবে বিচারপতি ইফতিখার সরাসরি কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করেননি। ব্যতিক্রম ছিল দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে। কিন্তু পরে যখন এই ধারায় আরও অনেককে অযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছিল তখন পর্যালোচনায় উঠে আসে যে, এই অযোগ্যতা ছিল আজীবনের জন্য।

এই আইনজীবী আরও জানান, সংবিধানের ৬২(১)(এফ) ধারায় অযোগ্য ঘোষণা আজীবনের জন্য কিনা তা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে একটি পিটিশন রায়ের অপেক্ষায় আছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৮ জুলাই) পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এর নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন।   এর আগে বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসার নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন। সর্বোচ্চ আদালত বলছে, পার্লামেন্ট এবং আদালতের প্রতি সৎ ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী, তিনি দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। আমিরাতভিত্তিক অফশোর কোম্পানি এফজেডই-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা গোপন করার কারণে তাকে সংবিধানের ৭২(১)(এফ) ধারায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার খানিক বাদেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। জারিকৃত নোটিশে বলা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের রায় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে তিনি পদত্যাগ করেছেন। সূত্র: ডন।

/এএ/

সম্পর্কিত
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
সর্বশেষ খবর
‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে’
‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে’
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
পুরনো লাইনআপে ফিরছে ‘ব্ল্যাক’!
মধুমতি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দুদকের
মধুমতি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দুদকের
আইসিটি খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
আইসিটি খাতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি অপরিহার্য: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ