X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারই কি নওয়াজের গন্তব্য?

বাধন অধিকারী ও ফাহমিদা উর্ণি
৩০ জুলাই ২০১৭, ১৯:৫১আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৭, ১৯:৩৭
image

পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৯ এবং ৬২ নম্বর অনুচ্ছেদের বলে নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে সততার শপথ ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিচার শুরু হলেও দুর্নীতিসংক্রান্ত ৭৮ অনুচ্ছেদ তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। দুর্নীতির মামলায় বিচার শেষে দোষী প্রমাণিত হলে তবেই কেবল সর্বোচ্চ ৩ বছরের সাজা হতো নওয়াজের। তবে ৯৯ এবং ৬২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথ ভঙ্গের দায়ে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি, যার কারণে তিনি আজীবনের জন্য অযোগ্য হয়েছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সাবেক সেনাশাসক জিয়াউল হকের সময়কার এক বিতর্কিত অনুচ্ছেদের বলে অযোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার পর কাউকে কাউকে কারাদণ্ডও ভোগ করতে হয়েছে। নওয়াজের ক্ষেত্রেও একই সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে দেশটির সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ খুরশিদ খান নওয়াজের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন। অবিলম্বে নওয়াজকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।   নওয়াজ শরিফ

গত শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করে যে রায় দিয়েছে তা কোনও গতানুগতিক রায় নয়। নওয়াজ শরীফ কতদিনের জন্য অযোগ্য থাকবেন রায়ে তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। এ নিয়ে পাকিস্তানের আইনজ্ঞরা বিভক্ত মতামত দিয়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন এ রায় যাবজ্জীবনের জন্য। কেউ কেউ আবার বলছেন, যাবজ্জীবন সাজার বিধান যথার্থ নয়। ১৯৭৬ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে, কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অথবা অসত্য ঘোষণার মামলা পাকিস্তানের সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদের ‘দুর্নীতি চর্চা’র আওতায় পড়ে। একই আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়েছে, এ ধরনের দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার রুপি অর্থ জরিমানা অথবা দুই ধরনের সাজাই হতে পারে। তবে নওয়াজ শরীফের মামলার রায় দেওয়া হয়েছে সংবিধানের ৯৯ ও ৬২’র-১ উপ ধারা অনুসারে।

৬২(১)ধারায় বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদেরকে প্রাজ্ঞ, ন্যায়নিষ্ঠ, চরিত্রবান এবং সৎ হতে হবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে অসৎ বলে রায় দিয়েছে। নওয়াজের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, “এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় নওয়াজের মনোনয়নপত্রে আরব আমিরাতের ক্যাপিটেল এফজেডই নামক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির তথ্য গোপন করেছেন তিনি। রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অ্যাক্ট, ১৯৭৬ (আরওপিএ) এর ১২(২)(এফ) ধারা মানা হয়নি এবং তিনি মিথ্যে শপথ নিয়েছেন। আরওপিএ-এর ৯৯(এফ) ধারা এবং পাকিস্তানের ১৯৭৩ এর সংবিধানের ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নওয়াজ শরিফ সৎ নন। আর এর জন্য তিনি মজলিশ ই শুরা (পার্লামেন্টের) সদস্য হওয়ার অযোগ্য।”

নওয়াজের অযোগ্যতা প্রমাণে যে বিধি ব্যবহৃত হয়েছে, তা জেনারেল জিয়াউল হকের ক্ষমতাকালে ইসলামি চৈতন্য থেকে তৈরি করা। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতেই জেনারেল জিয়া সংবিধানে ওই বিধান যুক্ত করেছিলেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ব্যারিস্টার মনসুর শাহ এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপনি যদি খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন, তবুও আপনার সাজা ভোগের শেষে আবারও নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার অধিকার রয়েছে। তবে কোনও ইসলামিক শরিয়া ভঙ্গ করলে মৃত্যুঅব্দি আপনার সাজা বহাল থাকবে।’

অসত্য তথ্য দেওয়ার পূর্ববর্তী এমন অনেক ঘটনার বেলায় পার্লামেন্ট সদস্যরা বহিস্কৃত হয়েছেন এবং এ নিয়ে বিচারিক আদালতে মামলা হয়েছে। ২০০৮-২০১৩ মেয়াদে ভূয়া শিক্ষাসনদ উপস্থাপনের কারণে তাই হয়েছিল। এদের কারও কারও কারাদণ্ডও হয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নওয়াজের ক্ষেত্রেই একই ধরনের পদক্ষেপের আশঙ্কা করা হয়েছে। পাকিস্তান অবজারভারের খবরে বলা হয়েছে, নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণাতেই সন্তুষ্ট নয় পাকিস্তানের জনগণের একাংশ। তাকে কারাদণ্ড দেওয়ার দাবিও উঠেছে। জনগণের একাংশের অভিযোগ, মনোনয়নপত্রে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে মিথ্যে তথ্য দেওয়ায় জাতীয় পরিষদের সদস্য ইজাজ চৌধুরীকে অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নওয়াজ শরিফের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

এরইমধ্যে নওয়াজের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ খুরশিদ খান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস টিবিউন নওয়াজের বিরুদ্ধে খুরশিদ খানের এফআইআর করার সিদ্ধান্ত জানায়। শনিবার (২৯ জুলাই) পেশাওয়ার প্রেস ক্লাবের এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে মোহাম্মদ খুরশিদ জানান, ‘পানামা পেপারসে যে পরিমাণ সম্পদের কথা প্রকাশ হয়েছে তা নিয়ে পার্লামেন্টে গোপন করার কারণে আমরা ইসলামাবাদের সেক্রেটারিয়েট পুলিশ স্টেশনে নওয়াজের বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’ মামলা শুরুর দিন হিসেবে সোমবারের দিনটিকে বেছে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

২০ এপ্রিল পানামা পেপারস মামলার সময় বিচারকরা ৬২ ধারার প্রসঙ্গ তুলেছিল। এটি এখনও সংবিধানে রয়েছে, বিচারকরা জানিয়েছিল, তারা এটি মানতে বাধ্য।  গণপরিষদের সদস্যপদ থেকে শরিফকে প্রত্যাহারের আদেশ কতোদিন বলবৎ থাকবে,  কিংবা শরিফ এসব নিয়ে কী করতে যাচ্ছেন; তা নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি তিনি।

/বিএ/

 

সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা