X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

'যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা'য় নির্বিকার দক্ষিণ কোরীয়রা

ফাহমিদা উর্ণি
১০ আগস্ট ২০১৭, ১৮:২৯আপডেট : ১১ আগস্ট ২০১৭, ১২:৫১
image

কোরীয় সীমান্ত থেকে ৩৫ মাইল উত্তরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল। শহরটিতে ১ কোটি মানুষের বাস। ভূ-রাজনৈতিক কারণেই উত্তর কোরিয়ার যেকোনও সামরিক অভিযানের প্রথম ও অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হবে দক্ষিণ। বিশ্লেষকরাও আশঙ্কা করছেন, মার্কিন বাহিনীর হামলার প্রেক্ষিতে উ. কোরিয়া মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম হাফিংটন পোস্ট খবর দিয়েছে, এতোসব আশঙ্কা ভীত করতে পারেনি দক্ষিণের জনগণকে। বার বার হামলার হুমকি-ধামকি শুনতে শুনতে তাদের কাছে এটি খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। অনেকটাই নির্বিকার তারা। হোয়াইট হাউস সূত্রও সাংবাদিকদেরকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত মন্তব্যগুলোকে অতো গুরুত্বসহকারে না দেখার ইঙ্গিত দিয়েছে। 

ট্রাম্প ও কিম জং উন


মার্কিন ঘাঁটিতে উত্তর কোরিয়ার হামলার হুমকির জবাবে দেশটিকে ‘ধূলায় মিশিয়ে দেওয়া’র হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর উত্তর কোরিয়া ঘোষণা দিয়েছে তারা গুয়ামে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে মিসাইল হামলার পরিকল্পনা করছে। ওই ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সেনা ও প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার মানুষের বসবাস। উত্তর কোরিয়ার দাবি, তারা আগস্টের মাঝামাঝি সময়েই হামলার সব প্রস্তুতি শেষ করে ফেলবে এবং নেতা কিম জং উনের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকবে।

বুধবার হাফিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক এ উত্তেজনা নিয়ে দক্ষিণ কোরীয়দের মধ্যে তাৎক্ষণিক কোনও উদ্বেগের লক্ষণ নেই বললেই চলে। বুধবার রাতের উষ্ণ আবহাওয়ায় অনেকে পরিবার নিয়ে ভ্রমণে গেছেন, পিকনিক করেছেন। সিউলের পার্শ্ববর্তী শহর হংডায়েতে হনগিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের একটি পার্কে তরুণদের জমায়েত দেখা গেছে। তাদেরকে গল্পে মত্ত থাকতে দেখা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দারা মনে করেন, তাদের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষই বেশি ভয় পাচ্ছে। ক্রিস্টাল নামে হংডায়েতে বসবাসরত এক দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক বলেন, ‘এখানকার মানুষ উদ্বিগ্ন, তবে এখবরটি নিয়ে আমাদের চেয়ে মার্কিনিরা অনেক বেশি আতঙ্কিত। দক্ষিণ কোরিয়ার লোকজন জানে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এমন কিছু করবেন না যা তার ক্ষমতাকে ঝুঁকিতে ফেলে।’

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে হুমকিগুলো দিয়েছেন সেগুলোকে অপেশাদারী আচরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ক্রিস্টাল। ট্রাম্প সম্পর্কে ক্রিস্টাল বলেন, ‘তিনি আবেগপ্রবণ এবং তার মন্তব্যগুলো ভয়াবহ।’  

সিউলের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা
হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষুদ্র সংস্করণের মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক কর্মসূচির বড় ধরনের ধাপ অতিক্রম করতে পারে। তবে পিয়ং ইয়ং সফলভাবে ক্ষুদ্রাকারের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে নাকি ক্যালিফোর্নিয়ায় আঘাত হানার সক্ষমতাসম্পন্ন দীর্ঘ পাল্লার মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করানোর জন্য মরিয়া হয়ে আছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। অবশ্য, এখন পর্যন্ত নতুন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, উত্তর কোরিয়াকে চাপ দিতে চীনের ওপর চাপ জোরালো করা এবং হামলা চালানোর হুমকির মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের তৎপরতা সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র স্বতঃপ্রণোদিত সামরিক অভিযানসহ আগ্রাসী হামলায় যাবে। উত্তর কোরিয়া তখন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে। কয়েক হাজার স্বল্প ও মাঝারি মাত্রার গোলাবারুদ ব্যবহার করে এসব হামলা হতে পারে।

তবে এসব নিয়ে চিন্তিত নন দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ। ক্রমাগত হামলার হুমকি পেতে পেতে তারা আর এসব দিকে কর্ণপাত করেন না বললেই চলে। উল্লেখ্য, কেবল চলতি বছরই উত্তর কোরিয়া ১৮টি মিসাইল এবং ১২টি অন্য অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে দুই বছর ধরে বসবাস করছেন অ্যালেক্স নামের এক মার্কিনি। হাফিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি নিয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তিত তার পরিবার। সিউলের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধামকির পর ‘এখন আর কেউ ভয় পায় না।’  



ট্রাম্প, কিম জং উন
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের দফতরের কর্মকর্তা চেওং ওয়া দায়ে বুধবার বলেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকিকে সত্যিকারের সংঘাতের উসকানি হিসেবে দেখার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি কৌশলী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।        

দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপে সংকট আসন্ন বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তার সঙ্গে একমত নন চেওং ওয়া। তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে বার বার উত্তেজনা ছড়ানোর কারণে কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি খুব গুরুতর হয়ে উঠলেও অনেকে এগুলোকে কৌশলগত উত্তেজনা বলেই বিশ্বাস করছেন। যত দ্রুত সম্ভব আমরা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও মিসাইল ইস্যুগুলোর সমাধানের জন্য কাজ করছি। আমাদের বিশ্বাস, এক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।’   

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও দাবি করেছেন গত কয়েকদিনের উত্তেজনা নিয়ে তিনি ভাবছেন না। টিলারসন বলেছেন তিনি বিশ্বাস করেন ‘আমেরিকানদের রাতে ভালোভাবে ঘুমানো উচিত’।

হোয়াইট হাউস সূত্রও সাংবাদিকদেরকে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে খুব একটা মাথা না ঘামাতে বলেছে। ট্রাম্পের এসব মন্তব্যকে অপ্রস্তুত ও অসতর্কমূলক বক্তব্য হিসেবে দেখতে বলা হয়েছে।

/বিএ/ 

সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেফতার
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না