সামরিকতা নয়, কাশ্মির সংকটের নিরসন করতে হবে ভালো্বাসা দিয়ে; হিন্দুত্ববাদের অভিযোগে তীব্র সমালোচিত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এই মন্তব্য করেছেন। ঐতিহাসিক লাল দুর্গে দেওয়া ভাষণে মোদি বলেন, এই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে পরম মমতায় কাশ্মীরের জনগণকে আলিঙ্গন করা।
মানবাধিকার সংস্থা, ইতিহাসবিদ আর রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মির ক্রমেই ভারত-পাকিস্তানের সমরাস্ত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এই মুর্হর্তে কাশ্মির উপত্যকা থেকে ‘স্বাধীনতাকামীদের’ নির্মূল করতে সেখানে ‘অপারেশন অল আউট’ পরিচালনা করছে ভারতীয় বাহিনী। চলতি বছর এ পর্যন্ত তাদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে অন্তত ১৩০ জন। এই বাস্তবতার মধ্যেই স্বাধীনতা দিবসে মোদি বলেন, ‘কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী উপত্যকায় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে গালি বা গুলি নয়, বুকে টেনে নিয়েই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
‘আফজাল গুরুর ফাঁসি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক’ শীর্ষক নিবন্ধে বিশ্বখ্যাত বুদ্ধিজীবী অরুন্ধতী রায় কাশ্মির সম্পর্কে সেই ২০১৩ সালে বলেছিলেন, ‘আবু গারিবের আদলে এখানকার আর্মি ক্যাম্প ও টর্চার কেন্দ্রগুলোই কাশ্মিরিদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বার্তাবাহক। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে সংগ্রামরত কাশ্মিরিদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার মুক্তিকামীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ হাজারকে গুম করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে আরও অন্তত এক লাখ লোক।’
আজ সেই রচনার ৪ বছর পরে এসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘প্রত্যেক ভারতীয়কে কাশ্মিরবাসীর সঙ্গে উষ্ণ করমর্দন করা, স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করা’র তাগিদ দিলেন। তিনি বলেছেন, ‘তাহলেই কাশ্মিরে পূর্বের মতো আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’
মানবাধিকারকর্মীদের দাবি অনুযায়ী, ’৪৭-এর পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অন্তত পাঁচ লাখ কাশ্মিরি নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও দশ লাখের মতো। খোদ ভারতের সরকারি হিসাবে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক রিপোর্টে জানাচ্ছে, ১৯৯০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কেবল ১১ বছরেই ৪৩,৪৬০ জন কাশ্মিরি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক কাশ্মিরি। আর মানবাধিকার কর্মীদের দাবি অনুযায়ী ওই ১১ বছরে নিহতের সংখ্যা ১ লক্ষাধিক এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও ১ লাখ।
স্বাধীনতা দিবসের আজকের ভাষণে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারত এক এবং একমাত্র। আর এটাই আমাদের শক্তি। এর একদিন আগে জঙ্গিদের মোকাবেলার কথা বলে জম্মু-কাশ্মিরে এবার সামরিক রোবট মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানায় মোদির ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস জানায়, সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কাশ্মিরের জন্য চাওয়া ৫৪৪টি রোবটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রোবট সেনা জওয়ানদের মতো নিরাপত্তা নজরদারি এবং অভিযানের কাজ করবে। সশস্ত্র জঙ্গি হামলা, কিংবা পাথর নিক্ষেপে সেনাদের হতাহত হতে হয় বলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রোবটের কথা চিন্তা করা হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, হিন্দুস্থান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
/বিএ/