উগ্র শ্বেতাঙ্গ ও বর্ণবাদ বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভে এখন উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার বোস্টন শহরে উগ্র ডানপন্থীরা 'ফ্রি স্পিচ' নামের একটি সমাবেশের আয়োজন করে। পাল্টা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে বর্ণবাদ বিরোধী হাজার হাজার মানুষ। এক পর্যায়ে বর্ণাবাদবিরোধীদের চাপের মুখে নির্ধারিত সময়ের আগেই সমাবেশ শেষ করতে বাধ্য হয় উগ্র ডানপন্থীরা। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বর্ণবাদবিরোধী ওই বিক্ষোভে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ অংশ নেন। আটক করা হয় অন্তত ২৭ জনকে।
বোস্টন ছাড়াও এদিন বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনাসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য। সে সময় বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে। ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবাইকে বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে, অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (১২ আগস্ট) ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের একটি মিছিল বর্ণবাদবিরোধীদের সমাবেশস্থলে এলে সংঘর্ষের সূচনা হয়। সে সময় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলে পড়ে একটি চলন্ত গাড়ি। ঘটনাস্থলে ১ জন নিহত এবং ১৯ জন আহত হন। পরে ঘটনা পর্যবেক্ষণে ভার্জিনিয়া পুলিশের মোতায়েনকৃত একটি হেলিকপ্টার শহরটির কাছে বিধ্বস্ত হলে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। ঘটনার পর শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের বর্ণবাদী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘নমনীয় অবস্থান’ নিয়েছেন বলে তার দলের ভেতরে-বাইরে অভিযোগ ওঠে। সমালোচকরা বলেন, ভার্জিনিয়ার সাম্প্রতিক উত্তেজনায় সরাসরি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়বাদীদের দায়ী করতে ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প।
বোস্টন মেয়র মার্টি ওয়ালশ বলেন, 'বোস্টন শান্তি ও ভালোবাসার শহর। এখানে বর্ণবাদের কোনো জায়গা নেই। আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই। আমরা কাউকে ঘৃণা করতে চাই। আজকে যারা রাস্তায় নেমেছেন তাদের প্রতি আমার আহ্বান,আপনারা শহরের শান্তি বজায় রাখবেন।'
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, পোর্টল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ডালাসসহ বিভিন্ন শহরে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বোস্টনের বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা না করলেও বেশ কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মতো মহান দেশ বিভক্ত হয়ে আছে। এসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করতে একটি অনলাইন পিটিশন করেছে আধিপত্যবাদী শ্বেতাঙ্গরা। ওই পিটিশনে এরইমধ্যে ১৩ হাজার মানুষের সমর্থন পড়েছে। এর আগে, গেল জানুয়ারি মাসে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার মুভমেন্ট নামের একটি বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যায়িত করতে এ ধরনের অনলাইন পিটিশন দায়ের করা হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি
/বিএ/