X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে মৌখিক তালাকের বৈধতা প্রশ্নে 'ঐতিহাসিক রায়' আজ

বিদেশ ডেস্ক
২২ আগস্ট ২০১৭, ১০:৩৬আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৭, ১২:২৯
image

তিন তালাক ধর্মের ‘অবিচ্ছেদ্য-মৌলিক’  অঙ্গ কিনা, রায়ে আজ (মঙ্গলবার) সেই সিদ্ধান্ত জানাবে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের ইতিহাসে আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এনডিটিভির খবরে দিনটিকে ভারতীয় মুসলিম নারীদের জন্য ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, বেলা সাড়ে দশটায় তিন তালাকের বৈধতা প্রশ্নে রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। রায় তিন তালাকের বিপক্ষে গেলে মুসলিমদের বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ  সংক্রান্ত নতুন আইন প্রনয়ণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকারের পক্ষ থেকে।
ভারতে মৌখিক তালাকের বৈধতা প্রশ্নে 'ঐতিহাসিক রায়' আজ

তিন তালাকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ভারতীয় মুসলিম নারীদের কয়েকটি পিটিশনের ওপর সাম্প্রতিক শুনানি শেষে আজ এই রায় দেবে ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। দেশের কয়েক কোটি মুসলিম নারীর ভাগ্য নির্ধারণ করতে চলা এই রায় দেবেন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে এই বেঞ্চ। রয়েছেন বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, আর এফ নরিম্যান, আবদুল নাজির ও কুরিয়ান জোসেফ। ইসলাম ধর্মে তিন তালাক প্রয়োগের অধিকার স্বতঃসিদ্ধ কিনা, সেই সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা।

ভারতীয় মুসলিম সমাজ ১৯৩৭ সালে কার্যকর হওয়া ‘মুসলিম পার্সোনাল আইন' বা মুসলিম পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত। তবে মুসলিম ভারতীয় নারীরা তাদের পিটিশনে বলেছেন, তিন তালাক মুসলিম মেয়েদের সমানাধিকারের পরিপন্থী। একে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী একটা ব্যবস্থা বলেছেন তারা। ভারতীয় সংবিধানের ২৫ (১) অনুচ্ছেদে নিজস্ব ধর্মাচরণ, ধর্মপ্রচারের যে অধিকার সুরক্ষিত আছে, তালাকের বিধান তার মধ্যে তা পড়ে না বলেও উল্লেখ করা হয় পিটিশনে। তিন তালাকের বিরুদ্ধে যারা শীর্ষ আদালতে পিটিশন ফাইল করেন, তাঁরা হলেন সায়ারা বানু, আফরিন রহমান, ইসরাত জাহান, গুলশন পারভিন ও ফারহা ফয়েজ।

গত মে মাসে মুসলিম নারীদের দায়ের করা পিটিশনগুলোর ওপর শুনানি করেন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন সংবিধান বেঞ্চ। গ্রীষ্মকালীন অবকাশে টানা ছয়দিনের ম্যারাথন শুনানির শেষে গত ১৮ মে এই মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিল প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। শুনানির সময় আদালত জানিয়েছিল যে, বহুগামিতার বিষয়টি এই মামলায় বিবেচনা করা নাও হতে পারে। মুসলিম ধর্মে তিন তালাক অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার কিনা, শুধুমাত্র এই বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হবে।পিটিশনের পাশাপাশি ২০১৫-র অক্টোবরে শীর্ষ আদালতেরই এক বেঞ্চের নির্দেশের ওপর আজ রায় দেওয়া হবে। 

প্রধান বিচারপতি খেহর শুনানির সে সময় বলেছিলেন,  প্রথমত দেখতে হবে, তিন তালাক ইসলামের অবিচ্ছেদ্য বিষয় কিনা। এটি ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলে দেখতে হবে, সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি কিনা। দ্বিতীয়ত, বিবেচনায় নিতে হবে এই প্রথা ধর্মীয় সংস্কারমূলক কিনা। তৃতীয়ত, কোনও প্রয়োগযোগ্য মৌলিক অধিকার এই প্রথার ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

তিন তালাক প্রথা সম্পর্কে সাতটি আবেদনের মধ্যে পাঁচটি দায়ের করেছিল মুসলিম নারীরা। আর্জিতে তিন তালাক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তারা। শুনানির সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মুসলিম সমাজে প্রচলিত তিন তালাক প্রথা ‘জঘন্য’ বলেও মন্তব্য করেন। বিবাহবিচ্ছেদের এ ধরনের প্রথা আদৌ ‘কাঙ্খিত নয়’ বলেও মন্তব্য করেছিল আদালত। যদিও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মহলে ওই প্রথাকে বৈধ বলে দাবি করা হয়। রাম জেঠমালানি সহ বিশিষ্ট আইনজীবীরা তাঁদের সওয়ালে সমতার অধিকার সহ সাংবিধানের বিভিন্ন  ধারার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রথা বন্ধের পক্ষে সওয়াল করেন। আদালতে যুক্তি দেওয়া হয় যে, তিন তালাক প্রথা লিঙ্গ বৈষম্যের সামিল। পবিত্র কোরানের শিক্ষার সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

কেন্দ্রর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বোচ্চ আদালত তিন তালাক অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে তারা মুসলিমদের বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ  সংক্রান্ত নতুন আইন প্রনয়ণ করবে। কেন্দ্র তিন তালাক প্রথার বিরোধিতা করে একে ‘একতরফা’ ও ‘বিচারবিভাগবহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করে। কেন্দ্র আরও বলে, সমস্ত পার্সোনাল ল-এরই সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকা উচিত। কেন্দ্রর পক্ষ থেকে আরও যুক্তি দেওয়া হয় যে, তিন তালাক ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়। এটি সংখ্যাগরু বনাম সংখ্যালঘু সংক্রান্ত কোনও ইস্যুও নয়। এটা মুসলিম পুরুষ ও বঞ্চিত মহিলাদের মধ্যে সংঘাত।

এদিকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, তিন তালাক আসলে একটি বিশ্বাসের ব্যাপার৷ সেখানে কোনও সাংবিধানিক নৈতিকতার প্রশ্ন নেই৷ অযোধ্যায় রামের জন্মও যেমন বিশ্বাসের ব্যাপার, ঠিক সেরকমই তিন তালাকও একটি সম্প্রদায়ের বিশ্বাস বলে মনে করা হয়৷ তিনি বলেন, ৬৩৭ খ্রীস্টাব্দ থেকে এই প্রথা প্রচলিত রয়েছে। একে কোনওভাবেই অ-ইসলামি বলা যায় না।

এই বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয় বলেই দাবি করেছিল মুসলিম বোর্ড৷ মুসলিম সম্প্রদায় নিজেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছিল৷

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সর্বশেষ খবর
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘জেনোসাইড কর্নার’ বন্ধ থাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসন্তোষ
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
ইতিহাস বিকৃতিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবোল-তাবোল বলছে: হাছান মাহমুদ
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
শাহীনকে সরিয়ে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে পিসিবি!
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়