X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে রায় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

বিদেশ ডেস্ক
২৪ আগস্ট ২০১৭, ২১:৫৬আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৪:৪১

ভারতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রশ্ন উঠছে আধার কার্ডকে ঘিরে ভারতে সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবারের রায়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রশ্নে একই আদালতের আগের দুইটি রায় বাতিল হয়ে যায়। এদিনের বেঞ্চে অন্য বিচারপতিরা ছিলেন জে চেলমেশ্বর, এস এ বোবদে, আর কে আগরওয়াল, আর এফ নরিম্যান, এ এম সাপ্রে, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, এস কে কৌল ও এস আবদুল নাজির। এই ঐতিহাসিক রায়ে সাধারণ মানুষের জীবনে কেমন প্রভাব ও গুরুত্ব রয়েছে নিয়ে চলছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর নানা আলোচনা, বিশ্লেষণ।

দিল্লিভিত্তিক একজন খ্যাতনামা বিশ্লেষক গীতা পাণ্ডে। বিবিসি-কে তিনি বলেছেন, এই রায় ভারত সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ সরকার দাবি করেছিল, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে না। যখন আধার প্রকল্পের জন্য ডাটাবেজ তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল তখন সরকার বলেছিল তা হবে ঐচ্ছিক। এর মধ্য দিয়ে কল্যাণ ভাতা সবচেয়ে দরিদ্র মানুষেরা পাবেন এবং দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে কর দেওয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণ প্রাপ্তি, ৫০ হাজারের বেশি রুপি মূল্যের সম্পদ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

পাণ্ডে আরও বলেন, মামলার শুনানির সময় সরকার পক্ষের আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন যে নিজের শরীরের ওপর নাগরিকদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার নেই। এর অর্থ হলো নাগরিকদের বায়োমেট্রিক দেওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে।

গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে রায় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

উল্লেখ্য, আধার কার্ড নিতে গেলে নাগরিকদের চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি ও আঙ্গুলের ছাপ দিতে হয়, যা তথ্যভাণ্ডারে জমা থাকে। এছাড়া নাম-ঠিকানা ও আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার তৈরির প্রায় যাবতীয় তথ্য সেখানে রক্ষিত থাকে।

আধার কার্ড বাতিল চেয়ে করা আবেদনকারীদের দাবি, এর ব্যবহারে জোর জবরদস্তি গোপনীয়তা ভঙ্গের শামিল। আধারের তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধন একটি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এতে তথ্য দেওয়া প্রত্যেক ভারতীয়কেই একটি পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রস্তাব ছিল।

সর্বোচ্চ আদালতের রায় গেছে আধার কার্ড বাতিল চেয়ে করা আবেদনকারীদেরই পক্ষে গেছে।

মামলার একজন আইনজীবী উদয়াদিত্য ব্যানার্জি। তিনি জানান, এই রায়ে সরাসরি আধার স্কিমে প্রভাব পড়বে না। কারণ বিয়ষটি একটি ছোট বেঞ্চে শুনানি হবে। তবে আধার মামলায় রায়টি আমাদের সহযোগিতা করবে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায়ের ফলে জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। কারণ রায়ে শরীর ও মনের অধিকার নাগরিকদের বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

রায়ে ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা’কে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন বিচারকরা। এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে দেওয়া জীবনধারণ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষার অংশ হিসেবেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফলে শুধু ভারতীয় নাগরিকরা নন, যে কোনও ব্যক্তি এখন বিচার পাওয়ার আশায় ৩২ ও ২২৬ ধারায় সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে রায় কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

সংবিধান দ্বারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার রায় দিয়ে আদালত সরকারি অপ্রয়োজনীয় অনধিকার চর্চা ও ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় সাধারণ মানুষকে ক্ষমতা দিলেন। মামলার শুনানির সময় আদালত বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বিচারপতি ডি.ওয়াই. চন্দ্রচুড় এক পর্যবেক্ষণে বলেছেন, দুই হাজার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আমাকে তাদের কসমেটিকস ও এয়ার কন্ডিশনারের তথ্য হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাক আমি তা চাই না। এটিই আমাদের উদ্বেগের কারণ। ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি সেবাদাতা কোম্পানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক তথ্য হয়ে উঠতে পারে।

অন্যতম আবেদনকারী আর. চন্দ্রশেখরের মতে, এই রায়ের ফলে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার থেকে জনগণ সুরক্ষা পাবেন।

এনডিটিভি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় চলমান বেশ কয়েকটি মামলায় প্রভাব ফেলবে। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা।

এই রায়টি ভারতের ডিএনএভিত্তিক প্রযুক্তি বিল ২০১৭-কেও প্রভাবিত করবে। এই বিল অনুসারে সরকার একটি ডিএনএ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ফরেনসিক উদ্দেশ্যে এই ডিএনএ ব্যাংকের তথ্য ব্যবহার করা হবে। বিলটি এরই মধ্যে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়ে উদ্বেগ হাজির করেছে।

এই রায়ের ফলে সমকামীদের নিষেধাজ্ঞার ধারাটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রায়টি সমকামিতাকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা আইনেও প্রভাব ফেলবে। আর আইনজীবীরা মনে করছেন, কয়েকটি রাজ্যে গরুর মাংস খাওয়া এবং মদপান নিষিদ্ধ করার বিধানেও রায়টির প্রভাব পড়বে।

উপসংহারে বিচারপতি সঞ্জয় কিশান কাউল লিখেছেন, গোপনীয়তা একটি মৌলিক অধিকার। ফলে ব্যক্তির জীবনযাপনে রাষ্ট্র বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা দেয়। ঘরের গোপনীয়তা অবশ্যই পরিবার, বিয়ে, জন্মদান ও যৌন অভিযোজনকে সুরক্ষা দেবে। সূত্র: এনডিটিভি, দ্য হিন্দু, রয়টার্স, বিবিসি।

/এএ/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬
সর্বশেষ খবর
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
রাব্বির ব্যাটে শাইনপুকুরকে হারালো শেখ জামাল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা